করোনা মহামারীতে দেশের জিডিপি বড় ধাক্কা খায়। করোনার প্রভাবের মধ্যেই কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ইতিবাচক জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ নানা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। খসড়া পরিকল্পনায় আয়বৈষম্য কমানোর লক্ষ্যস্থির করা হয়েছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে এই পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাসহ নানা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রূপকল্প ২০৪১ অর্জনের প্রথম পরিকল্পনা হিসেবে ২০২১-২৫ বছরকে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা হিসেবে নেওয়া হয়। বিভিন্ন কারণে এই পঞ্চবার্ষিক এক বছর দেরিতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আগের পরিকল্পনায়
জলবায়ুর পরিবর্তন রোধ, আয়বৈষম্য দূরকরণ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ইত্যাদির ওপর জোর দেওয়া হয়। কিন্তু করোনা মহামারীতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫.২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮.৫ শতাংশ। এদিকে আইএমএফ বলছে, করোনার আগের মতো ৭-৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে বাংলাদেশকে আরও চার বছর অপেক্ষা করতে হবে। ২০২৫ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে।
রূপকল্প ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। এই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এর প্রথম ধাপ পূরণ হবে। ফলে করোনায় কমে যাওয়া জিডিপির প্রবৃদ্ধি এই পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেই অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার খসড়া প্রস্তুত করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেওয়া হয়েছে। খসড়ায় চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ। এ ছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৮ দশমিক ২২ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৮ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং পরিকল্পনার বাস্তবায়নের শেষে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই প্রাক্কলনের মূলে রয়েছে কর্মসংস্থান। খসড়ায় আগামী পাঁচ বছরে এক কোটিরও বেশি নতুন কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্য ধরা হয়েছে। বিনিয়োগের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে মোট জিডিপির ৩৭ দশমিক ৪০ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৪ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। শিগগিরই এই খসড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস মহামারী খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারবে না। কেননা আশা করা হচ্ছে আগামী একবছরের মধ্যেই করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তার পর অর্থনৈতিক কর্মকা- যতই বাড়বে, প্রবৃদ্ধিও ততই বাড়বে। ফলে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যে প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে, সেটি যথেষ্টই যৌক্তিক।
জিইডি সূত্র জানায়, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আগামী পাঁচ বছরে নতুন এক কোটি ১৯ লাখ কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে দেশের অভ্যন্তরে ৮৪ লাখ ২০ হাজার এবং প্রবাসে ৩৫ লাখ কর্মসংস্থান ধরা হয়েছে। তবে কর্মসংস্থানের এই লক্ষ্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার তুলনায় ১০ লাখ কম।
জিইডির প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, আগামী ৫ বছরের মধ্যে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ২২ লাখ ৮০ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি হবে- দেশি ১৫ লাখ ৮০ হাজার ও প্রবাসে সাত লাখ। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ১৬ লাখ ২০ হাজার ও প্রবাসে সাত লাখ মিলিয়ে কর্মসংস্থান তৈরি হবে ২৩ লাখ ২০ হাজার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা ২৩ লাখ ৮০ হাজার দেশি ১৬ লাখ ৮০ হাজার ও প্রবাসে সাত লাখ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই লক্ষ্য কিছুটা কম- ২১ লাখ ২০ হাজার দেশীয়, ১৪ লাখ ২০ হাজার ও প্রবাসে সাত লাখ। আর পরিকল্পনার শেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশীয় ১৮ লাখ ১০ হাজার ও প্রবাসে সাত লাখ মিলিয়ে মোট কর্মসংস্থান ধরা হয়েছে ২৫ লাখ ১০ হাজার।
এদিকে, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিনিয়োগের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে মোট জিডিপির ৩৭ দশমিক ৪০ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে অর্থবছরভিত্তিক লক্ষ্য হচ্ছে- চলতি ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে জিডিপির ২০ দশমিক ৮ শতাংশ, ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ, ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ, ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ, ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ ও ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ আসবে বিনিয়োগ থেকে।
পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়ায় বলা হয়, চলতি অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, ৫ দশমিক ২ শতাংশ, ৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং সবশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নেমে আসবে ৪ দশমিক ৮ শতাংশে।