চলমান পৌরসভা নির্বাচনসহ কোনো নির্বাচনেই বিতর্কিতদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, কোনো অপকর্মে জড়িত হয়ে দলের জন্য বিতর্ক কুড়িয়েছেন, এমন নেতারা আর কখনও দলের মনোনয়ন পাবেন না। এমনকি বিতর্কিত পরিবারের কোনো সদস্যকেও দলীয় প্রার্থী করা হবে না।
গতকাল বুধবার গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন বলে বৈঠক সূত্র জানায়। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে পৌরসভা নির্বাচনের মেয়র পদে বিতর্কিতরা পুনঃমনোনয়ন পাননি। বর্তমান মেয়রদের মধ্য থেকেও যারা নানা দুর্নীতি-অনিয়মে জড়িত হয়েছেন, তারাও এবারের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েছেন।
দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীরাও ভবিষ্যতে আর দলীয় মনোনয়ন পাবেন না বলে আবারও জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দল থেকে যাকেই প্রার্থী করা হবে, তার পক্ষেই সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কঠোর সাংগঠনিক শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শীতে করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ শুরু হওয়ার প্রেক্ষাপটে দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষায় সবাইকে সাধ্যমতো সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে।
২৫ জানুয়ারি দেশে করোনার ভ্যাকসিন আসবে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে করোনাযোদ্ধা চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীসহ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরা অগ্রাধিকার পাবেন। তবে পর্যায়ক্রমে সবাই এ টিকা পাবেন। ভ্যাকসিন বিতরণের ক্ষেত্রেও সংশ্নিষ্টদের সহযোগিতা করতে হবে দলের নেতাকর্মীদের।
প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠকে দেশের ৫৬টি পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করা হয়। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় চতুর্থ ধাপের এসব পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তারা। বৈঠক শেষে রাতে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব দলীয় মেয়র প্রার্থীর নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়।
মনোনয়ন বোর্ড সদস্যদের মধ্যে দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
যারা মনোনয়ন পেলেন :ঠাকুরগাঁও জেলার ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় আঞ্জুমান আরা বেগম ও রানীশংকৈলে মোস্তাফিজুর রহমান, লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট পৌরসভায় মোফাজ্জল হোসেন ও পাটগ্রামে রাশেদুল ইসলাম সুইট, জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে শহীদুল আলম চৌধুরী, কালাইয়ে রাবেয়া সুলতানা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সৈয়দ মনিরুল ইসলাম, রাজশাহীর নওহাটায় হাফিজুর রহমান হাফিজ, গোদাগাড়ীতে অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস, তানোরে ইমরুল হক ও তাহেরপুরে আবুল কালাম আজাদ, নাটোরের বড়াইগ্রামে মাজেদুল বারী নয়ন ও নাটোর পৌরসভায় উমা চৌধুরী, চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে রফিকুল ইসলাম ও আলমডাঙ্গায় হাসান কাদির গনু, যশোরের চৌগাছায় নূর উদ্দীন আল-মামুন ও বাঘারপাড়ায় কামরুজ্জামান, বাগেরহাট জেলার বাগেরহাট পৌরসভায় খান হাবিবুর রহমান, সাতক্ষীরা জেলার সাতক্ষীরা পৌরসভায় শেখ নাসেরুল হক, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বিপুল চন্দ্র হাওলাদার, বরিশালের মুলাদীতে শফিকউজ্জামান ও বানারীপাড়ায় সুভাস চন্দ্র শীল, টাঙ্গাইলের গোপালপুরে রকিবুল হক ছানা ও কালিহাতীতে মোহাম্মদ নুরন্নবী, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে আনোয়ার হোসেন, হোসেনপুরে আ. কাইয়ুম (খোকন) ও করিমগঞ্জে মুসলেহ উদ্দিন, মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমে আবদুস ছালাম।
নরসিংদী জেলার নরসিংদী পৌরসভায় আশরাফ হোসেন সরকার ও মাধবদীতে মোশাররফ হোসেন, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নজরুল ইসলাম ও রাজবাড়ী পৌরসভায় মহম্মদ আলী চৌধুরী, ফরিদপুরের নগরকান্দায় নিমাই চন্দ্র সরকার, মাদারীপুরের কালকিনিতে এসএম হানিফ, শরীয়তপুরের ডামুড্যায় কামাল উদ্দিন আহমদ, জামালপুরের মেলান্দহে শফিক জাহেদী রবিন, শেরপুর জেলার শেরপুর পৌরসভায় গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া ও শ্রীবর্দীতে মোহাম্মদ আলী লাল মিয়া।
ময়মনসিংহের ফুলপুরে শশধর সেন, নেত্রকোনা জেলার নেত্রকোনা পৌরসভায় নজরুল ইসলাম খান, সিলেটের কানাইঘাটে লুৎফুর রহমান, হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে মোহাম্মদ সাইফুল আলম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় তাকজিল খলিফা, কুমিল্লার হোমনায় নজরুল ইসলাম ও দাউদকান্দিতে নাইম ইউসুফ, চাঁদপুরের কচুয়ায় নাজমুল আলম ও ফরিদগঞ্জে আবুল খায়ের পাটওয়ারী, ফেনীর পরশুরামে নিজাম উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, নোয়াখালীর চাটখিলে নিজাম উদ্দিন, সোনাইমুড়ীতে নুরুল হক চৌধুরী, লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে এম মেজবাহ উদ্দিন, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় মোহাম্মদ জোবায়ের, পটিয়ায় আইয়ুব বাবুল, চন্দনাইশে মাহবুবুল আলম, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় শামছুল হক, রাঙামাটি জেলার রাঙামাটি পৌরসভায় আকবর হোসেন চৌধুরী এবং বান্দরবান জেলার বান্দরবান পৌরসভায় মোহাম্মদ ইসলাম বেবী।