নিউজ ডেস্ক:
কোনো প্রকার ঘুষ প্রদান ছাড়াই পুলিশের কনস্টেবলের চাকরি নিশ্চিত করেছেন মেহেরপুরের দুই জন এতিম মেয়ে। চাকরি পাওয়া ওই দুই মেয়ে হলেন- মেহেরপুর সদর উপজেলার গভিপুর গ্রামের মৃত বাহার আলীর মেয়ে লতা খাতুন ও মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের নূরনবী শেখের মেয়ে প্রিয়া খাতুন।
বৃহস্পতিবার রাতে মেহেরপুর পুলিশ লাইন রিজার্ভ অফিসে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান নিয়োগের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করেন।
ঘোষিত ফল অনুযায়ী মেহেরপুরে ৯ জন পুরুষ ও ৯ জন নারীর চূড়ান্ত নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়। যার মধ্যে দুজন মুজিবনগর সরকারি শিশু পরিবারের দুই এতিম মেয়ে রয়েছেন।
জানা গেছে, পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের জন্য ১০৩ টাকা আবেদন ফি জমা দিতে হয়। কোনো প্রকার ঘুষ বাণিজ্য ছাড়া মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত কয়েক দিন বিভিন্ন পরীক্ষা সম্পন্ন করে জেলার দুই এতিমসহ ১৮ জন নারী ও পুরুষ পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়েছেন। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়ায় আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে তাদের পরিবারে।
মুজিবনগর সরকারী শিশু পরিবারে বাবার স্নেহে এতিম মেয়েদের মানুষ করছেন প্রধান শিক্ষক তন্ময় কুমার সাহা। শুক্রবার পুলিশ লাইনে চাকরিপ্রাপ্তদের চূড়ান্ত মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। সেখানে দুই মেয়ে লতা ও প্রিয়াকে নিয়ে এসেছিলেন তন্ময় কুমার সাহা।
তাদের চাকরি হওয়ায় আবেগআপ্লুত তন্ময় কুমার সাহা বলেন, আমার এখানে ৯০ জন এতিম কন্যা শিশু রয়েছে। এ বছর লতা ও প্রিয়া এসএসসি পাস করেছে। তাদের নিয়ে আমার চিন্তার সীমা ছিল না। সরকারি নিয়মানুযায়ী এসএসসির পরে তাদের বিদায় দিতে হবে। তাই এই চাকরির মধ্য দিয়ে আমার মেয়ে দুটির ভবিষ্যত নিশ্চিত হয়েছে।
চাকরিপ্রাপ্ত প্রিয়া খাতুনের বাড়ি মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর গ্রামে। ছোটবেলায় তার বাবা-মা মারা যায়।
প্রিয়া বলেন, আমি অনেক অনেক গর্বিত। কেননা লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনেক ভালো হয়েছে। মেধার ভিত্তিতে আমি চাকরি পেয়েছি। একই কথা বলেন লতা খাতুন।
প্রধান শিক্ষকের বিষয়ে তারা দুজন বলেন, তন্ময় কুমার সাহা আমাদেরকে বাবা-মায়ের স্নেহ দিয়ে মানুষ করেছেন। পুলিশ লাইনে আসার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড়সহ সব সময় তিনি আমাদের চোখে চোখে রেখেছিলেন। এটি কিন্তু উনার সরকারি দায়িত্ব নয়। বাবার মতই দায়িত্ব পালন করে তিনি আমাদের প্রতিষ্ঠিত করে দিলেন।
চাকরির বিষয়ে তারা বলেন, ঘুষ ছাড়া পুলিশে চাকরি হবে তা আমাদের বিশ্বাসই ছিল না। আমাদের মেধা ও যোগ্যতায় চাকরি হয়েছে। এটি ভাবতেই গর্ববোধ হচ্ছে। তাই চাকরিতে দায়িত্ব পালন করার সময় মানুষের ভালোর জন্যই সব কিছু করতে চাই। তাছাড়া আমাদের বাবা (প্রধান শিক্ষক) ও শিশু পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্যও কিছু একটা করতে চাই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে পুলিশে নিয়োগের বিষয়ে বড় ধরনের ঘুষ বাণিজ্যর বিষয়টি সকলের মুখেমুখেই ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশের পুলিশ সুপাররা মেধা ও যোগ্যাতার ভিত্তিতে বিনাপয়সায় কনস্টেবল পদে লোক নিয়োগের ঘোষণা দেন। নিয়োগ প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার বিষয়টি তাই জনমনে নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে। মেহেরপুর জেলায় ১৮ জন লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে টাকা লেনদেনের কোনো অভিযোগ না থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন চাকরিপ্রাপ্তরাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
এ বিষয়ে মেহেরপুর পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় কি-না তা আমারা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যা চাওয়া আমরা চাই বাস্তবায়ন করেছি। এখন থেকে যোগ্য ও মেধাবীরা পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরিতে আসবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।