ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী, কার্যকর ও স্বাবলম্বী করা বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম লক্ষ্য। গণতন্ত্র ও স্থানীয় সরকারের দাবি সব সময়ই পরস্পরকে গতিশীল করেছে। গণতান্ত্রিক ধারণার ওপর ভিত্তি করে একটি স্থানীয় সংস্থার প্রতিনিধি জনগণের স্বার্থকে তুলে ধরতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার বিশ্বাস করে যে, সংবিধানের আলোকে সব অঞ্চলে গণতানি্ত্রক আকাঙ্ক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ প্রদান করার জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা নিশ্চিত করা আবশ্যক। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ অনুযায়ী স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী, কার্যকর ও স্বাবলম্বী করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বুধবার জাতীয় সংসদে আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এতে সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় আরও বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সংবিধানের অনুচ্ছেদ-১৬ অনুযায়ী নগর ও গ্রামের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার উদ্দেশ্যে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক সুবিধা সম্প্রসারণে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, গ্রামের দিকে নজর দিতে হবে। কেননা গ্রামই সব উন্নয়নের মূল কেন্দ্র। গ্রামের উন্নয়ন আর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যখন বেগবান হবে তখন গোটা বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে সম্মুখপানে।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করে দেশের প্রতিটি গ্রামে উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্মত শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জয ব্যবস্থাপনা, সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের সম্প্রসারণের মাধ্যমে আধুনিক শহরের সব সুবিধাদি পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে সরকার। এছাড়া সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারের ৩-৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনগণের ক্ষমতায়নের অংশ হিসাবে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদসহ পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে অধিকতর আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা উন্নত ও প্রসারিত করার জন্য সরকারের সাহায্য ও উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন স্থানীয় সরকারের পাঁচটি স্তরকে (ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন) আরও শক্তিশালী ও স্বাবলম্বী করে অধিক কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নিবিড় ভূমিকা পালনে সক্ষম, স্বীয় আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে নিজস্ব ব্যয় নির্বাহ করার সুযোগ সৃষ্টি, নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নে কার্যকর অবদান রাখা এবং আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার জন্য স্থানীয় সরকার সংশি্লষ্ট আইনগুলোর পর্যালোচনাপূর্বক যুগোপযোগী করে সংশোধনের প্রস্তাব প্রণয়ন, সংস্কারের উদ্দেশ্যে এর আগে গঠিত বিভিন্ন কমিশন কমিটির দাখিলকৃত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নের জন্য স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাবে ইতোমধ্যে নীতিগত সম্মতি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এই কমিশনের গঠন ও কর্মপরিধি প্রণয়নের কাজ চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয় সরকারের অন্যতম প্রধান ও ভিত্তিস্তর। ইউনিয়ন পরিষদকে আরও শক্তিশালী, স্বাবলম্বী, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও নারীর ক্ষমতায়নসহ মানুষের জীবনযাত্রার সার্বিক মানোন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত উদ্যোগসমূহ হলো∏ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাধারণ জনগণকে সব ধরনের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে একটি ছাতা পরিষেবা প্রদান ও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার চালুসহ জুলাই ২০১১ থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত মেয়াদে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ প্রকল্প (২য় পর্যায়) চলমান। যার মাধ্যমে ১ম পর্যায়ে ২ হাজার ৪০৭টি, ২য় পর্যায়ে ৮৮৭টি ভবন নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়েছে এবং বর্তমানে ১৪৪টি ভবন নির্মাণকাজ চলমান। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবন আরও আধুনিকায়ন করার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ প্রকল্প (৩য় পর্যায়) চলমান।’
লিখিত প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের কাঙ্ক্ষিত সেবার মান বৃদ্ধি এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জানুয়ারি ২০১৭ থেকে ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত মেয়াদে লোকাল গভর্নযান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট -৩ (এলজিএসপি-৩) বাস্তবায়ন হচ্ছে। পল্লী এলাকার দরিদ্র ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এবং নারীরা যাতে দ্রুত ও স্বল্প ব্যয়ে বিচারের সুফল পেতে পারে সে লক্ষ্যে ইউএনডিপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ সরকারের যেৌথ উদ্যোগে বর্তমানে দেশের ২৭টি জেলার ১৩৫টি উপজেলার ১ হাজার ৮০টি ইউনিয়নে ‘বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়)’ প্রকল্পটির কার্যক্রম চলমান।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে উপজেলা পরিষদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে জনঅংশগ্রহণ এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য ৮ বিভাগের ৯ জেলার (ফরিদপুর, চাঁদপুর, রাজশাহী, খুলনা, পটুয়াখালী, সুনামগঞ্জ, রংপুর, নেত্রকোনা ও কক্সবাজার) পিছিয়ে পড়া ১৮টি উপজেলা এবং ২৫১টি ইউনিয়ন পরিষদে জানুয়ারি ২০১৮ থেকে ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত মেয়াদে কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকার (ইএএলজি) প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান।