ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির এক বছর পর ১৪টি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য দুই মাসের বিশেষ প্রণোদনা বরাদ্দ দিয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বাজেট শাখা। ১ হাজার ৪৭৪ জন চিকিৎসক, ৪০৬ জন নার্স ও ৯৮১ জন অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী এই প্রণোদনা পাবেন। টাকার অঙ্কে এই প্রণোদনার পরিমাণ ১৫ কোটি ২৭ লাখ ৬৪ হাজার ৯০২ টাকা।
এর আগে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে দুই দফায় চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত মোট ৪ হাজার ২৩২ ব্যক্তির সম্মানী বাবদ ২৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা ছাড় করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। মোট ২৮টি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নামে অর্থ ছাড় করেছে অর্থ বিভাগ। তাঁদের মধ্যে চিকিৎসক ১ হাজার ৮৮০ জন, নার্স ৮৪৫ জন এবং স্বাস্থ্যকর্মী ১ হাজার ৫০৭ জন।
প্রসঙ্গত, গতকাল পর্যন্ত করোনায় দেশে চিকিৎসক মারা গেছেন ১৩৯ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৯১০ জন চিকিৎসক।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী এ প্রণোদনা পাবেন। তবে আউটসোর্সিং বা অন্য কোনোভাবে নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এ প্রণোদনা দেওয়া হবে না।
এ ছাড়া প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা, টেলিফোন অপারেটর, অফিস সহকারী, কম্পিউটার অপারেটর, হিসাবরক্ষক, গাড়িচালক, ইলেকট্রিশিয়ান, মুয়াজ্জিন, মেকানিক, স্টেনোটাইপিস্ট, স্টোরকিপার, মালি, অফিস সহায়কেরা এই প্রণোদনা পাবেন না।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ইহতেশামুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এক বছর পর প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। তা–ও আবার অর্থ বিভাগ যে টাকা বরাদ্দ দিয়েছে, তার অর্ধেক। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল প্রণোদনা সবাই পাবেন, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে নানা হিসাব-নিকাশ করে এই প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ১৪টি হাসপাতালের মধ্যে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ১৭২ জন চিকিৎসক, ৩৩৯ নার্স ও ৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী; পিরোজপুর জেলা সদর হাসপাতালের ২০ জন চিকিৎসক, ৩৫ জন নার্স ও ৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী; মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতালের ৫৪ চিকিৎসক ও ২৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী; মিরপুরের মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের ৯৪ চিকিৎসক ও ৩৪ স্বাস্থ্যকর্মী; সিরাজগঞ্জের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুনন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের ৬০ জন চিকিৎসক ও ১৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী; দিনাজপুরের আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজের ১০৮ চিকিৎসক ও ৭৪ স্বাস্থ্যকর্মী; রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৯৭ জন চিকিৎসক ও ২০৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী; কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৬ জন চিকিৎসক; বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের ১৬৫ চিকিৎসক ও ৩১০ স্বাস্থ্যকর্মী; রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৮০ জন চিকিৎসক ও ১৪১ জন স্বাস্থ্যকর্মী; সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০৯ চিকিৎসক ও ১৩৯ জন স্বাস্থ্যকর্মী; বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের ৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী; শহীদ শামসুদ্দিন আহমেদ হাসপাতালের ৬৬ জন চিকিৎসক, ১৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী এবং সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের ২৩ চিকিৎসক, ৩২ জন নার্স ও ৭ জন স্বাস্থ্যকর্মীর নামে প্রণোদনা বরাদ্দ হয়েছে।
২০২০ সালের ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ভিডিও কনফারেন্সে বলেছিলেন, ওই বছরের মার্চ থেকে যাঁরা কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করছেন, সরকার তাঁদের উৎসাহ দিতে বিশেষ প্রণোদনা দেবে। সেই বরাদ্দ দেওয়া হলো ৭ এপ্রিল।
কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীদের সেবায় সরাসরি কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্য কর্মচারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে ২৩ এপ্রিল একটি পরিপত্র জারি করে অর্থ বিভাগ। সেটি অনুসরণ করেই প্রণোদনা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে।