ডেস্ক নিউজ
চারা রোপণের এক মাস পর অনেকটাই দৃশ্যমান পরিষ্কার অবয়ব পেয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’। সমতলে বোঝা না গেলেও পাখির চোখে ঠিকই দৃশ্যমান হচ্ছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের অপেক্ষায় থাকা বিশ্বের সবচেয়ে বড় শস্যচিত্রটি। তবে পূর্ণতা পেতে আরও ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
মুজিব জন্মশতবর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে এবং কৃষিতে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে বগুড়ার শেরপুরে ১২০ বিঘা জমিতে দুই জাতের ধান লাগিয়ে ব্যতিক্রমী এই আয়োজন করা হয়েছে। শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রধান সমন্বয়ক ফয়জুল সিদ্দিকী জানান, ১২ লাখ ৯২ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে
ধানের জমিতে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে জাতির পিতার প্রতিকৃতি ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’। চারা রোপণের এক মাস পর সেটি ৮০ শতাংশ দৃশ্যমান হয়েছে। মার্চের মাঝামাঝিতে পুরোটাই ফুটে উঠবে। পাখির চোখে দুই হাজার মিটার ওপর থেকে দেখা মিলবে জাতির পিতার প্রতিকৃতি।
কৃষিবিদ ফয়জুল সিদ্দিকী জানান, শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের উদ্যোগে এবং ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ারের সহযোগিতায় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের লার্জেস্ট ক্রপ ফিল্ড মোজাইক (ইমেজ) শাখার নতুন রেকর্ড হবে এটি। বর্তমানে সেই রেকর্ডটি চীনের দখলে। ১৯১৯ সালে ৭৯ হাজার ৫০৫ দশমিক ১৯ বর্গমিটার আয়তনের জমিতে চার রঙের ধানের চারায় কাউ ফিশের ছবি ফুটিয়ে তুলে সাংহাইয়ের লেজিদাও ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিডেট ওই রেকর্ডটি গড়েছিল।
প্রকল্পে লিজ দেওয়া জমির মালিক আঁশগ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, এখানে তার ছয় বিঘা জমি রয়েছে। প্রথমে কিছুই জানতেন না। শুধু ৯ হাজার টাকায় ছয় মাসের জন্য জমিটি লিজ দেন। কিন্তু মাসদেড়েক আগে শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি তৈরির বিষয়টি জানতে পেরেছেন। এখন অনেক আনন্দ ও গর্ব হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমার জমির মধ্যেই বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনকের প্রতিকৃতি হচ্ছে। তা-ও বিশ্বের সবচেয়ে বড় হবে এটি। গিনেস বুকে স্থান পাবে। সেখানে বঙ্গবন্ধু, দেশ ও আমাদের এলাকার নামও উঠবে; যা কোনো দিন ভাবতেও পারিনি। স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।’
উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম আবুল কালাম আজাদ জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে তার ইউনিয়নের মাটিকে বেছে নিয়ে বিশাল আয়তনে যে চিত্রকর্ম করা হচ্ছে, সেটি তাদের গর্বের বিষয়। দেশ ও জাতির জন্য এটি হবে মুজিববর্ষের শ্রেষ্ঠ উপহার। এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। অজপাড়াগাঁয়ে এই ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে। আর খবরটি পত্রিকার মাধ্যমে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষও ছুটে আসছে। তারা এক নজর জাতির জনকের প্রতিকৃতি তৈরির কর্মযজ্ঞ দেখে নতুন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হচ্ছে।
চিত্রকর্মটি বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এই শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর আয়তন হবে ১২ লাখ ৯২ হাজার বর্গফুট। দৈর্ঘ্য ৪০০ মিটার এবং প্রস্থ হবে ৩০০ মিটার, যা হবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র। আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে এটি উদ্বোধন করা হবে। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শস্যচিত্রটির ভিডিওসহ সব দালিলিক কাগজপত্র গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো গিনেস বুকে স্থান পেয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে। জাতির জনকের জন্মশতবর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতেই কৃষি ও কৃষকের বঙ্গবন্ধুর বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রতিকৃতি তৈরির এই কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।’
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের বালেন্দা গ্রামের ১২০ বিঘা কৃষিজমি লিজ নিয়ে গত ২৯ জানুয়ারি ধানের চারা রোপণ শস্যচিত্রটি উদ্বোধন করা হয়। চীন থেকে আমদানি করা বেগুনি রঙের ধান এবং দেশীয় সবুজ জনকরাজ ধানের চারা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর অবয়ব দৃশ্যমান করা হচ্ছে। ধান পাকার পর গোঁফ, চোখ, চুল, ভ্রু খয়েরি আর অন্য অংশ সোনালি রঙের হবে। এসব কার্যক্রমে খরচ হবে প্রায় দেড় কোটি টাকা।