ডেস্ক নিউজ
মহামারী করোনায় দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে করোনার প্রকোপ বাড়া ও কয়েক দফা লকডাউনের কারণে নিম্নআয়ের মানুষ কাজ হারিয়ে নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন। মধ্য ও নিম্নআয়ের মানুষের আয়-উপার্জন কমে যাওয়ায় সামষ্টিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়েছে। কিন্ডারগার্টেন, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এ খাতে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় সামাজিক সুরক্ষায় বাড়ানো হচ্ছে নিরাপত্তা জাল। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষকে এই সুবিধার আওতায় আনা হচ্ছে। এর বাইরে শিক্ষা কার্যক্রম বিস্তারে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে সরাসরি উপবৃত্তি দেওয়া হবে ৮০ লাখ ছাত্রছাত্রীকে। এ ছাড়া করোনার ক্ষতি মোকাবিলায় নগদ সহায়তা পাবেন আরও ৫০ লাখ মানুষ। এ লক্ষ্যে আসন্ন বাজেটে এ খাতে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চলতি বাজেটে এ খাতের বরাদ্দ ৯৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। দেশের সবচেয়ে দারিদ্র্যপ্রবণ ১৫০ উপজেলায় বিশেষ নজর দেওয়া হবে। সামাজিক সুরক্ষায় নির্ধারিত ১২৩ কর্মসূচি বাস্তবায়ন হবে ৩০ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। স্বচ্ছতা নিশ্চিত এবং দুর্নীতি হ্রাসে বেশির ভাগ উপকারভোগীরা টাকা পাবেন মোবাইল ব্যাংকে।
সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীরা খাদ্য সহায়তা, নগদ ভাতা, চিকিৎসা সহায়তা, শিক্ষা সরঞ্জাম, থাকার জন্য পাকা ঘর, গভীর নলকূপ স্থাপন, স্যানিটেশন এবং গ্রামীণ প্রকল্প থেকে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ এবং দারিদ্র্র্য নির্মূলে অস্থায়ীভাবে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে এদের।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির যারা সুবিধাভোগী, তাদের বাইরে অসংখ্য মানুষ রয়েছে নিম্ন ও গরিব। তাদের দেওয়া হবে স্বল্প ও বিনামূল্যে খাদ্য। বিষয়টি আগামী বাজেটে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে ১০ টাকা মূল্যে খাদ্য, কাবিখা, টিআর, ভিজিডি, ভিজিএফ, ওএমএসের সুবিধা দেওয়া হবে। এসব কর্মসূচির সুবিধাভোগীর সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে। অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকছে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উৎপাদন পর্যায়ে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, সেচ ও বীজে প্রণোদনা, কৃষি পুনর্বাসন ও সারের ভর্তুকি দেওয়া।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বেশিসংখ্যক মানুষকে নিয়ে আসা হবে। বাজেটে ধারাবাহিকভাবে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় কর্মসূচি ও বরাদ্দ বাড়ানো হবে।
কোভিড-১৯ সংকট মাথায় রেখে চলতি অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়, যা মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। দারিদ্র্য বিমোচন ও গ্রামীণ কর্মসংস্থানের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা করার বরাদ্দ দেওয়া হবে।
কোভিড ১৯-এর কারণে নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে বেশি আঘাত এসেছে। এ জন্য নতুন বাজেটে ১৫০ উপজেলায় সব বয়স্ক ব্যক্তিকে ভাতার আওতায় আনা হবে। বর্তমানে ১১২ উপজেলার প্রত্যেক বয়স্ক ব্যক্তিই ভাতা পাচ্ছেন। পাশাপাশি ১৫০ উপজেলায় প্রত্যেক বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তাকে ভাতার আওতায় আনা হচ্ছে। এতে সুবিধাভোগী ২০ লাখ ৫০ হাজার থেকে বেড়ে ২৪ লাখ ৭৫ হাজারে দাঁড়াবে। এ জন্য বরাদ্দ থাকছে ১ হাজার ২৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চলতি বাজেটে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে বরাদ্দ আছে ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। আগামী বছর আরও যারা কর্মসূচির আওতায় আসছেন, এর মধ্যে রয়েছে ১৮ লাখ অসচ্ছল প্রতিবন্ধী। এ ছাড়া ৭ লাখ ৭০ হাজার দরিদ্র মায়ের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা, পৌনে তিন লাখ ল্যাকটেটিং মা। আরও ভাতা পাবেন মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। এ বছর নতুন করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ওই তালিকা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধার প্রকৃত সংখ্যা কমে আসবে। চলতি বছর ২ লাখ মুক্তিযোদ্ধা পাচ্ছেন এ ভাতা। নতুন বছরে সেটি আরও কমে আসবে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার পরিমাণ ১২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে।
নতুন বাজেটে হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মানোন্নয়নে সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হবে। বর্তমানে ৮৬ হাজার জনকে এ ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আসন্ন বাজেটে এ ভাতা দেওয়া হবে ৯৫ হাজার জনকে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আসছেন সড়ক ও নৌ পরিবহন শ্রমিকরা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে গণপরিবহন ও নৌ পরিবহন বন্ধ ছিল। ফলে এসব যানবাহনে কর্মরত ড্রাইভার, হেলপার ও সুপারভাইজারদের আয়ের পথ বন্ধ ছিল। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সড়ক ও নৌ খাতের পরিবহন শ্রমিকদের নগদ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ খাতের শ্রমিকদের ২ হাজার ৫০০ টাকা করে নগদ সহায়তা দেওয়া হবে। এ জন্য আগামী বাজেটে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে ৩৫ লাখ কর্মহীন দরিদ্রকে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ৩৫ লাখের মধ্যে পরিবহন শ্রমিকও রয়েছেন। তাদের বাদ দিয়ে বাকি পরিবহন শ্রমিকদের তালিকা জেলা প্রশাসকদের কাছে চাওয়া হয়েছে। তালিকা পাওয়ার পর মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের মাধ্যমে এ সহায়তা দেওয়া হবে।
সিপিডির ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনার কারণে দেশের দরিদ্রের হার যেমন বড়েছে, তেমনি সরকারেরও বিভিন্ন উৎস থেকে কর আদায় আশানুরূপ হয়নি। ফলে সরকারকে উচ্চবিত্তদের কাছ থেকে বেশি পরিমাণে কর আদায় করে দরিদ্রদের মধ্যের নগদ সহায়তা হিসেবে দিতে হবে।