ডেস্ক নিউজ
চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি আরও নতুন মেগা প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ, পাতালরেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২, যমুনার তলদেশে টানেল, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকার শহরে সাবওয়ে নির্মাণ, ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, জাহাঙ্গীর গেট থেকে বেগম রোকেয়া সরণি পর্যন্ত ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস, বঙ্গবন্ধু শিল্পাঞ্চল থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো।
এ ছাড়া ভঙ্গুর স্বাস্থ্য খাতের জন্য ‘মেগা প্ল্যান’ নিচ্ছে সরকার। এ ক্ষেত্রে তিন বছরের মধ্যমেয়াদি এবং ১০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে। করোনাকালে একমাত্র আশার আলো দেখিয়েছে কৃষি খাত। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কৃষিকে। এ খাতের উন্নয়নে নতুন নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা খাত নিয়েও সরকারের রয়েছে মহাপরিকল্পনা। এ ছাড়া আইটি খাতের সক্ষমতা বাড়াতে কাজ চলছে। পরিবহন খাতের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।
এদিকে ৬৪ লাখ ৯৫ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৪০ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮ শতাংশ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অষ্টম পঞ্চমবার্ষিক পরিকল্পনায় ১ কোটি ১৩ লাখ ৩০ হাজার কর্মসংস্থানের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ৩২ লাখ ৫ হাজারের কর্মসংস্থান হবে বিদেশে। এই সময়ে দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ দশমিক ০১ মিলিয়ন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ দশমিক ১৩ মিলিয়ন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ দশমিক ২৬ মিলিয়ন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ দশমিক ৪১ মিলিয়ন ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২ দশমিক ৫২ মিলিয়ন মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে সরকার।
গ্রামাঞ্চলকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির কেন্দ্রীয় দর্শন হিসেবে নিয়েছে বর্তমান সরকার। এজন্য গত নির্বাচনী ইশতেহারের ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ নীতি অনুযায়ী নগর ও গ্রামের বৈষম্য দূর করতে কৃষি বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছানো, কুটিরশিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল পরিবর্তনে বেড়েছে বাজেট বরাদ্দ। এরই অংশ হিসেবে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূূহের কাজ দ্রুত শেষ করা; গ্রামীণ প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র উন্নয়ন, স্থানীয় পণ্যের বাজার তৈরি, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ও কৃষি ভ্যালু-চেইন প্রতিষ্ঠা এবং ই-কমার্স ব্যবস্থা প্রসারের লক্ষ্যে কৌশল ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যার মাধ্যমে ১০ মিলিয়ন লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদে সরকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মেয়াদে কিছু মেগা প্রকল্পে কাজ শেষ হবে এবং কিছু প্রকল্পের কাজ চলমান থাকবে। সেই সঙ্গে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে।
দ্বিতীয় পদ্মা সেতু : পাটুরিয়ায় হবে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু। সরকারের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী পদ্মা নদীতে আরেকটি সেতু নির্মাণ করা হবে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ নৌরুটে। সেতু বিভাগ জানিয়েছে, প্রথম সেতু চালুর পর দ্বিতীয় সেতুর বিষয়ে ভাবা হবে। তবে কাজ এগিয়ে রাখতে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের আগেই দ্বিতীয় পদ্মা সেতু প্রকল্পের চূড়ান্ত জরিপ প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় সরকার।
পাতালরেল : রাজধানীতে পাঁচটি রুটে হবে পাতাল মেট্রোরেল। রাজধানীতে চলমান মেট্রোরেলের কাজের সঙ্গে সমন্বয় করে পাতালরেলের কাজ হবে। পাঁচটি রুটের দুটি হবে ঢাকার পূর্ব-পশ্চিমে যোগাযোগের জন্য। প্রথমটি হচ্ছে ঢাকা উত্তরে। ২০২৮ সালের মধ্যে এর নির্মাণকাজ শেষ হবে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে ঢাকার দক্ষিণে। ১৭ দশমিক ৪০ কিলোমিটার পথে স্টেশন থাকছে ১৬টি। এ ছাড়া এমআরটি লাইন-২-এর আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে গাবতলী থেকে চট্টগ্রাম রোড পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড ও এলিভেটেড সমন্বয়ে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণ হবে।
২০২৩ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ : ২০২৩ সালের মধ্যে দেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ও ব্যবহার শুরু হবে। দ্বিতীয় স্যাটেলাইটটির ধরণ নির্ধারণে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২’-এর ধরন নির্ধারণের জন্য ফ্রান্সের প্রাইস ওয়াটারহাউস কুপার্সকে (পিডব্লিউসি) নিয়োগ দিয়েছে বিএসসিএল।
যমুনা টানেল : কর্ণফুলীর পর এবার যমুনা নদীর নিচ দিয়ে তৈরি হতে যাচ্ছে দেশের দ্বিতীয় টানেল। এরই মধ্যে প্রস্তুতি এগিয়েছে অনেক দূর। যমুনা বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলোর একটি। এটি ভারত থেকে সৃষ্টি হয়ে প্রথমে পদ্মা এবং পরে মেঘনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এ নদীর প্রশস্ততা অনেক বেশি। বর্ষাকালে এর প্রস্থ ৮ থেকে ১৩ কিলোমিটার হয়। এ নদী দিয়ে গড়ে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হয় এবং প্রায় ৬০০ মিলিয়ন টন পলি বহন হয়ে থাকে।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর : ২০১০ সালে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ৫০ হাজার কোটি টাকা প্রাথমিক ব্যয় ধরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রস্তাবে তিনটি রানওয়েতে প্রতিদিন যাত্রীবাহী ৪০০ ও কার্গোবাহী ২০০ ফ্লাইট ওঠানামার সুযোগ রাখা হয়েছে। এ বিমানবন্দরটির জন্য দরকার ৮ কিলোমিটার লম্বা ও ৫ কিলোমিটার চওড়া জায়গা। বিমান মন্ত্রণালয় বলছে, বিমানবন্দরের উপযুক্ত জায়গা বাছাইয়ে কয়েক হাজার পরিবার উচ্ছেদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এগোতে হচ্ছে।
ঢাকার ওপর চাপ কমাবে আউটার রিং রোড : ঢাকার ওপর গাড়ির চাপ কমাতে আউটার রিং রোড বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। আট লেনের বৃত্তাকার এ সড়কপথের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ১৩২ কিলোমিটার। দুটি পর্বে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম পর্বে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে কেরানীগঞ্জের মদনপুর পর্যন্ত আট লেনের ৪৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে বর্তমানে চার লেনের ১২ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে।
আকাশপথের উন্নয়ন : দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর যাত্রী ও কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতার মান ও পরিধি বৃদ্ধির অংশ হিসেবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ চলমান। কক্সবাজার ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। বাগেরহাটে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণসহ যশোর, সৈয়দপুর ও বরিশাল বিমানবন্দর এবং রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ ও নবরূপায়ণের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
মধ্যমেয়াদি ১০ প্রকল্প : মধ্য মেয়াদে ২০২১-২৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা নিয়ে আরও ১০ প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (২৫০ কিমি) নির্মাণ প্রকল্প। জাহাঙ্গীর গেট থেকে বেগম রোকেয়া সরণি পর্যন্ত ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস নির্মাণ (১.৬৫ কিমি)। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শিল্পাঞ্চল (মিরসরাই) থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও নির্মাণ।