ডেস্ক নিউজ
আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের স্বর্ণপদক এসেছে আগেই। তবে অধরা ছিল এশিয়ান-প্যাসিফিক ম্যাথমেটিক্যাল অলিম্পিয়াডের (এপিএমও) স্বর্ণপদক। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় এ প্রতিযোগিতা।
দীর্ঘ পরিশ্রম, অভিজ্ঞতা আর একাগ্রতাকে কাজে লাগিয়ে এ বছরের আয়োজনে স্বর্ণপদক অর্জন করেছে বাংলাদেশ দলের মো. মারুফ হাসান। ময়মনসিংহের সরকারি আনন্দমোহন কলেজের ছাত্র সে। এ ছাড়া দুটি ব্রোঞ্জপদক এসেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নুজহাত আহমেদ ও নটর ডেম কলেজের আদনান সাদিকের হাত ধরে। দলের ছয়জন পেয়েছে বিশেষ সম্মাননা।
এবারের আন্তর্জাতিক আয়োজনে ৩৭টি দেশের ৩৪৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। দলীয় স্কোর সর্বমোট ৯৬ নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান দাঁড়ায় ২১তম। গতকাল ২৯ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে আয়োজকদের পক্ষ থেকে এই ফল ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ প্রথম এপিএমওতে অংশ নেয় ২০১০ সালে। বাংলাদেশে গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি (বিডিএমও) স্থানীয়ভাবে এপিএমও আয়োজন করে। প্রথম বছরে কোনো পদক না পেলেও ধীরে ধীরে ভারী হতে থাকে বাংলাদেশের ঝুলি। গত ১০ বছরের ফলাফল অনুসারে বাংলাদেশের সর্বমোট পদক ৭৬টি, যার মধ্যে আছে ১১টি রৌপ্যপদক, ৩৪টি ব্রোঞ্জপদক এবং ৩১টি বিশেষ সম্মাননা। প্রায় প্রতিবছরই সেরা ২০টি দলের মধ্যে অবস্থান করেছে বাংলাদেশ দল।
গত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে বিডিএমওর ফেসবুক পেজে এপিএমও ২০২১–এর স্থানীয় আয়োজনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। ঢাকার কারওয়ান বাজারের মোনেম বিজনেস ডিসট্রিক্ট ভবনে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলে এ আয়োজন। সবচেয়ে ভালো নম্বর পাওয়া ১০ জনের উত্তরপত্র পাঠানো হয় আন্তর্জাতিক কমিটির কাছে।
এ তালিকায় ছিল ময়মনসিংহের সরকারি আনন্দমোহন কলেজের মারুফ হাসান, ঢাকার ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজে নুজহাত আহমেদ, ঢাকার নটর ডেম কলেজের আদনান সাদিক, মুহাইমিনুল ইসলাম নিনাদ, তাহমিদ হামীম চৌধুরী, ফাহিম ফাইয়াজ, মুত্তাকিন আহমেদ চৌধুরী, সেন্ট জোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের দেওয়ান সাদমান হাসান, মতিঝিল গভ. বয়েজ হাইস্কুলের তাহমিম নূর এবং ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ফোয়াদ আল আলম। পদক আসেনি শুধু তাহমিদ হামীমের ঝুলিতে। তবে এবারের পাওয়া অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই তার কাছে বড়।
স্বর্ণপদক অর্জনের ক্ষেত্রে মারুফ হাসানের কাজে এসেছে দীর্ঘদিনের অনুশীলন। এপিএমওতে ২০১৯ সালে রৌপ্য এবং ২০২০ সালে ব্রোঞ্জপদক অর্জন করেছিল সে। নিজের অর্জনকে নিজেই ছাপিয়ে গিয়ে এ বছর তার স্কোর ২০।
দলের একমাত্র মেয়ে সদস্য নুজহাত আহমেদ। জাতীয় দলে দেরিতে এলেও অর্জনের ঝুলি নেহাত ছোট নয়। ২০২১ সালটা তার জন্য শুভই বলতে হয়। এ বছরের ইউরোপিয়ান গার্লস ম্যাথমেটিক্যাল অলিম্পিয়াডেও (ইজিএমও) সে অর্জন করেছিল রৌপ্যপদক।
নুজহাত ছাড়াও এ দলের আরেকজন ব্রোঞ্জপদক বিজয়ী আদনান সাদিক। ২০১৯ সালে প্রথম জাতীয় পর্বে অংশ নেওয়ার সুযোগ হয় তার। এর পরের বছরেই আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে ব্রোঞ্জপদক পায় সাদিক। এ বছরের এপিএমওতে পাঁচটির ভেতরে দুটি সমস্যার সমাধান করেছে সে।
আন্তর্জাতিক এমন আয়োজনে এ অর্জনে ভবিষ্যৎ নিয়ে আরও আশাবাদী পুরো দল। নিজ নিজ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে গণিত নিয়ে গবেষণায় আগ্রহ প্রকাশ করে সবাই।