ডেস্ক নিউজ
করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতির চাকা অনেকটাই মন্থর। এই চাকা সচল রাখতে সরকার আর্থিক প্রণোদনাসহ নীতি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এরপরও সব হিসাবনিকাশ ওলটপালট হয়ে গেছে। স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। নতুন বিনিয়োগ তেমন একটা আসছে না। পরিস্থিতি বিবেচনায় অর্থের প্রবাহ বাড়াতে ২০২১-২২ অর্থবছরে করপোরেট কর কমানো হতে পারে।
জানা গেছে, অর্থনীতিকে চাঙা করতে আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ঢালাওভাবে সব খাতে নয়, শুধু উৎপাদনশীল খাতের সঙ্গে জড়িত পুঁজিবাজারে তালিকাবহির্ভূত শিল্পে এ কর কমানো হতে পারে। একই সঙ্গে বিনিয়োগ বাড়াতে বাজেটে নানামুখী পদক্ষেপ থাকবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙা করতে বাজেটে ব্যবসায়ীদের জন্য থাকবে একগুচ্ছ সুখবর। এ ক্ষেত্রে করপোরেট কর কমানো, বিনিয়োগ চাঙা করা, রপ্তানিতে প্রণোদনা, আমদানি শুল্ক ছাড়সহ নানা সুবিধা রাখা হতে পারে।
এই বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটেও করপোরেট কর কমানোর কথা বিবেচনা করা হবে। পর্যায়ক্রমে করপোরেট কর কমিয়ে আনা হচ্ছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটেও তা কমানো হয়েছে। আগামী বাজেটেও বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। একই সঙ্গে দেশীয় শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা প্রয়োজন সবই করা হবে।’
জানা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে বর্তমানে সাড়ে ৩২ শতাংশ এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে বর্তমানের ২৫ শতাংশ হারে করপোরেট কর নেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, কোনো কোম্পানি ১০০ টাকা মুনাফা করলে তাকে ৩২ টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হয়। আর পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে শতকরা ২৫ টাকা দিতে হয়। কয়েকটি ক্ষেত্রে এই হার ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর তালিকাবহির্ভূত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ৪০ শতাংশ। মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। সিগারেট কোম্পানির করহার ৪৫ শতাংশ এবং মোবাইল অপারেটরদের ৪৫ শতাংশ করপোরেট কর দিতে হয়।
এর বাইরে বর্তমানে গ্রিন বিল্ডিং সার্টিফিকেশন আছে এমন তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানের করহার ১০ শতাংশ এবং গ্রিন বিল্ডিং সার্টিফিকেশন নেই এমন তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানের করহার ১২ শতাংশ। যা ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকার কথা। আর পাটকলে করপোরেট কর ১০ শতাংশ, বস্ত্র খাতে ১৫ শতাংশ।
করপোরেট কর কমানোর পক্ষে যুক্তি দিয়ে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ক্ষতি মোকাবিলা এবং উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়া ত্বরান্বিত করতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ দরকার। এ জন্য বিনিয়োগ উপযোগী পরিবেশ তৈরি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থের প্রবাহ বাড়াতে করপোরেট কর কমানো জরুরি। যা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াবে। তার মতে, সার্বিকভাবে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করতে করপোরেট কর কমানো একটি ভালো উপায়।’
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বড় প্রতিযোগী এখন ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ভারত ও মিয়ানমার। বহুজাতিক পরামর্শক সংস্থা কেপিএমজির তথ্য অনুযায়ী, ভিয়েতনামে করপোরেট কর ২০ শতাংশ। এর ওপর তারা বিশেষ বিনিয়োগ প্রকল্পে বিশেষ ছাড় দেয়। থাইল্যান্ডে করপোরেট কর ২০ শতাংশ, মিয়ানমারে ২৫ শতাংশ, ভারতে ২২ শতাংশ এবং নতুন উৎপাদনশীল খাতের জন্য ১৫ শতাংশ।