আগামী বছরের মে-জুনের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় অক্সফোর্ডের আরও ছয় কোটি ডোজ টিকা আসছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। দেশে মে-জুনের মধ্যে সব মিলিয়ে যে টিকা আসবে তাতে মোট সাড়ে চার কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া যাবে। প্রথম দফায় যে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আসার কথা তার মধ্যে দেড় কোটি ডোজ আসছে। দুটি ডোজ ভ্যাকসিন মিলে একটি টিকা হবে। বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, উনি (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) বললেন, আরও ছয় কোটি ভ্যাকসিন কোভ্যাক্সের মাধ্যমে মে-জুন মাসের মধ্যে আসবে। এক মাস আগে-পরে হতে পারে। ২০ শতাংশ মানুষকে এই টিকা দেওয়া যাবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আশা করছেন জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রম্নয়ারির প্রথম দিকে ভ্যাকসিন (অক্সফোর্ড) পেয়ে যাবেন। এজন্য গ্রাসরুট লেভেল পর্যন্ত সবাইকে ট্রেনিং দেওয়া শুরু হয়েছে। ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য যেসব জিনিস ব্যবহার করা হবে সেগুলো কীভাবে ডিসপোজাল করা হবে সেই ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করে টিকা দেওয়া যায় কি না, তা নিয়েও আলোচনা চলছে। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ইপিআইয়ের যে ব্যাপক কার্যক্রম আছে, সেটিকে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন, বিভিন্ন হাসপাতালগুলো ব্যবহার করতে চাচ্ছেন, প্রাইভেট সেক্টরকে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন। যেহেতু সময় পাওয়া যাচ্ছে তাই আপাতত অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন নিয়ে চিন্তা করছেন। যদি অন্য কেউ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অ্যাপ্রম্নভাল পায়, সরকার কাউকেই মানা করবে না। আমাদের যে কমিটি আছে তারা অ্যাপ্রম্নভাল দেবে। তিনি বলেন, মাইনাস ১৭ ডিগ্রি তাপমাত্রায় করোনাভাইরাসের টিকা সংরক্ষণ হবে। গ্রাসরুট লেভেল পর্যন্ত গিয়ে দেবেন সেই স্ট্রাকচার আমাদের নেই। একমাত্র কোল্ডস্টোরেজে রাখতে পারবেন। টেকনিক্যাল কমিটি এটা দেখবে। তারা যদি মনে করে আমাদের যে স্ট্রাকচার আছে সেটাকে মেজর কোনো চেঞ্জ না করে দেওয়া যায় এবং হ্যাজার্ড হবে না, এটা টেকনিক্যাল বিষয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এখন পর্যন্ত আমরা যা জানি মর্ডানা এবং ফাইজার দুইটারই মাইনাস ২৫ ডিগ্রি এবং আরেকটা মাইনাস ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে টিকা সংরক্ষণ করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিত করতে আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের এ বিষয়ে আরও তৎপর হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, বিশ্বের অনেক দেশেই করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। কোনো কোনো দেশ করোনা প্রতিরোধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। আমাদেরও এসব বিষয়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্বের সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের সব নাগরিকের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা উলেস্নখ করে তিনি আরও বলেন, ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ এ নীতি কঠোরভাবে পালনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের এ বিষয়ে আরও তৎপর হওয়ার নির্দেশনা দেন তিনি। রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসড়া অনুমোদন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে রাষ্ট্রপতির ভাষণ ইলাবোরেট ও সংক্ষিপ্ত দুটোই আনা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির ভাষণে ১০টি বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক চিত্র, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপ ও সাফল্য, রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে গৃহীত কর্মসূচি এবং রূপকল্প-২০৪১ প্রণয়ন, দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থান, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর প্রসার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার অগ্রগতি, বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন ও এজন্য গৃহীত কর্মসূচি এবং প্রশাসনিক নীতি, কৌশল, উন্নয়ন দর্শন এবং অগ্রযাত্রার দিকনির্দেশনা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নতুন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হবে কুড়িগ্রামে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০২০’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই এলাকার লোকজনের কৃষি ও সার্বিক অর্থনীতির উন্নয়ন করার লক্ষ্য নিয়ে সেখানে এই বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলাদেশে মোট ১৫৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে, এর মধ্যে ৪৬টি সরকারি এবং ১০৭টি বেসরকারি। আর দেশে সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চালু আছে। নতুন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়টি কুড়িগ্রামে স্থাপন করা হবে। কুড়িগ্রাম এক সময় মঙ্গাপীড়িত ছিল, সেখানে যদি এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় হয়, তাহলে গবেষণা হবে, ফার্মিং হবে; এর মধ্যে দিয়ে তাদের অবস্থার আরও উত্তরণ হবে। অন্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইনকে অনুসরণ করে নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।