ডেস্ক নিউজ
সময়ের সঙ্গে দেশে গ্যাসের চাহিদা ও জোগানে তৈরি হচ্ছে বড় ধরনের পার্থক্য। নিজস্ব গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে আসায় এ সংকট আরও প্রকট হচ্ছে। শিল্প ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে বিদেশ থেকে ব্যায়বহুল এলএনজি গ্যাস এনে। এমন পরিস্থিতিতে অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদের পাশাপাশি বৈধ গ্রাহকদের গ্যাস ব্যবহারে সাশ্রয়ী করার উদ্যোগ নিয়েছে জ¦ালানি বিভাগ। দীর্ঘদিন ধরে ঢিমেতালে চললেও এখন সেটা দ্রুতই কার্যকর করতে চায় সরকার। যাচ্ছেতাই গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে অপচয় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনাই এখন লক্ষ্য। এর জন্য ২০২৩ সালের মধ্যে ৪২ লাখ গ্রাহককে আনা হবে মিটারের আওতায়। এতে করে বিশাল পরিমাণ গ্যাসের অবৈধ ব্যবহার কমে আসবে বলেই মনে করছেন জ¦ালানি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এ বিষয়ে জ¦ালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ‘গ্যাসের
ব্যবহার একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে কাজ করা হচ্ছে। একদিকে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে জোরালো পদক্ষেপ নিতে বলা হচ্ছে বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের, অন্যদিকে সারাদেশে প্রায় ৪২ লাখ গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনতে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে মিটার লাগানোর পর গ্রাহকদের আঙ্গীনায় নিয়মিত টাস্কফোর্স পরিচলানা করে দেখা হবে, কেউ অবৈধ ব্যবহার করছে কিনা। অবৈধ ব্যবহার পেলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দেশের সবচেয়ে বড় বিতরণ কোম্পানি তিতাস সূত্রে জানা যায়, গ্যাসের অপচয় এবং সিস্টেমলস রোধে ইতোমধ্যে রাজধানীতে দুই লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপন শেষ করেছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল)। এ ছাড়া আরও ১ লাখ ৩০ হাজার মিটার স্থাপনের কাজ চলমান। পাশাপাশি নতুন করে আরও দুটি প্রকল্পের আওতায় ১৩ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় সরকারি অনুমোদন শেষে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে, যার অর্থায়নে সহায়তা করবে এডিবি ও জাপান।
তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আলী ইকবাল মোহাম্মদ নুরুল্লাহ আমাদের সময়কে বলেন, ‘একদিকে আমরা চেষ্টা করছি সব ধরনের অবৈধ গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করতে, অন্যদিকে প্রিপেইড মিটার বসিয়ে অপচায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে। এর মধ্যে তিতাস চেষ্টা করছে যৌথভাবে একটি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে গ্যাসের মিটার দেশেই উৎপাদন করে সেটা গ্রাহকদের সরবরাহ করতে, যাতে সময়ও কম লাগবে একই সঙ্গে সাশ্রয়ীও হবে।’
তিতাসের প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ‘ইনস্টল অব প্রিপেইড গ্যাস মিটার ফর টিজিটিডিসিএল’-এর আওতায় মূলত দুই লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। এ প্রকল্পের সম্প্রসারণ করে দ্বিতীয় ধাপে প্রিপেইড মিটার প্রকল্পে ৩৫৫ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়, যা জাইকা এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। নতুন করে প্রকল্পের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত। রাজধানীর মেট্রোপলিটনের ৩৪টি এলাকার সঙ্গে আরও সাতটি এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বংশাল, গে-ারিয়া, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ী, লালবাগ, নিউমার্কেট ও শাহবাগের তিতাসের গ্রাহকরা এবারের প্রকল্প সুবিধার আওতায় আসবে। তিতাস সূত্রে জানা গেছে, গ্যাসের প্রিপেইড মিটার স্থাপনে গ্রাহকের কোনো খরচ নেই। প্রতি মাসে গ্যাস বিলের সঙ্গে ৬০ টাকা চার্জ যুক্ত করে কেবল মিটার বিল কেটে নেওয়া হবে। মিটার স্থাপনের পর থেকে আগামী ২০ বছর এ টাকা কাটবে সংস্থাটি। জাপানের টয়োকিকি কোম্পানি লিমিটেড এ মিটার সরবরাহ করছে।
এদিকে জ¦ালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে গ্যাস বিতরণে নিয়োজিত তিতাসের মোট আবাসিক গ্রাহক ২৮ লাখ ৫৫ হাজার। সংস্থাটির মোট গ্রাহকের মাত্র দুই লাখ গ্রাহক প্রিপেইড মিটার সংযোগ পেয়েছে। বাকি গ্রাহক কবে পাবে তা এখনো অনিশ্চিত। তবে চট্টগ্রামে ৬০ হাজার এবং তিতাস এলাকায় ২ লাখ ১০ হাজারসহ সব মিলিয়ে ৩ লাখের মতো প্রিপেইড মিটার বসানো হয়েছে। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে আরও ৯ লাখ প্রিপেইড মিটার বসানোর জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলছে। জ¦ালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন যে পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে সেখানে যদি চুরি ও অপচায়রোধ করা যায় তাতে অন্তত আরও ২৫ শতাংশ বেশি গ্রাহককে তা সবরাহ করা যাবে। তবে আবাসিকে অবৈধ গ্যাস ব্যবহার হলেও সেটা খুব সামান্য। সবচেয়ে বেশি অবৈধ গ্যাসের ব্যবহার হচ্ছে শিল্পে। নিয়মিত মনিটরিং করার কথা থাকলেও গ্যাস বিপণন কোম্পানির কর্মকর্তারা নানা কারণে সেটা করছে না। আবার অনেক কর্মকর্তা অবৈধ সুযোগ নিয়ে তা ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছেন।’ তিনি এও বলেন, ‘দেশে এখনো গ্যাসের অবৈধ ব্যবহার অনেক বেশি, যা কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত হতে পারে না।’
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশিনের (বিইআরসি) সদস্য (গ্যাস) মকবুল-ই-এলাহি চৌধুরী বলেন, ‘বাসাবাড়িতে ৭৮ ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের বিপরীতে ৯৭৫ টাকা বিল সংগ্রহ করে তিতাস। বাস্তবতা হচ্ছে, আদায় করা বিলের বিপরীতে ৪০ থেকে ৪৫ ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। অর্থাৎ বাকি গ্যাসটা হিসাবের আওতায় থাকে না, যা হচ্ছে অবৈধ গ্যাস। আর যতদিন এ অবৈধ গ্যাস থাকবে, ততদিন অবৈধ সংযোগ বন্ধ করা যাবে না। এ সমস্যা সমাধানে গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত প্রিপেইড মিটার আর ইভিসি মিটার চালু করতে হবে।’