ডেস্ক নিউজ
- মোট ছয়টি রেল রুটের দৈর্ঘ্য হবে ১২৮ কিলোমিটার
- ১০৪ স্টেশনের মধ্যে উড়াল ৫১, পাতাল ৫৩
- কমবে যানজট
- প্রথম মেট্রোরেলের সার্বিক অগ্রগতি ৫৭ ভাগ, মাথা তুলেছে স্টেশন
রাজধানীর সঙ্গে আশপাশের এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে আরও পাঁচটি মেট্রোরেল প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে একটি মেট্রোরেলের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের টার্গেট নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। সব প্রকল্প মিলিয়ে মোট দৈর্ঘ্য ১২৮ কিলোমিটার। মেট্রোরেলের মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে পূর্বাচল সিটি, গাজীপুর, সাভারের আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জের দ্রুততম সময়ে যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে। যানজট নিরসনে সবই সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের আওতায় ১২৮ দশমিক ৭৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রকল্পের ৬৭ দশমিক ৫৬৯ কিলোমিটার উড়াল এবং ৬১ দশমিক ১৭২ কিলোমিটার হবে পাতাল। শক্তিশালী নেটওয়ার্কের আওতায় এ প্রকল্পে মোট স্টেশন হবে ১০৪টি। এর মধ্যে উড়াল ৫১টি ও পাতাল ৫৩টি। নির্মাণাধীন প্রথম প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা।
ছয় মেট্রোর পরিকল্পনা ॥ পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রায় ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের প্রথম উড়াল সড়ক এমআরটি-৬ নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। এদিকে ২০২৬ সালের মধ্যে কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার এবং নতুন বাজার থেকে পিতলগঞ্জ পর্যন্ত ১১সহ মোট ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ২১টি স্টেশন বিশিষ্ট মেট্রোরেল-এক এর নির্মাণ কাজ চলমান। ২০২৮ সালের মধ্যে উড়াল ও পাতাল মিলিয়ে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-৫ এর নর্থ (উত্তর) রুটের সার্ভে ও বেসিক ডিজাইনের কাজ চলমান বলে জানিয়েছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়।
এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে উড়াল ও পাতাল রেলের সমন্বয়ে ১৭ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ এমআরটি লাইন-৫ দক্ষিণ রুটের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ ইতোমধ্যে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। একই সময়ের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে এমআরটি লাইন-২ নির্মাণে নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ফুল স্কেল স্টাডি (এফএসএস) শুরু করেছে। অন্যদিকে ২০৩০ সালের দিকে কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইনের পাশ দিয়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়াল মেট্রোরেল হিসেবে পিপিপি পদ্ধতিতে এমআরটি লাইন-৪ নির্মাণের উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন বলে জানা গেছে।
সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থার আরও উন্নতির জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মেট্রোরেল প্রকল্পও রয়েছে। মেট্রোরেল সহজে বেশি মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। এজন্যই মেট্রোরেল প্রকল্পকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
সড়ক বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর মেট্রোরেল প্রকল্পসহ সরকার মোট ৬টি মেট্রোরেল প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ প্রায় অর্ধেক এগিয়েছে। এছাড়া ঢাকা থেকে আশুলিয়া, ঢাকা থেকে গাজীপুর, ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকা থেকে পূর্বাচল সিটির সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ করতে মেট্রোরেলের কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলমান ॥ রাজধানীর দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত প্রায় ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের প্রথম মেট্রো-ছয় রেলের কাজ চলমান। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে প্রকল্পটিতে এখন বেশ গতি ফিরেছে। ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান এই প্রকল্পের সার্বিক গড় অগ্রগতি ৫৬ দশমিক ৯৪ ভাগ। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির (ডিএমটিসিএল) পক্ষ থেকে জানুয়ারি মাসে সর্বশেষ এ প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৮০ দশমিক ২১ ভাগ। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের অগ্রগতি ৫১ ভাগ। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক রেলকোচ) ও ডিপো সরঞ্জাম কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ৪৬ ভাগ।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্পটি মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণে ইতোমধ্যে অংশীজনের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এক দশমিক ১৬ কিলোমিটার এ অংশে মাটি পরীক্ষা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। মোট আটটি প্যাকেজে ভাগ করে এ প্রকল্পের কাজ চলছে। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব প্যাকেজের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। প্যাকেজ এক এর আওতায় ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়ন ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি শেষ হয়েছে। এতে সরকারের ৭০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা সাশ্রয় হয়ে প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি শতভাগ।
প্যাকেজ দুইয়ের আওতায় ২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া ডিপো এলাকার পূর্ত কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৮০ ভাগ। প্যাকেজ তিন ও চারের আওতায় উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও নয়টি স্টেশন নির্মাণের সার্বিক অগ্রগতি ৭৬ ভাগের বেশি। উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ ও পল্লবী স্টেশনের ছাদ নির্মাণ শেষ হয়েছে। ২০১৭ সালের এক আগস্ট এই প্যাকেজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
প্যাকেজ পাঁচের আওতায় আগারগাঁও থেকে কাওরানবাজার পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৯৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও তিনটি স্টেশন নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৫৫ দশমিক ৯৭ ভাগ। ২০১৮ সালের ১ আগস্ট এই প্যাকেজের কাজ শুরু হয়েছিল।
প্যাকেজ-৬ এর আওতায় কাওরানবাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৪ দশমিক ৯২২ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও চারটি স্টেশন নির্মাণ কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৫৬ দশমিক ৮২ ভাগ। ২০১৮ সালের ১ আগস্ট এই প্যাকেজের কাজ শুরু হয়েছিল।
ইলেকট্রিক্যাল এ্যান্ড মেকানিক্যাল সিস্টেম প্যাকেজ-৬ এর আওতায়। ২০১৮ সালের ১১ জুলাই শুরু হওয়া এই প্যাকেজের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রায় ৫৯ ভাগ। রোলিং স্টক (রেল কোচ) ও ডিপো সরঞ্জাম সংগ্রহের কাজটি প্যাকেজ আটের আওতায়। ২০১৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এ প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি ৩৭ ভাগ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চলতি মাসের ২২ তারিখ জাপান থেকে আনা হচ্ছে মেট্রোরেলের পাঁচটি ট্রেন। তবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর প্রকল্পটি চালুর কথা থাকলেও তা হচ্ছে না।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক জানান, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রথম অংশের কাজ গত জুন মাসে শেষ হয়ে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে তা সম্ভব না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এই প্রকল্পে কর্মরত সবার জন্য চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে উত্তরার পঞ্চবটি কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ১৪ শয্যাবিশিষ্ট এবং গাবতলীর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ১০ শয্যার আলাদা দুটি ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে।
এমআরটি লাইন-এক ॥ দেশের প্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড বা পাতাল মেট্রোরেল হবে এটি। ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই লাইনের দুটি অংশ রয়েছে। এর একটি বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮৭২ কিলোমিটার। এই লাইনে স্টেশন সংখ্যা হবে ১২টি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বিমানবন্দর, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩, খিলক্ষেত, যমুনা ফিউচারপার্ক, নতুন বাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, হাতিরঝিল, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ ও কমলাপুর। নতুন বাজার থেকে পিতলগঞ্জ ডিপো পর্যন্ত অপর লাইনের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৩৬৯ কিলোমিটার। এই লাইনে নয়টি স্টেশনের মধ্যে রয়েছে নতুন বাজার, যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা, পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি, মাস্তুল, পূর্বাচল সেন্টার, পূর্বাচল সেক্টর-৭ ও পূর্বাচল ডিপো। সাতটি উড়াল ও দুটি পাতাল স্টেশন হবে এই অংশে। নতুন বাজার স্টেশনে ইন্টারচেঞ্জ থাকবে। এ ইন্টারচেঞ্জ ব্যবহার করে বিমানবন্দর রুট থেকে পূর্বাচল রুটে এবং পূর্বাচল রুট থেকে বিমানবন্দর রুটে যাওয়া যাবে।
৩১ জানুয়ারি প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উভয় রুটের বিস্তারিত স্টাডি, জরিপসহ বেসিক ডিজাইন শেষ হয়েছে। সার্বিক নক্সার কাজ ৬৫ ভাগ শেষ হয়েছে। ডিপো ও করিডোর নির্মাণে রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জ ও ব্রাহ্মণখালি মৌজায় ৯২ দশমিক ৯৭২৫ একর জমি অধিগ্রহণে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ইতোমধ্যে এলএ কেইস নম্বর-১০/২০১৯-২০২০ রুজু করেছেন।
এ রুটের নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০২৬ সালের মধ্যে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। রুটের একটি অংশের ৩ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকার ঋণ চুক্তি ২৯ মে জাপান সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এমআরটি লাইন-২ ॥ ২০৩০ সালের মধ্যে গাবতলী থেকে চট্টগ্রাম রোড পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড ও এলিভেটেড সমন্বয়ে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মিত হবে। এ লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১৫ জুন জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে সহযোগিতা স্মারক সই হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জাপান-বাংলাদেশের অংশগ্রহণে ইতোমধ্যে অন্তত তিনটি প্ল্যাটফরম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ২০১৮ সালের আট নবেম্বর নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
এর সম্ভাব্য রুট হলো গাবতলী-বসিলা-মোহাম্মদপুর বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড-সাত মসজিদ রোড-ঝিগাতলা-ধানমণ্ডি-২ নম্বর রোড-সায়েন্সল্যাব-নিউমার্কেট-নীলক্ষেত-আজিমপুর-পলাশী-শহীদ মিনার-ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ-পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স-গোলাপশাহ মাজার-বঙ্গ ভবনের উত্তর পাশের সড়ক-মতিঝিল-আরামবাগ-কমলাপুর-মুগদা-মাণ্ডা ডেমরা হয়ে চট্টগ্রাম রোড। প্রকল্পটি এগিয়ে নিতে গত বছরের মার্চে পিপিপি গবেষণা সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রিলিমিনারি স্টাডি শুরু করেছে বলে জানা গেছে। স্টাডি অগ্রগতি ইতোমধ্যে ৫০ ভাগ।
এমআরটি লাইন-৪ ॥ ২০৩০ সালের মধ্যে কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জ রেললাইনের পাশ দিয়ে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পাতাল মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। গত বছরের ১৯ মার্চ জাপান ও বাংলাদেশ সরকার এবং জাপানের বেসরকারী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত তৃতীয় প্ল্যাটফরম সভায় ও ১৫ জুন ২০১৭ জাপান-বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় পিপিপি পদ্ধতিতে এই লাইন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এই প্রকল্পের অগ্রগতি খুব বেশি হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাতে সময় এখনও পর্যাপ্ত। তাই নিরাশ হওয়ার সুযোগ নেই।
এমআরটি লাইন-৫ নর্থ (উত্তর) ॥ ২০২৮ সালের মধ্যে হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত পাতাল ও উড়াল সমন্বয়ে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ (আন্ডারগ্রাউন্ড ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার এবং এলিভেটেড ৬ দশমিক ৫০ কিলেমিটার) ও ১৪ স্টেশন (নয়টি আন্ডারগ্রাউন্ড এবং পাঁচটি এলিভেটেড) বিশিষ্ট মেট্রোরেল নির্মাণে ইতোমধ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ হয়েছে। প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসের জন্য জাইকার সঙ্গে সাত হাজার ৩৫৮ মিলিয়ন ইয়েন চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এ রুট নির্মাণে ব্যয় হবে ৪১ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের রুট হলো হেমায়েতপুর-বালিয়ারপুর-মধুমতি-আমিনবাজার-গাবতলী-দারুস সালাম-মিরপুর-১, মিরপুর-১০, মিরপুর-১৪, কচুক্ষেত-বনানী-গুলশান-২-নতুন বাজার ও ভাটারা। এখন বিভিন্ন সার্ভে ও বেসিক ডিজাইন কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৫০ ভাগের বেশি।
এমআরটি লাইন-৫ সাউথ (দক্ষিণ) ॥ ২০৩০ সালের মধ্যে গাবতলী থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত পাতাল রেল ও উড়াল রেলের সমন্বয়ে ১৭ দশমিক ৪০ কিলোমিটার পথ ও ১৬ স্টেশন বিশিষ্ট মেট্রোরেল নির্মাণের প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ দশমিক ৮০ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড ও ৪ দশমিক ৬০ কিলোমিটার এলিভেটেড নির্মাণ হবে। মোট স্টেশনের মধ্যে ১২টি আন্ডারগ্রাউন্ড ও চারটি এলিভেটেড নির্মাণ করা হবে।
গত বছরের মার্চ মাসে এর সমীক্ষা শেষ হয়েছে। এ রুটের শ্রেণীবিন্যাস হচ্ছে, গাবতলী-টেকনিক্যাল-কল্যাণপুর-শ্যামলী-কলেজগেট-আসাদগেট-রাসেলস্কয়ার-পান্থপথ-সোনারগাঁও মোড়-হাতিরঝিল-নিকেতন-রামপুরা-আফতাব নগর-পশ্চিম আফতাবনগর সেন্টার-আফতাব নগর পূর্ব ও দাশেরকান্দি। প্রকল্প নির্মাণের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে তিনশ ২৩ কোটি টাকা। উন্নয়ত সহযোগী সংস্থার সঙ্গে হতোমধ্যে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলেও জানা গেছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শুধু এমআরটি লাইন-৬ বা উড়াল মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেই যানজট শেষ হবে না। এর ছয়টি লাইনের পুরোপুরি কাজ শেষ করতে হবে। এজন্য আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এরই মধ্যে উড়াল পথের পাশাপাশি পাতাল পথও থাকছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এর পুরো কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশাকরি সব লাইনের কাজ শেষ হলে নগরীর যানজট সমস্যা অনেকটাই সমাধান হবে।
ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসন এবং গণপরিবহনের সক্ষমতা বাড়াতে ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার ছয়টি মেট্রোরেল রুট নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এর আওতায় ১২৮ কিলোমিটার রুট নির্মাণ করা হবে। যার ৬৭ কিলোমিটার হবে উড়াল পথে এবং ৬১ কিলোমিটার হবে পাতাল পথে।
জানতে চাইলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সিদ্দিক বলেন, ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসন এবং সক্ষমতা বাড়াতে ২০৩০ সালের মধ্যে ছয়টি মেট্রোরুট সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী মেট্রোরেল ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এসব মেট্রোরেলের রুটের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। উড়াল মেট্রোরেল নির্মাণের পাশাপাশি পাতাল মেট্রোরেলও নির্মাণ করা হবে। এমআরটি লাইন ১, ২, ৪ ও ৫-এ উড়াল পথের পাশাপাশি পাতাল পথও থাকছে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ আশীষ কুমার দে সরকারের যানজট নিরসনে ছয়টি উড়াল ও পাতাল সড়ক নির্মাণের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আধুনিক এই সেবা দেয়া ছাড়া নগরীর যানজট সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনবহুল সিটিগুলোতে মেট্রো ও পাতাল রেল নির্মাণের মধ্য দিয়ে যানজট থেকে মুক্তি মিলেছে। আমরাও আশাবাদী ২০৩০ সালের মধ্যে যদি সব প্রকল্পের কাজ শেষ হয় তাহলে যানজট হ্রাস পাবে। তবে ঢাকামুখী মানুষের স্রোত কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে জরুরী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তিনি।
এম এ সিদ্দিক জানান, ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নগরবাসী পাতাল রেলে চড়তে পারবেন। তিনি বলেন, নগরীর সব ভবনের ডিজাইন এক রকম নয়। তাই লাইন নির্মাণের ক্ষেত্রে খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ঝুঁকি এড়াতে যেসব পয়েন্টে পাতাল লাইন হবে সেখানে ৫০ ফুট মাটির নিচে হবে নির্মাণ কাজ।
তিনি বলেন, মহানগরীর পূর্ব থেকে পশ্চিমে সংযোগ বাড়াতে মেট্রোরেল লাইন-৫ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লাইনের মাধ্যমে দুটি রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। একটি সাউথ (দক্ষিণ) রুট ও অন্যটি নর্থ (উত্তর) রুট। নর্থ রুটের আওতায় ২০২৮ সালের মধ্যে উড়াল ও পাতাল রেলের সমন্বয়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার লাইনের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। সাভারের হেমায়েতপুর থেকে পূর্বে ভাটারা থানা পর্যন্ত এই রুটটি নির্ধারণ করা হয়েছে। সব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নগরীর যানজট সমস্যা কমে আসবে বলে মনে করে সাবেক এই সড়ক সচিব।