ডেস্ক নিউজ
কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘ যুক্ত হতে যাচ্ছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাসহ এর বিভিন্ন সংস্থা কীভাবে ভাসানচরের কাজের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে, তা মাসখানেকের মধ্যে চূড়ান্ত হতে পারে। সবকিছু ঠিকঠাক হলে মাস দুয়েকের মধ্যে ভাসানচরে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে জাতিসংঘ যুক্ত হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ।
গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছেন। ভাসানচরের জাতিসংঘের যুক্ততার বিষয়ে ২৩ মে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে তাঁর দপ্তরে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) দুই সহকারী হাইকমিশনার চার দিনের সফরে আগামীকাল রোববার বাংলাদেশে আসছেন। ৩১ মে তাঁরা ভাসানচর দেখতে যাবেন। রোহিঙ্গাদের ভাসানচরের সরিয়ে নেওয়ার পর ইউএনএইচসিআরের সদর দপ্তরের কোনো প্রতিনিধিদের এটাই প্রথম ভাসানচর সফর।
ঢাকায় জাতিসংঘের একটি সূত্র আজ শনিবার প্রথম আলোকে জানিয়েছে, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার পরিচালনাবিষয়ক সহকারী হাইকমিশনার রাউফ মাজাও এবং সুরক্ষাবিষয়ক হাইকমিশনার গিলিয়ান ট্রিগস চার দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন।
বাংলাদেশ সফরের সময় জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার ওই দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ভাসানচরের পাশাপাশি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে দেখবেন। তাঁরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বাংলাদেশের কর্মকর্তা এবং দেশি-বিদেশি অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ভাসানচরে জাতিসংঘের ইউএনএইচসিআর দুই সহকারী হাইকমিশনারের সেখানে যাওয়াটা তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, মার্চে ভাসানচর ঘুরে এসে জাতিসংঘের কারিগরি দলটি ইতিবাচক মনোভাব জানিয়ে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে। এমনকি গত সপ্তাহে সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় এসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি ভলকান বজকির ভাসানচর প্রকল্পের প্রশংসা করে গেছেন। যদিও তিনি ভাসানচর যাওয়ার সুযোগ না পেলেও সেখানকার অবকাঠামোসহ সামগ্রিক প্রকল্প নিয়ে একটি ভিডিও দেখার পর গণমাধ্যমের কাছে ওই প্রতিক্রিয়ার কথা জানান।
ভাসানচরে জাতিসংঘের কার্যক্রম কখন শুরু হবে, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, ভাসানচরে জাতিসংঘ কখন কীভাবে যুক্ত হবে, তা ঠিক করতে ত্রাণসচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। জাতিসংঘ এবং সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সঙ্গে কথা বলে ওই কমিটি একটি সুপারিশ জমা দেবে। প্রাথমিকভাবে কমিটিকে এক মাসের মধ্যে সুপারিশ জমা দিতে বলা হয়েছে। এর ভিত্তিতে মুখ্য সচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটি জাতিসংঘের ভাসানচরে যুক্ততার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। আশা করা যাচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব জাতিসংঘ ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার কাজে যুক্ত হবে।
গত বছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ছয় দফায় মিয়ানমারের প্রায় ১৮ হাজার সংখ্যালঘু মুসলমানকে ভাসানচরে নেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্রসচিব জানিয়েছেন, বৃষ্টি শুরু হয়ে যাওয়ায় আপাতত রোহিঙ্গাদের আর ভাসানচরে নেওয়া হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, সেপ্টেম্বরের পর বর্ষা শেষ হয়ে গেলে লক্ষ্য অনুযায়ী এক লাখ রোহিঙ্গাকে নেওয়ার কাজ পুরোদমে শুরু হবে।
থমকে গেছে প্রত্যাবাসন
দুই দফা প্রত্যাবাসনের চেষ্টা বিফলে যাওয়ার পর দুই দেশ আর প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়নি। যদিও দ্বিপক্ষীয় চেষ্টা বিফলে যাওয়ার পর ঢাকঢোল পিটিয়ে চীন ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু রাখাইনের পরিবেশের এমন কোনো পরিবর্তন হয়নি, যা রোহিঙ্গাদের আদি নিবাসে ফিরতে উৎসাহিত করে। আবার মিয়ানমারও প্রত্যাবাসনে আগ্রহী নয়। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে সামরিক শাসন শুরু হলে পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে গেছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। গত সপ্তাহে মিয়ানমারের সামরিক শাসক জেনারেল মিন অং হ্লাইং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যে শিগিগরই হবে না, আবার সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। এমন এক অবস্থায় বাংলাদেশের অপেক্ষা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
এ নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নড়বড়ে বলে চীনের কাছ থেকে নতুন কিছু পাইনি। তারা আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছে। ফলে ত্রিপক্ষীয় প্রক্রিয়ায় সময় লাগবে। আর দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়ার বিষয়ে সরাসরি ঢাকায় মিয়ানমারের দূতাবাসের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছি। এখন সমস্যা হল দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়ায় যে সব কমিটি এবং কমিটিতে যাঁরা ছিলেন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে তাতে কিছু পরিবর্তন আসবে। তাই বাংলাদেশ চাইলেই আর আগের প্রক্রিয়ায় আলোচনায় বসা যাবে না। তবে বাংলাদেশ যেকোনো মুহূর্তে আলোচনায় বসতে রাজি আছে। তবে বাংলাদেশ একা চাইলেই তো আলোচনা শুরু করা যাবে না, মিয়ানমারকেও বসতে হবে।’