স্বল্পোন্নত দেশগুলোর গ্র্যাজুয়েশনের পর বিশেষ ও অগ্রাধিকার সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে অন্য দেশগুলো সহানুভূতিশীল। এ বিষয়ে আলোচনা করার এখনই সময় বলে মনে করে তারা। বিশেষত, কোভিড-১৯ মহামারীতে এলডিসি রাষ্ট্রগুলো সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত। এমতাবস্থায় গ্র্যাজুয়েশনের পর বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা ও টেকনিক্যাল সহায়তা বন্ধ হলে তা এই দেশগুলোর অগ্রগতিতে বিশেষ অসুবিধা সৃষ্টি করবে।
গত বৃহস্পতিবার জেনেভায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার জেনারেল কাউন্সিল বৈঠকে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর গ্র্যাজুয়েশন হওয়ার পর আরও কিছু বছর এ সুবিধাগুলো অব্যাহত রাখা সংক্রান্ত প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। স্বল্পোন্নত দেশের পক্ষে চাদ প্রস্তাবটি উপস্থাপনসহ এ বিষয়ের ফোকাল পয়েন্ট বাংলাদেশের টেকনিক্যাল বিষয়াদি ব্যাখ্যা করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেনেভায় কমার্শিয়াল কাউন্সিলর দেবব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘আলোচনায় অংশগ্রহণকারী সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কেউই জেনারেল কাউন্সিলে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেনি। বরং সদস্যরা এটি নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী।’ কাউন্সিলের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই বিষয় নিয়ে আবারও পরবর্তী কাউন্সিলে আলোচনা হবে বলে তিনি জানান। জেনেভায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি এ বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। দেবব্রত বলেন, ‘আমরা অনেকের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। তবে এর মানে এই নয় যে, এই প্রস্তাব সহজে অনুমোদিত হবে। ডব্লিউটিওতে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত পাওয়া দীর্ঘ সময় ও প্রচেষ্টার বিষয়।’
ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরব, নাইজিরিয়াসহ আরও কিছু দেশ এই প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে। এছাড়া আফ্রিকান গ্রুপ এবং এসিপি (আফ্রিকান, ক্যারিবিয়ান, প্যাসিফিক) গ্রুপও সমর্থন দিয়েছে বলে তিনি জানান।
পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কী চিন্তা করছে জানতে চাইলে দেবব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘কয়েকটি টেকনিক্যাল বিষয় সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা পেতে চায় তারা। আমরা তাদের এই আগ্রহকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি এবং তাদের উত্থাপিত বিষয়গুলো আমরা পরিষ্কার করব।’ উল্লেখ্য, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর নির্বিঘ্ন ও টেকসই গ্র্যাজুয়েশনে সহায়তার আহ্বান জানিয়ে ২০০৪ এবং ২০১২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দুটি রেজ্যুলেশন গৃহীত হয়। ওই রেজ্যুলেশনের ওপর ভিত্তি করে এই প্রস্তাব আনা হয়েছে। অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশের মতো বাংলাদেশও বিশেষ বাজারে প্রবেশাধিকার সুবিধা ও কারিগরি সহায়তাসহ ডব্লিউটিওতে বিশেষ অব্যাহতির সুবিধা পেয়ে থাকে। যা সাধারণভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য নয়। এ অবস্থায় এলডিসি তালিকা হতে অবমুক্তির পর, অর্থাৎ গ্র্যাজুয়েশনের সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর, আরও ১২ বছর পর্যন্ত এই সুবিধা কীভাবে অব্যাহত রাখা যায়, সে বিষয়েই এই প্রস্তাব। যা অন্যসব স্বল্পোন্নত দেশ সমর্থন করেছে। যদি ডব্লিউটিও’র সব সদস্য এই প্রস্তাব মেনে নেয়, তবে বাংলাদেশসহ সব স্বল্পোন্নত দেশ গ্র্যাজুয়েশন হওয়ার পরবর্তী ১২ বছর পর্যন্ত এলডিসি হিসেবে প্রাপ্য সব সুবিধা পেতে থাকবে। এ সিদ্ধান্ত সম্ভব হলে তা হবে বিশ্ববাণিজ্য অঙ্গনে সব এলডিসির জন্য অসাধারণ প্রাপ্তি।