ডেস্ক নিউজ
নতুন আবিষ্কৃত টিকার প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে দেশে টিকা উৎপাদন আরও সহজ করতে সরকার আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট (আইভিআই) প্রতিষ্ঠার চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এই প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে দেশে নতুন টিকা উৎপাদন সহজ হবে। ফলে দেশে স্বল্পমূল্যে টিকা পাওয়া যাবে। এমনকি বিদেশে রপ্তানির জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যোগ্যতা অর্জনের পথও সুগম হবে। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এই তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্তকর্তারা বলছেন, সুরক্ষা অ্যাপস চালু হওয়ায় নির্ধারিত তারিখের আগে টিকা নেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে টিকাকেন্দ্রে শৃঙ্খলা বাড়ছে। এছাড়া সোমবার রাতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনকার ভ্যাকসিনের (কোভিশিল্ড) দ্বিতীয় চালানে আরও ২০ লাখ টিকা দেশে আসছে। আর দেশে প্রাণঘাতী করোনার গণ-টিকাদান শুরুর ত্রয়োদশ দিনে অর্থাৎ গতকাল সোমবার ২ লাখ ২৫ হাজার ২৮০ জন মানুষ টিকা নিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্র যায়যায়দিনকে জানিয়েছে গত ২৭ জানুয়ারি করোনা টিকা কার্যক্রম শুরুর পর গতকাল পর্যন্ত টিকা গ্রহীতার সংখ্যা ২৩ লাখ ৮ হাজার ১৫৭ জন হয়েছে। দেশে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ১৮ হাজার ৭১৫ জন পুরুষ ও ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৪৪২ জন নারী টিকা নিয়েছেন।
এছাড়া প্রতিদিনের মতো সোমবার ঢাকা বিভাগে ৬৯ হাজার ৯৩৮, ময়মনসিংহে
১০ হাজার ১৪, চট্টগ্রামে ৪৯ হাজার ২৮১, রাজশাহীতে ২২ হাজার ৬৭০, রংপুরে ২০ হাজার ৩১৮, খুলনায় ৩০ হাজার ৪৬৬, বরিশালে ১০ হাজার ৬৩১ এবং সিলেটে ১১ হাজার ৯৬২ জনসহ টিকা প্রয়োগের ত্রয়োদশ দিনে অর্থাৎ গতকাল আট বিভাগে ২ লাখ ২৫ হাজার ২৮০ জন করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন। দেশে ড্রাই রানসহ এ পর্যন্ত ২৩ লাখ ৮ হাজার ১৫৭ জন টিকা নিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত টিকা নেওয়ার পর ৬০৯ জনের শরীরে সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের চিত্র :
অন্যান্য দিনের মতো সোমবার ঢাকা মহানগরীর হাসপাতালগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৩১৬ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ হাজার ৭৮ জন, স্যার সলিমুলস্নাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮০০ জন, শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ হাজার ৬৮ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ হাজার ১৮০ জন, কুয়েত- বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ৬৬৮ জন, ?কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১ হাজার ২৪০ জন, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউটে ১ হাজার ১৯ জন, শিশু ও মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে (মাতুয়াইল) ৬০০ জন, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ১ হাজার ৯৫০ জন, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালে (মিরপুর) ৫৮৪ জন, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালে ৭৬০ জন টিকা নিয়েছেন। সবমিলে গত একদিনে ঢাকা মহানগরে ৪৬টি টিকা কেন্দ্রে মোট ২৯ হাজার ৪৪১ জন করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন। তবে গতকাল রাজধানীর বাতজ্বর ইনস্টিটিউটে টিকা কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
এদিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘নতুন আবিষ্কৃত টিকার প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে দেশে টিকা উৎপাদন আরও সহজ করতে আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট (আইভিআই) প্রতিষ্ঠার চুক্তিতে অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই ইনস্টিটিউটের পূর্ণ সদস্য হওয়ার জন্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন দরকার, সেজন্য এ প্রস্তাব তোলা হয়েছিল। এটা কার্যকর হলে বাংলাদেশে টিকা উৎপাদন এবং এ সম্পর্কিত গবেষণা কাজে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা পাওয়া যাবে। এতে দেশের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে। টিকা উৎপাদন, প্রয়োগ ও মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও যুগোপযোগী হবে।’
আনোয়ারুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমাদের ফার্মাসিটিক্যালস উৎপাদন ও মান মোটামুটি মানসম্মত, যা বিশ্বে প্রমাণিত। সুতরাং আশা করছি খুব শিগগিরই বা দ্রম্নত এগুলো অর্জন করতে পারব। বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এটি আরও বেশি প্রয়োজন বলে অনুভূত হয়েছে।’
দেশীয় কোম্পানি গেস্নাব বায়োটেক করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘গেস্নাব বায়োটেক এখনো তো ট্রায়াল শেষ করেনি। এ বিষয়েও মন্ত্রিপরিষদ সভায় আলোচনা হয়েছে। তারা (গেস্নাব বায়োটেক) যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল মেনে করতে পারে, তাহলে তারা ট্রায়াল করবে, তারপর দেখা যাবে।’
আইভিআই এর চুক্তিতে অনুসমর্থন না করলে দেশে টিকা তৈরির ক্ষেত্রে কোনো বাধা ছিল কিনা এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এতে কোনো সমস্যা না। ধরুন ফাইজারের সঙ্গে যদি কেউ চুক্তি করে, অরজিনাল চুক্তিতো ফাইজারের। এখন ফাইজার যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে, তাদের সব প্রোটকল অনুযায়ী, তাহলে আর ওই চুক্তি লাগে না।
‘তবে নতুন করে বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান, যেমন গেস্নাব বায়োটেক যদি কোনো প্রডাক্ট এখান থেকে প্রডিউস (উৎপাদন) করতে চায়, তাহলে আমাদের চুক্তির অধীনে শর্ত মানতে হবে বলে তিনি জানান।
উলেস্নখ্য, ১৯৯৬ সালের ২৮ অক্টোবর ইউএনডিপির উদ্যোগে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে একটি আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার চুক্তি হয়, যেখানে বাংলাদেশও স্বাক্ষর করেছে।