ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের হাসপাতালে শয্যাসুবিধা বেশি, যদিও চাহিদার তুলনায় হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা অপ্রতুল।
ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষের হাসপাতাল শয্যাসুবিধা বেশি। বাংলাদেশের প্রতি ১০ হাজার নাগরিকের জন্য গড়ে ৮টি হাসপাতাল শয্যা আছে। ভারতে এর সংখ্যা ৬টি। এমনকি পাকিস্তানের চেয়েও এগিয়ে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের প্রতি ১০ হাজার নাগরিকের জন্য গড়ে মাত্র ৬টি হাসপাতাল শয্যা আছে। যদিও চাহিদার তুলনায় এসব দেশে হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা অপ্রতুল।
গত মঙ্গলবার প্রকাশিত জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি বা ইউএনডিপির ২০২০ সালের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে। সার্বিকভাবে এবারের মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশের মানব উন্নয়ন পরিস্থিতি মধ্যম সারির। এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ দুই ধাপ এগিয়েছে। এবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৮৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৩তম। গতবার বাংলাদেশ ১৩৫তম স্থানে ছিল। ভারত ও পাকিস্তান এবার দুই ধাপ করে পিছিয়েছে। ভারত ও পাকিস্তান যথাক্রমে ১৩১ ও ১৫৪তম স্থানে।
মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, জনসংখ্যার তুলনায় চিকিৎসকের অনুপাতে বাংলাদেশের চেয়ে ভারত এগিয়ে আছে। ভারতে প্রতি ১০ হাজার নাগরিকের জন্য গড়ে ৮ দশমিক ৬ সংখ্যায় চিকিৎসক আছেন। বাংলাদেশে এই সংখ্যা ৫ দশমিক ৮। তিন দেশের মধ্যে পাকিস্তানে এই সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ৯ দশমিক ৮।
দুর্বল অবকাঠামো ও সেবার কারণে নাগরিকেরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়। ইউএনডিপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাশিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে ১৩ শতাংশের বেশি হারিয়ে ফেলছে।
অগ্রগতি সত্ত্বেও সার্বিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি। গতবারের মতো আট দেশের মধ্যে বাংলাদেশ পঞ্চম। দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে আছে শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার অবস্থান ৭২তম। এ ছাড়া মালদ্বীপ ৯৫তম, ভুটান ১২৯তম, নেপাল ১৪২তম ও আফগানিস্তান ১৬৯তম স্থানে।
সারা বিশ্বের মানব উন্নয়ন পরিস্থিতি সবচেয়ে ভালো নরওয়েতে। গতবারের মতো এবার দেশটি শীর্ষ স্থান দখল করেছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে আয়ারল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ড। ২০১৯ সালের মানব উন্নয়ন পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, কোভিডের আগ পর্যন্ত মানব উন্নয়নে বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে ভালো করেছে। কিন্তু কোভিডের কারণে এবারের প্রতিবেদনের চেয়ে আগামী প্রতিবেদনটি সব দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ২০২০ সালের পরিস্থিতি ধরে আগামী প্রতিবেদন হবে, তাই কোভিডে কোন দেশ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হলো, তা পরিষ্কার হবে। তিনি মনে করেন, আয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য—মানব উন্নয়নের এই তিনটি সূচকই করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানুষের আয় ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হলেও শিক্ষা খাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। স্বাস্থ্য খাত আগে থেকেই দুর্বল ছিল।
বৈষম্য প্রকট
সামাজিক খাতে উন্নয়ন সত্ত্বেও বাংলাদেশে আয়বৈষম্য প্রকট। এ বছরের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের সবচেয়ে গরিব ৪০ শতাংশের আয় মোট আয়ের মাত্র ২১ শতাংশ। আর সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশের আয় মোট আয়ের প্রায় ২৭ শতাংশ। বাংলাদেশের গিনি সূচকে পয়েন্ট দশমিক ৪৭৮। কোনো দেশের এই স্কোর দশমিক ৫০ এর ঘর পেরোলেই উচ্চ বৈষম্যের দেশ হিসেবে ধরা হয়।
আয়বৈষম্য সত্ত্বেও বাংলাদেশ স্বাস্থ্য, শিক্ষা খাতে ভালো করছে। যেমন গড় আয়ুর হিসাবে ভারতের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৬ বছর। ভারতের গড় আয়ু ৬৯ দশমিক ৭ বছর। বাংলাদেশে প্রতি এক লাখ জীবিত শিশু জন্মগ্রহণকালে ১৭৩ জন মা মারা যান। বাংলাদেশের ২৫ বছর ও এর বেশি বয়সী নারী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ কমপক্ষে মাধ্যমিক পাস। আর পুরুষদের মধ্যে এই হার সাড়ে ৪৭ শতাংশ। শ্রমশক্তিতেও নারীর অংশগ্রহণ বেড়ে ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে।