রাজধানীর কলাবাগানে স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার ফারদিন ইফতেখার দিহানের সর্বোচ্চ শাস্তির পাশাপাশি এ ঘটনা ঘিরে ‘গুজব রটনকারীদের’ আইনের আওতায় আনার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন মাস্টারমাইন্ড স্কুলের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডি-২৭ নম্বরে সাম্পান রেস্তোরাঁর সামনে বিক্ষোভের পাশাপাশি মোমবাতিও প্রজ্বালন করেন শোকার্ত শিক্ষার্থীরা।
ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচিতে ওই স্কুলছাত্রীর সহপাঠীদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন অভিভাবকও অংশ নেন।
শিক্ষার্থীরা চারটি দাবি জানান, যার মধ্যে ‘গুজব রটনাকারীদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থার দাবিও রয়েছে।
“যেসব বিকৃত মস্তিষ্কের ব্যক্তি গুজব ছড়াচ্ছে এবং ধর্ষণের শিকার হওয়া মেয়েটির ব্যাপারে অকথ্য কথাবার্তা বলছে এবং মেয়েটির পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে তাদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে।”
বৃহস্পতিবার দুপুরে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল মাস্টারমাইন্ডের ‘ও লেভেলের’ ওই ছাত্রীকে অচেতন অবস্থায় ধানমণ্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যান তার সহপাঠী-বন্ধু ফারদিন ইফতেখার দিহান (১৮)। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা মেয়েটিকে মৃত ঘোষণা করেন। হসাপাতাল থেকেই দিহানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ‘দোষ স্বীকার’ করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন দিহান।
জিজ্ঞাসাবাদে দিহানের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, “দুইজনের সম্মতিতে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয় বলে স্বীকার করেছে দিহান।”
তবে মেয়েটির বাবা মামলায় অভিযোগ করেছেন, তার মেয়েকে কলাবাগান ডলফিন গলির বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন দিহান। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে অচেতন হয়ে পড়লে বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আসামি নিজেই তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যান।
শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে মেয়েটির ময়নাতদন্তের পর মেডিকেলের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, “স্কুলছাত্রীর শরীরের কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া না গেলেও যৌনাঙ্গ ও পায়ুপথে ক্ষত চিহ্ন পাওয়া গেছে। বিকৃত যৌনাচারের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে।”
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ওই ছাত্রীর এক বন্ধু বলেন, “ধর্ষণের প্রতিবাদে গোটা দেশ তোলপাড় হয়ে গেল এই কিছু দিন আগেই। আমরা সবাই বিক্ষোভ জানালাম, বিচারের দাবি জানালাম। কিন্তু নিয়তি! আমাদের বন্ধুটাকে আজ আমরা হারালাম। বন্ধুত্বের নামে এই ঘটনা তো মেনে নেওয়া যায় না। আমরা সত্যিই জানি না, আজ কী বলা উচিৎ।”
এই সমাবেশে সংহতি জানাতে আসা একজন অভিভাবক বলেন, “বন্ধুত্বের নামে এই যদি হয় পরিণতি, তাহলে এই কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বন্ধুত্বটাকেই এক সময় ভুলভাবে ব্যাখ্যা করতে শিখবে। বন্ধুত্ব হয় ভরসা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
“আমাদের অভিভাবকদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। ধর্ষণ, নারী নিপীড়নের বিষয়ে আমাদের সন্তানদের আরও বেশি নৈতিক শিক্ষা আমাদের দিতে হবে। ট্যাবুটা ভাঙতে হবে আমাদেরই।”
এই সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা আরও তিনটি দাবি জানান। সেগুলো হল-
# ধর্ষক ফারদিন ইফতেখার দিহান এবং তার সঙ্গীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে বিচারকার্য শুরু করতে হবে।
# যারা এই অন্যায়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল, অনতিবিলম্বে তাদের সাজা নিশ্চিৎ করতে হবে।
# বাংলার মাটিতে যেন আরও কোনো ধর্ষক বেঁচে না থাকে সেই ব্যবস্থা প্রশাসনকে নিতে হবে।