নিউজ ডেস্ক:
ধর্ষণ থামছেই না। একের পর এক ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন নারী। বাদ পড়ছে না শিশুরাও। দিন দিন তা বাড়ছে তো বাড়ছেই। নৃশংস ও অভিনব কায়দায় ধর্ষণ ও গণধর্ষণ করে চলছে দুর্বৃত্তরা। এ বছর (জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত) প্রথম ছয় মাসেই সারাদেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৩১ জন নারী ও শিশু। যাদের মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ২৬ জনকে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, সারা দেশে গত পাঁচ বছরে (২০১৪-২০১৮ সাল) নির্যাতনের শিকার হয়েছে পাঁচ হাজার ২৭৪ নারী ও কন্যাশিশু।
এই সময়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তিন হাজার ৯৮০ জন, গণধর্ষণের শিকার হন ৯৪৫ জন, ধর্ষণের কারণে মৃত্যু হয়েছে ৩৪৯ জনের, আর ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৭৩০ নারী-শিশুকে।
উদ্বেগজনক তথ্য হলো, গত পাঁচ বছরে যে সংখ্যক নারী-শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সেই সংখ্যার প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ দুই হাজার ৮৩ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতিত হয়েছেন গেল ছয় মাসে (জানু-জুন)। এই সময়ে সারা দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৩১ জন নারী ও শিশু। যাদের মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ২৬ জনকে।
এ ছাড়া এসিড সন্ত্রাস, যৌতুক, পাচার, শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা তো ঘটছেই। দুঃখজনক হলেও সত্য- দেশব্যাপী ক্রমবর্ধমান এসব নির্যাতনের ঘটনার বিচার হয়েছে মাত্র তিন থেকে চার শতাংশ। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী এক বাক্যে বলা যায়, সারা দেশে আশঙ্কাজনক হারে নারী ও শিশুদের উত্ত্যক্তকরণ ও যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যাসহ বাড়ছে নির্যাতনের ঘটনাও।
সোমবার সকালে ‘বর্তমান জাতীয় পরিস্থিতি, অব্যাহত নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদ ও সামাজিক নিরাপত্তা’র দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভয়াবহ এ তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আয়েশা খানম।
রাজধানীর সেগুনবাগিচার সুফিয়া কামাল ভবন মিলনায়তনে এ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি যৌন নিপীড়নসহ সব ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধ করা, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়েশিশুদের সমঅধিকার নিশ্চিত করা, উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, হত্যা ও নিপীড়ন রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলাসহ সম্মেলনে সংস্থাটির পক্ষ থেকে ৩২টি সুপারিশমালাও তুলে ধরা হয়।
সম্মেলনে মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, লিগ্যাল এইডের পরিচালক মাকসুদা আক্তার লাইলীসহ কেন্দ্রীয় কমিটির অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
সংস্থাটির সভাপতি আয়েশা খানম জানান, গতবছর সারা দেশে ৯৪২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয় ৬৩ জন নারী ও শিশুকে। অর্থাৎ গতবছর যে পরিমাণ ধর্ষণ হয়েছে তার অর্ধেক সময়ে এ বছর ধর্ষণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় দেড়গুণ। এমন বাস্তবতায় বর্তমান জাতীয় পরিস্থিতি, অব্যাহত নারী-শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদ ও সামাজিক নিরাপত্তার দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে দেশে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণ ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিষয়ে উদ্বেগ্ন মহিলা পরিষদ। সরকারের কাছে যে সুপারিশমালা তিনি তুলে ধরেছেন সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- সব ক্ষেত্রে পুত্র-কন্যার সমান অধিকার নিশ্চিত করা, সব ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা, নারী নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করা, বিচার কাজের সঙ্গে জড়িত সবার প্রশিক্ষণ সূচিতে নারীর মানবাধিকার নিয়ে বিস্তারিত তথ্য যুক্ত করা।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের উদাহরণ তুলে ধরে আয়েশা খানম বলেন, ‘এখনো বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুকেই প্রমাণ করতে হয় যে সে ধর্ষণের শিকার। অথচ বিশ্বের অনেক দেশে অভিযুক্তকে প্রমাণ করতে হয় যে সে ধর্ষণ করেনি। বাংলাদশের আইনেও এই পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেছে মহিলা পরিষদ। সেইসঙ্গে কোনো পরিস্থিতিতেই ১৮ বছরের আগে বিয়ে নয়, এমন প্রচারণার সুপারিশ জানায় তারা। এ ছাড়া প্রজাতন্ত্রের প্রতিটি স্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, প্রশাসনকে দল নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা, কোনো অপরাধীকেই রাজনৈতিক আশ্রয় না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।’
তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের আমরা ভয়ে অ্যাকুরিয়ামের মধ্যে রেখে দিচ্ছি, তাদের এতোটাই নিরাপদে রাখতে চাইছি যে তারা স্বাভাবিকভাবে বড়ই হতে পারছে না। অথচ বাচ্চারা তো প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াবে। কিন্তু সেই পরিবেশটা তাদের দিতে পারছি না। অন্যদিকে পরিবারেও তারা নিরাপদ না। মামা, চাচা, ফুফা কারও কাছেই নিরাপদ না। এটা কেন হবে? কেন সমাজের এই পরিবর্তন?’