ডেস্ক নিউজ
তৈরি পোশাক খাতের সব শ্রমিককে বীমা সুবিধার আওতায় আনা হচ্ছে। ইস্যুটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ ব্যাপারে সরকারেরও ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। শুরুতে এক লাখ ৫০ হাজার শ্রমিকের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে বীমা সুবিধা চালু হবে। তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি এই কার্যক্রম সফলভাবে শেষ হওয়ার পর সব পোশাক কারখানায় এটি চালু হবে।
আইএলও এবং সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার লক্ষ্যে শিগগিরই সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি হতে যাচ্ছে। এর লক্ষ্য হলো কেন্দ্রীয়ভাবে তহবিল সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু বা আহত হওয়ার ক্ষেত্রে এই বীমা ব্যবস্থা থেকে তাঁদের কিংবা পরিবারের সদস্যদের সহায়তা করা।
সূত্র জানায়, এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম (ইআইআই) নামে চালু হওয়া বীমায় প্রাথমিক অর্থায়ন আসবে ব্র্যান্ড ও বায়ারদের কাছ থেকে। পুরোদমে চালু হওয়ার পর এটির দায়িত্ব কারখানা মালিকদেরই নিতে হবে।
তবে বীমা চালুর বিষয়টি মেনে নিলেও এর অর্থায়নের উৎস নিয়ে দ্বিমত রয়েছে কারখানা মালিকদের। তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, ‘এটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা একটি ইস্যু। আমরা ধরে নিচ্ছি, বাংলাদেশ সরকার এই উদ্যোগকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানাতে যাচ্ছে। বীমা স্কিমের এই উদ্যোগে ব্র্যান্ড ও বায়ারদেরও অংশগ্রহণের অনুরোধ আমাদের। একই মনোভাব শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিদেরও।’
জানা গেছে, প্রতিবেশী ভারত ছাড়াও বাংলাদেশের প্রতিযোগী অনেক দেশেই কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত কিংবা আহত হওয়া শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সুরক্ষায় এ ধরণের বীমা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। একেক দেশে একেক নামে থাকলেও এসব বীমার অর্থায়ন ও তদারকি কেন্দ্রীয়ভাবেই হয়ে থাকে। এর অর্থায়নও সাধারণত কারখানা মালিকপক্ষই করে থাকে।
বাংলাদেশেও রানা প্লাজা ও তাজরীনের মতো দুর্ঘটনার পর এই ইস্যুটি সামনে আসে। তখন দেখা যায়, বেশির ভাগ শ্রমিকই বীমার আওতায় নেই। আবার বীমা দাবির টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রেও নানা রকম জটিলতা দেখা দেয়। হিসাব করে দেখা গেছে, এই বীমা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হলে ব্যয় হবে রপ্তানির ০.০১৯ শতাংশ টাকা বা প্রতি ১০০ টাকায় প্রায় দুই পয়সা।
দেশে বর্তমানে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা রপ্তানিমূল্যের ওপর ০.০৩ শতাংশ হারে সরকারের কেন্দ্রীয় তহবিলে টাকা দিচ্ছেন। এই টাকা থেকে নিহত শ্রমিকের পরিবারকে তিন লাখ টাকা করে দেওয়া হয়। অন্যদিকে দেশের শ্রম আইন অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে নিহত হওয়ার ক্ষেত্রে শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ দুই লাখ এবং কর্মহীন হওয়ার মতো আহত হলে আড়াই লাখ টাকা পায়। বর্তমান বাস্তবতা ও আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, এই টাকা খুবই অপ্রতুল। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত এক শ্রমিক প্রতিনিধি বলেন, এটি বাস্তবায়িত হলে শ্রমিকরা ভালো অঙ্কের আর্থিক সুবিধা পাবেন।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আব্দুস সালাম বলেন, ইস্যুটি নিয়ে আইএলওর সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে এখানে কার অংশগ্রহণ কেমন হবে, তা আলোচনায় আসা দরকার। মালিকপক্ষের সঙ্গেও বসতে হবে।
শ্রমিক নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, শিল্প দুর্ঘটনার কারণে বাংলাদেশে এ ধরনের বীমা চালু করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, ‘অন্য দেশে সাধারণত মালিকপক্ষই এটির ব্যয় বহন করে। তবে আমাদের বাস্তবতায় কারখানা মালিকের পাশাপাশি সরকার ও বায়ারদেরও এগিয়ে আসা উচিত।’