বাংলাদেশে অনলাইনে নিষিদ্ধ ভার্চুয়াল মুদ্রা বিট কয়েন (BitCoin) কেনা-বেচার মাধ্যমে প্রতারণা করে আসছিলেন রায়হান হোসেন ওরফে রায়হান (২৯)। বিট কয়েন বিক্রি ও প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা কেনা-বেচার এই মাস্টারমাইন্ড
শুধু তাই নয়, প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া এসব অর্থ বিদেশেও পাচার করতেন বলে তথ্য পেয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
সম্প্রতি নিষিদ্ধ এই বিট কয়েনের কেনা-বেচার বিষয়ে র্যাবের সাইবার মনিটরিং সেলের গোয়েন্দা নজরদারি ও ছায়াতদন্ত শুরু করে। একপর্যায় র্যাব জানতে পারে, একটি চক্র বিট কয়েন কেনা-বেচা ও বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এই চক্রটিকে শনাক্ত করে, সেখানেই আসামি রায়হানের নাম উঠে আসে। অবশেষে ঢাকার গাজীপুরের সফিপুর এলাকা থেকে তাকে আটক করে র্যাব-১। তার একটি একাউন্টে ৫৪ লাখ টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়া ২৭১টি একাউন্টে গত ১ মাসে তিনি ৩৫ হাজার ডলার লেনদেন করেছেন। বিট কয়েন বিক্রির নামে তিনি বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে প্রতারণাও করেছেন। এছাড়া তিনি পাকিস্তান রাশিয়া ও নাইজেরিয়ার বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে মিলে এই বিট কয়েন কেনা-বেচা করতেন বলে জানা গেছে।
বুধবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর র্যাব সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালন (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার।
তিনি বলেন, নিষিদ্ধ বিট কয়েন মানিলন্ডারিংয়ের একটি সোর্স। তবে, এটি ব্যাপকভাবে বাংলাদেশে এখনও প্রচলিত হয়নি। নিষিদ্ধ এই বিট কয়েন কেনা-বেচার সঙ্গে জড়িত একটি চক্রের সন্ধান আমরা পেয়েছি। এই চক্রটি বড় অংকের টাকা লেনদেন করতেন। আরও অনেকগুলো চক্র আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। যারা বিট কয়েনের শিকড় স্থাপনের সঙ্গে জড়িত। আশা করছি, তাদেরকেও আমরা আটক করে আইনের আওতায় আনতে পাবো। অভিযানে রায়হানের কাছ থেকে পাওয়া যায় ১৯টি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, ২২টি সিমকার্ড, নগদ ২৫ ইউএস ডলারসহ নগদ ১ হাজার ২৭৫ টাকা, ১টি কম্পিউটার, ৩টি মোবাইলফোন, ১টি অডিগাড়ি ক্রয়-বিক্রয়ের সনদপত্র, ৩টি ভুয়া চালান বই, ১টি টেড লাইসেন্স, ১টি টিএনসার্টিফিকেট, ১টি রেকর্ডিং মাইক্রোফোন, ১টি ক্যামেরা, ১টি রাউটার, ১টি হেডফোন, ১টি মডেম, বিভিন্ন ব্যাংকের ৪টি চেক বই।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি ২০০৬ সালে ব্যক্তিগত আগ্রহে কম্পিউটারের ওপর প্রশিক্ষণ নেয়। এরপর ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ করতেন। তিনি ২০২০ সালের জুন মাস থেকে পাকিস্তানি নাগরিক সাইদ (২২) এর সহায়তায় নিষিদ্ধ ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা বিট কয়েন দিয়ে প্রতারণা করে অবৈধ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছেন।
আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও বলেন, আসামি রায়হান ২০২০ সালের জুন থেকে অনলাইন অ্যাক্টিভিটিস হিসেবে বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল এই মুদ্রার মাধ্যমে প্রতারণামূলকভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছে। তিনি পাকিস্তান, নাইজেরিয়া এবং রাশিয়ান শ্মাগলার, ক্রেডিট কার্ড হ্যাকার ও এচাড়াও সে ক্রেডিট কার্ড হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা বিট কয়েন ক্রয় করে। আসামি রায়হান স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করে নামে-বেনামে দেশি-বিদেশি অনলাইন ব্যাংক হিসাব তদারকি করতেন। গত ১ মাসে তার ২৭১ বিট কয়েন একাউন্টে ৩৫ হাজার ইউএস ডলার লেনদেন করেছেন বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। এসব চক্রের নেটওয়ার্ক দেশ-বিদেশে বিস্তৃত। র্যাবের হাতে আটক হওয়া এই প্রতারক রায়হান মূলত ৮ম শ্রেণি পাস করা। কিন্তু তার আইটি নলেজ খুব বেশি। যদিও এ বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রশিক্ষণ তার নেই। তার অধীনে কিছু ছেলে যারা আইটি এক্সপার্ট। তাদের সহযোগিতায় রায়হান বিট কয়েন কেনা-বেচা করে আসছিলেন।
তিনি বলেন, বিট কয়েন এর সংখ্যা খুব সীমিত। এই কয়েন পয়েন্টিংয়ের মাধ্যমে কেনা-বেচা হয়। এটি একজন জাপানি নাগরিকের নামে রেজিস্টেশন করা। যেকোনো ধরনের কালো টাকা এক দেশ থেকে অন্যদেশে স্থানান্তরের বা অবৈধ বিজনেস মাদক, অস্ত্র, অবৈধ যন্ত্রপাতি কেনা-বেচার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বলেন, তার কাছ থেকে ১৯টি জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে, সেগুলো আমরা পরীক্ষা করে দেখা হবে।
আটক আসামি রায়হানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, এছাড়াও তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান তিনি।