ডেস্ক নিউজ
দারিদ্র্য বিমোচনে রোড মডেল বিবেচনা করা হচ্ছে বাংলাদেশকে। তবে করোনার কারণে গত দুই বছরে দারিদ্র্যের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বিষয়টি মাথায় রেখেই দারিদ্র্য বিমোচনে থাকছে বিশেষ নজর। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জাতিসংঘ ঘোষিত মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) অর্জনে দক্ষতার পরিচয় দিতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। দারিদ্র্যের হার ২০০৫ সালের ৪০ শতাংশ থেকে ২০২১ সালে ২১ শতাংশে নেমে আসে। এ ছাড়া ওই সময় অতিদারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশ থেকে নেমে ১১ শতাংশে দাঁড়ায়। করোনা মহামারী শুরু হলে গত এক বছরে দারিদ্র্যের সংখ্যা বাড়তে থাকে। নতুন করে দেশে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়েছে বলে বেসরকারি একটি গবেষণায় উঠে এসেছে।
মহামারীর অর্থনৈতিক প্রতিঘাতে দুই বছরের মধ্যে দেশের দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ বেড়ে ৪২ শতাংশ হয়েছে বলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) জরিপে উঠে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। সানেমের গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৮ সালে দারিদ্র্যের হার ২১ দশমিক ৬০ শতাংশে নেমেছিল। কিন্তু ২০২০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরের গবেষণা বলছে, দারিদ্র্যের হার বেড়ে ৪২ শতাংশ হয়েছে। এজন্য আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে দারিদ্র্য বিমোচনে থাকছে বিশেষ নজর।
‘দারিদ্র্য বিমোচনে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে পারে বাংলাদেশ’- এটি পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী মার্কিন সাংবাদিক নিকোলাস ক্রিস্টোফের মন্তব্য। নিউইয়র্ক টাইমসে তিনি লিখেছেন, বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ক্রমাগত বাড়ছে এবং বর্তমান মহামারীর আগে চার বছর ধরে অর্থনীতি প্রতি বছর সাত থেকে আট শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা চীনের চেয়েও দ্রুততর। ক্রিস্টোফ লিখেছেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ‘দারিদ্র্য বিমোচনের অনুপ্রেরণার আখ্যান’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। ১৫ বছরে আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছেন। কিন্তু বৈশি^ক মহামারী তা দ্বিগুণ করে দিয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বাজেটে থাকবে বেশকিছু কর্মসূচি।
করোনার কারণে রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ায় আগামী অর্থবছরের ব্যয় মিটাতে বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো হবে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ হবে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা। করোনার কারণে কাজ হারিয়ে যারা দরিদ্র হয়েছেন তাদের অর্থনীতির মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, আগামী বাজেটে গরিবদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তাদের জীবন-জীবিকার জন্য জায়গা করে দেওয়ার পদক্ষেপ থাকবে নতুন বাজেটে।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে গরিবদের এই অবস্থা থেকে বের করে নিয়ে আসা। যারা অতিরিক্ত গরিব আছেন, তারা গরিব হবেন এবং যারা গরিব আছেন তাদের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসব। সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক জরিপে সম্প্রতি দেশে নতুন করে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষের দরিদ্র হওয়ার তথ্য প্রকাশ করা হয়। ওই তথ্য অনুযায়ী গত বছর ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ বস্তিবাসী শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যান, যাদের ৯ দশমিক ৮ শতাংশ এখনো ফেরেনি। প্রাক-কোভিড সময়ের তুলনায় শহরের বস্তিবাসীর আয় কমলেও খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় গত জুনের তুলনায় এ বছরের মার্চে দ্বিগুণ হয়েছে। ভাড়া বাড়িতে থাকা অধিকাংশ শহুরে দরিদ্রের জন্য এটি নির্মম বাস্তবতা। সবার সঞ্চয় কমেছে আশ্চর্যজনকভাবে। অরক্ষিত অদরিদ্র এবং দরিদ্র নয় এমন শ্রেণির মানুষের সঞ্চয়ের পরিমাণ কোভিড-পূর্ববর্তী অবস্থার চেয়ে নিচে নেমে গেছে।
জানা গেছে, আগামী ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে দারিদ্র্য ১২ দশমিক ৩০ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৪ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা ছিল বর্তমান সরকারের। এজন্য দারিদ্র্য বিমোচন এবং বৈষম্য হ্রাসকরণে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল প্রণয়ন করা হয়। দারিদ্য বিমোচনে সামাজিক সুরক্ষায় সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজেও এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি কর্মসূচি রয়েছে। এর বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে অ্যাকশন প্ল্যান ২০১৬-২১ অনুমোদিত হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে আবার বাড়তে শুরু করেছে দারিদ্র্য মানুষের সংখ্যা।
সূত্রমতে, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বিদেশি ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থা এবং চীন-ভারতের মতো দ্বিপক্ষীয় অংশীদারদের সঙ্গে প্রতিবছর ঋণচুক্তির মাধ্যমে টাকা আনা হয়। এবার বিদেশি ঋণের এই অর্থ দারিদ্র্য বিমোচন সংক্রান্ত প্রকল্পগুলোয় ব্যয় করা হবে। বিদেশি টাকা খরচ করতে এখনো দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে আরও দক্ষ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এই প্যাকেজে দরিদ্রদের খাদ্য বিতরণ, নগদ সহায়তা, ঋণ বিতরণ, কর্মসংস্থান, চিকিৎসা, গৃহ নির্মাণসহ একাধিক কর্মসূচি রয়েছে।