ডেস্ক নিউজ
করোনার বছরেও উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার তৃতীয় বাজেট। আগামীকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থান করা হবে।
করোনার বছরেও ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ হতে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য থাকছে। সব মিলিয়ে বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার বাজেটকে সামাজিক অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো, সাধারণ সেবা এবং সুদ-ভর্তুকি-ঋণ প্রদানের আওতায় মোট চারটি বৃহত্তর খাতে বিভক্ত করে অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হবে।
করোনা ভাইরাসের প্রভাব বিবেচনায় আগামী বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হবে স্বাস্থ্য খাতে। এর পরেই অগ্রাধিকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, সেচ ও বীজে প্রণোদনা, কৃষি পুনর্বাসন ও সারে ভর্তুকি প্রদান, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে।
সেই সঙ্গে শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নসহ সার্বিক মানবসম্পদ উন্নয়ন, পল্লি উন্নয়ন ও কর্মসৃজন, সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতা সম্প্রসারণ, গৃহহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য গৃহনির্মাণ এবং নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচিতে অগ্রাধিকার থাকছে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এবারের বাজেট অধিবেশনও সংক্ষিপ্ত করা হচ্ছে।
বাজেটের যে আকার নির্ধারণ করা হচ্ছে, সেটি দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৭ দশমিক ৫ শতাংশের সমান। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা জিডিপির হিসাবে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের বাজেটে যে ঘাটতি ছিল, সেটি জিডিপির ৬ শতাংশের সমান। সে হিসাবে এবার বাজেট ঘাটতির আকার বড় হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, টাকার অঙ্কে প্রতি বছরই বাজেটের আকার বাড়ছে। কিন্তু করোনার এই বিশেষ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের আয় কমে গেছে। সেই সঙ্গে কমেছে মানুষের ভোগব্যয়। এখন জোর দিতে হবে মানুষের কর্মসংস্থানে। সাধারণ মানুষের আয় বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের দুর্বলতাগুলো কাটাতে বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন।
কাল বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী বাজেটে মোট আয়ের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে মোট আয়ের বা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য মোট রাজস্বের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আদায় করতে হবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া এনবিআর-বহির্ভূত অন্যান্য খাত থেকে আদায় করার লক্ষ্য রয়েছে ৫৯ হাজার কোটি টাকা। করোনার এই সময়ে রাজস্ব আদায় লক্ষ্য অনুযায়ী হচ্ছে না, ফলে আগামী বাজেটে ব্যয় নির্বাহে ঋণ গ্রহণে চাপ বাড়বে।
এডিপি: বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে এডিপির আকার চূড়ান্ত করা হয়েছে।
ঘাটতি: এবারের বাজেটে ঘাটতির আকার অন্য সব বছর থেকে ছাড়িয়ে যাবে। বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। অর্থাত্, প্রায় উন্নয়ন কর্মসূচির সমান ঘাটতি পূরণ করতে হবে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় ঘাটতির আকার ৬ দশমিক ২ শতাংশের সমান। করোনা ভাইরাসের এই সময়ে বাজেট ঘাটতির আকার গত বছরই ৬ শতাংশের ওপরে ধরা হয়েছিল। কিন্তু ব্যয়ের সক্ষমতা কম থাকায় ঘাটতির আকার শেষ পর্যন্ত কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘাটতি পূরণে আগামী অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে সরকার ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে যাচ্ছে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। আর জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য থাকছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য খাত থেকে নেওয়া হবে ৫ হাজার কোটি টাকা। বাকি অর্থ বিদেশি উৎস থেকে সংগ্রহ করার লক্ষ্য রয়েছে।
ব্যবসায়ীদের জন্য কর ছাড়: করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিকে গুরুত্ব দিয়ে গতবারের মতো এবারও ব্যবসায়ীদের কিছু ছাড় দেওয়া হতে পারে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করহার বিদ্যমান সাড়ে ৩২ শতাংশ থেকে আড়াই শতাংশ কমে ৩০ শতাংশ হতে পারে। একক ব্যক্তির কোম্পানিকে উৎসাহিত করতে করহার আরো কমে হতে পারে-২৫ শতাংশ। এর বাইরে অন্যান্য কোম্পানির ক্ষেত্রে করহার অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এছাড়া খুবই কম হারে মুনাফা তথা মূল্য সংযোজন হয় এমন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের (সাধারণ ডিলার, পাইকার ইত্যাদি) আয়কর ও ভ্যাটের হারে পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যবসাবান্ধব করা হতে পারে। উৎপাদনশীল খাতে শিল্পের কাঁচামালের বিদ্যমান আগাম কর (অ্যাডভান্স ট্যাক্স বা এটি) কমতে পারে। কমতে পারে ভ্যাট ফাঁকির জরিমানার হারও। অন্যদিকে নানা সমালোচনা সত্ত্বেও কিছু পরিবর্তন করে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগও থাকছে।