ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ১ হাজার ৯১ জন ভূমি ও গৃহহীন পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার সরকারি ঘর। ১ হাজার ৯১টি ঘরের মধ্যে সদর উপজেলায় ৩২টি, বিজয়নগরে ১০০টি, সরাইলে ১০২টি, নবীনগরে ৪৮৫টি, নাসিরনগরে ৯১টি, বাঞ্ছারামপুরে ৬৪টি, আশুগঞ্জে ৬৮টি, কসবায় ১০৪টি ও আখাউড়া উপজেলায় ৪৫টি পরিবার পাবেন সরকারি এই ঘর।
জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে দ্রম্নত গতিতে এগিয়ে চলছে ঘর নির্মাণকাজ। ইতোমধ্যেই ঘর নির্মাণের কাজ শতকরা ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। প্রতিটি ভূমিহীন পরিবারকে ২ শতক জমির ওপর ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে দুই কক্ষবিশিষ্ট আধা পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। একই নকশায় তৈরি হচ্ছে সব ঘর। ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ এই স্স্নোগানে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় যাদের জমি নেই, ঘর নেই তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি খাসজমিতে এসব ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশ্রাফ আহমেদ রাসেল বলেন, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ঘর নির্মাণকাজ ও নির্মাণের মান তদারকি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রথম ধাপের জেলায় ১ হাজার ৯১টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে জেলার সব ভূমি ও গৃহহীনকে এই কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।
এদিকে স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল জানান, টাঙ্গাইল জেলার ৫৬৪টি পরিবার ভাসমান, পরগাছা বা উঠলি বদনাম মুছে সেমিপাকা ঘর ও দুই শতক ভূমির মালিক হচ্ছে। মুজিববর্ষে জেলার ১২টি উপজেলার ১১৮টি ইউনিয়নের এক হাজার ২৬৪টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবার সেমিপাকা ঘর পাবে। তবে প্রথম ধাপে আগামী ১৫ জানুয়ারি জেলার ৫৬৪টি পরিবারকে দুই শতক ভূমির ওপর নির্মিত সেমিপাকা ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হবে। ভূমি ও গৃহহীন পরিবারগুলো বিনামূল্যে সরকারের কাছ থেকে সেমিপাকা ঘর পাওয়ায় আগামী দিনের স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন। তারা যিনি যে কাজ করছেন তা থেকে আরও ভালো, বেশি রোজগারের ও মর্যাদাশীল কাজ করে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা ও মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন উন্নত জীবন গড়ে দিতে নানা স্বপ্ন বাস্তবায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, যাদের ভূমি ও ঘর নেই তাদের জমিসহ ঘর দেওয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ওই কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ১২টি উপজেলায় সরকারিভাবে এক হাজার ১৭৪টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হবে। এছাড়া টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ, সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগ, ধনাঢ্য মানবিক ব্যক্তি ও সরকারি চাকরিজীবীরা মিলে আরও ১০০ ঘর দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। দুই শতক ভূমিতে নির্মিত প্রতিটি ঘরে দুইটি বেডরুম, একটি কিচেন, একটি ইউটিলিটি রুম, একটি টয়লেট ও একটি বারান্দা থাকবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সেমিপাকা ঘর নির্মাণে জোর তৎপরতায় কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট কাঠ ও রাজ মিস্ত্রিরা মনের মাধুরী মিশিয়ে ঘর নির্মাণ করছেন। ২৫ জানুয়ারিকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে ৮ শতাধিক ঘর নির্মিত হয়েছে। বাকিগুলো নির্মাণে সারাক্ষণ কাঠ-হাতুরির ঠক্ ঠক্ আর ইট গুঁড়ো করার মেশিনের শব্দে রাজমিস্ত্রি হাঁকডাক চলছে।
জেলার ভূঞাপুর উপজেলার ফলদা ইউনিয়নের গাড়াবাড়ি গ্রামের জহির উদ্দিন জানান, উপজেলার গাবাসারা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে তাদের বাড়িসহ ৪৫শতাংশ জমি ছিল। প্রায় ২৫ বছর আগে যমুনার ভাঙনে সব নদীর পেটে চলে যায়। তারপর অর্জুনা ইউনিয়নের তারাই গ্রামে অন্যের জমিতে বাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু করেন। বিগত ২০১৮ সালে যমুনার ভাঙনে সে বাড়িটিও নদীগর্ভে চলে যায়। এরপর আবার অন্যের বাড়িতে বসবাস করতে থাকেন। মুজিববর্ষে সরকারের পক্ষ থেকে ভূমির সঙ্গে ঘর পেয়ে তিনি ও তার পরিবার খুবই আনন্দিত।
মধুপুর উপজেলার ভাসমান বাসিন্দা শরবানু বেগম জানান, প্রায় ৩০ বছর আগে স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। নিজের কোন বাড়ি-ঘর ও জমি না থাকায় তিনি অন্যের বাড়িতে জীবনযাপন করেছেন। সরকারি ঘর পেয়ে তার আনন্দ ধরে রাখতে পারছেন না। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. আতাউল গনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় নির্মাণাধীন সেমিপাকা ঘরের কাজ তদারকি করা হচ্ছে। যে কোন মূল্যে মানবিক এই কর্মসূচি টাঙ্গাইল জেলায় সফল করা হবে।