ডেস্ক নিউজ
ছাত্রদল নেতার সঙ্গে বাদানুবাদ নিয়ে বিএনপির আলোচনায় কথা বলার কারণে দলটির ওপর চটেছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি মনে করেন, বিএনপির এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলাই উচিত হয়নি। তার কথা শুনলে দলটির ভালো হতো। কিন্তু তারা সেটা শুনছে না।
শুরুটা ছাত্রদলের এক নেতাকে দিয়ে। ‘বিএনপি লন্ডন থেকে আসা ওহিতে চলে। তারেক রহমানের দুই বছর চুপ করে থাকা উচিত। তার যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করা উচিত’- জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলছিলেন এ কথা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্রদলের এক নেতা তাকে থামিয়ে দিয়ে সতর্ক করেন, তিনি (জাফরুল্লাহ) যেন বিএনপি নেতার সমালোচনা না করেন। আর করলে যদি তার কিছু হয়ে যায়, তবে তারা দায়ী থাকবেন না।
গত ২৬ জুন জাতীয় প্রেস ক্লাবে ছাত্রদলের সহসভাপতি ওমর ফারুক কাউসার ও গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মধ্যে এই আলাপন ঝিমিয়ে পড়া রাজনীতিতে নতুন আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে।
গত কয়েক বছরে বিএনপির ‘পরামর্শক’ হয়ে ওঠার চেষ্টা করা চীনপন্থি সাবেক বাম নেতা আওয়ামী লীগ ঘরানায় অজনপ্রিয় হয়েছেন, এটা স্পষ্ট, কিন্তু সেদিনের ঘটনার পর বিএনপির পক্ষ থেকেও তার প্রতি তির্যক মন্তব্য এসেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নাম উল্লেখ না করে জাফরুল্লাহর সমালোচনা করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, কেন আওয়ামী লীগের বদলে তিনি বিএনপির সমালোচনা করেন। বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে জাফরুল্লাহর সমালোচনা করেছে।
এই পরিস্থিতিতে নিউজবাংলা কথা বলেছে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ নামে বিএনপির জোট গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখা গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে। তিনি বলেছেন, প্রেস ক্লাবের সেদিনের ঘটনায় ছাত্রদলের নেতাদের ওপর তার কোনো রাগ নেই। কিন্তু এটা নিয়ে বিএনপির তার বিরুদ্ধে কথা বলার কিছু নেই।
বিএনপিকে নিয়মিত বুদ্ধিপরামর্শ দিয়ে আসা জাফরুল্লাহ যে দলটির ওপর চটেছেন, সেটি উঠে আসে এই আলাপনে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় ছাত্রদলের এক নেতা আপনাকে সাবধান করে দিয়েছেন, যেটি আসলে হুমকি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। সেদিন আসলে কী হয়েছিল?
তারা দাঁড়িয়ে আমাকে সালাম দিয়েছে। আমি মাত্র বক্তৃতা শুরু করেছি, এমন সময়ে দুইটা ছেলে দাঁড়িয়ে তাদের আমি চিনিও না। তারা আমাকে সালাম দিয়েছে।
বলেছে, আসসালামু আলাইকুম
আমি বলেছি, ওয়ালাইকুম আসসালাম।
বলেছে, আপনি আমাদের কে?
আমি বলেছি, কেউ না। তোমাদের শুভানুধ্যায়ী। বলেছে, আপনি আমাদের নেতা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করবেন না। আপনি সব সময় তাকে ছোট করেন। আমি বলেছি, না তুমি আমার কথা শোনো, বসো শোনো তারপর মন্তব্য করো। বলে যে, না আপনি বলবেন না। আমি বললাম, না সেটা আমার অধিকার আছে, আমি বলব, আমার কণ্ঠস্বর কেউ বন্ধ করতে পারবে না। এটাই তো পটভূমি। এটা শুনে কোনো আলোচনার আমি জায়গাই দেখি না। আমার কাছেও তো তাদের বিরুদ্ধে কোনো ক্ষোভ সৃষ্টি হয়নি। আমার কাছে বরং মনে হয়েছে তাদের ক্ষোভটাকে তারা প্রকাশ করে ভালোই করেছে।
আপনি কিছু মনে করেননি। তবে ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে এই নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
কোনো কাজ নাই তাদের। তারা এটা দিতেই পারে। এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে নাগরিক হিসেবে আমার অবশ্যই সব দল সম্পর্কে কথা বলার অধিকার রয়েছে। তাদের পছন্দ হতে পারে, না-ও হতে পারে। তারা তা সমর্থন করতে পারে, আবার সেটার বিরুদ্ধেও বক্তব্য রাখতে পারে। মূল কাজ তো তারা করে না। তারা আন্দোলন করে না, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি করে না। খালি একটা বক্তৃতা দেয়া ছাড়া কিছু করে না। যে এই দেশে নাই, তাদের নেতৃত্বের যে একটা সংকট চলছে, তাদের তৃণমূলের লোকেরা কার সঙ্গে কথা বলবে? -এটা হলো কী! তারা কোনো বক্তব্য খুঁজে পাচ্ছে না। একটা ছোট ঘটনাকে নিয়ে…আমার তো মনে হয়, একমুহুর্তের জন্য এই দুটি ছাত্রের সম্পর্কে খারাপ ধারণা হয়নি। বরং আমার মনে হয়েছে, তারা শুনেছে আমার বক্তৃতা, তা নয়তো প্রতিবাদও করতে পারত না, বক্তব্যও রাখতে পারত না। এটা আসলে কোনো বিষয়ই না আলাপের।
ছাত্রদলের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন আপনার থেকে এমন মন্তব্য তারা আশা করেন না…
কে এই ছাত্র? তার বয়স কত? সে বিয়ে করেছে? তাদের তো ছাত্রই থাকা উচিত না। আমি পাঁচ বছর আগে খালেদা জিয়াকে চিঠি লিখেছিলাম। আমি খালেদা জিয়াকে বলেছিলাম, ২৫ বছরের বেশি বয়স হলে তাদের আর ছাত্রদল করা উচিত না। তারপরে তারা বিয়েশাদি করে বেড়ায়, বাচাকাচ্চা থাকে। তাদের যুবদল করতে হবে। ছাত্রদলকে ২৫-২৬ বা ২৭ বছরের মধ্যে হতে হবে। তাইলে তারা আন্দোলন করবে। দেখেন ছাত্রদলের অতীত কত ভালো ছিল। যখন তারা, আমান (আমানউল্লাহ আমান), খোকন (খায়রুল কবির খোকন), এদের তখন বয়স কম ছিল। তারা আন্দোলন করেছে। এখন ছাত্রদল এত বড় একটা নির্বাচন হলো। তারা হারিয়ে গেছে। তাদের তো লজ্জা লাগা উচিত। দুঃখ পাওয়া উচিত।
তিনি বলেছেন আপনি বরাবর তাদের দল নিয়ে, প্রিয় নেতাদের নিয়ে সমালোচনা করেন…
করি, করি। এটা করি হচ্ছে গিয়ে তাদের শুভানুধ্যায়ী বলে। তাদের ব্যর্থতায় কষ্ট পাই বলে করি। তাদের বরং আমার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত যে আমি তাদের সঠিক পথ দেখানোর চেষ্টা করি। আমার পথ যে সঠিক, তা-ও আমি বলি না। কিন্তু আমি সব সময়…তারা এত বড় একটা দল। এখনও তারা খালেদা জিয়াকে বের করতে পারল না। তাদের ব্যর্থতায় আমি ব্যথিত হই। কিন্তু তারা আমাকে ভুল বুঝছে।
আরও পড়ুন:জাফরুল্লাহকে ‘হুমকি’, কাউসারের পাশেই ছাত্রদল
তাদের মধ্যে এহছানুল হক মিলন এই তাদের একটা ইয়াং ভালো…একটা ভালো লেখা লিখেছেন। প্রবন্ধ লিখেছেন। আমি সেটার আলোচক ছিলাম। সুতরাং আলোচনা করতে গেলে সবকিছু আপনার গুণকীর্তন গাইব? আপনার ভুলভ্রান্তি দেখাব না? সুতরাং সহনশীলতা অর্জন করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও তো প্রেস ক্লাবের প্রসঙ্গটি টেনে সমালোচনা করেছেন। সেটি আপনি শুনেছেন?
ওনাদের কোনো কাজ নেই। এটা একটা ঘটনা হইতে পারে? তারা মূল ইস্যুতে যাচ্ছে না। তাদের বরং বলা উচিত খালেদা জিয়াকে…গয়েশ্বর রায়রা মূল ইস্যু থেকে ছুটকে যাচ্ছে। এটা একটা ঘটনা হলো আলাপের? দুটা ছেলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা এমনকি বেয়াদবিও করেনাই। এমন কিছু করে নাই, যেটা নিয়ে আলোচনার ব্যাপার আছে?
তাদের তো আর খেয়েদেয়ে কাজ নাই গোঁয়ার লোকজন। তারা তো এটা করবেই। এগুলো একদমই অহেতুক। খালেদা জিয়াকে বের করতে পারছে না। যেখানে আলাপ করা দরকার, সেখানে আলাপ করছে না। আর দুইটা বাচ্চা ছেলে কী করল না-করল, সেটা নিয়ে আলাপ করল।
আপনার কি মনে হয় বিএনপি আপনার দেয়া পরামর্শ গ্রহণ করে?
না, তারা এত বড় দল যে, সব পরামর্শ আমার গ্রহণ করবে সেটা আমার কামনা করাও ঠিক না। তবে আমি মনে করি, এটা তারা বিবেচনা করতে পারে। তারা বিবেচনা করলে তারা লাভবান হবে। সবকিছু যে আমার কথায় চলবে, তা তো না। তাদের পার্টি আছে। আমি যখন বলেছি, কয় বছর আগে বলেছি, একটা ইমার্জেন্সি কাউন্সিল করেন আপনারা। করে নতুন নেতৃত্ব আনেন। এখন তাদের স্ট্যান্ডিং কমিটির যারা আছে, সবাই আমার মতো বয়স্ক। দুই-চারজন ছোট হবেন, আর দুই চারজন বয়সে বড় হবেন। এখন আমাদের বয়স বেড়ে গেছে, আমরা দৌড়াতে পারি না। অনেক কিছুতে আমাদের একটা স্থবিরতা চলে আসে। কিন্তু আজকে পরিবর্তন আনতে হলে সাহসী মনোভাব থাকতে হবে। রাস্তায় যেতে হবে, মার খেতে হবে। এটার কোনো বিকল্প নেই।
আজকে আমাকে সত্য কথা বলতে হবে। আজকে যেখানে আমলারা এ দেশ শাসন করছে। তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে হবে। এসব জিনিসগুলোকে… আমি তাদের কী বলেছি, তাদের কী পরামর্শ দিয়েছি- আপনি যদি বিবেচনা করেন। তাদের আমি বলেছি, তাদের বহু লোক ভালোবাসে। আমি দেখেছি গ্রামগঞ্জে লক্ষ কোটি লোকের সমর্থন আছে। তারা আজকে রাস্তায় কেন আসছে না?
কারণ, আপনারা যদি ডাক দিতেন…খালেদা জিয়ার প্রতি যে অন্যায় করেছে তাকে যে জামিনটা দেয় না…আজকে হাইকোর্টে গিয়ে ১০ হাজার লোক যদি সাত দিন বসে থাকেন বিচারপতিদের চৈতন্য হবে। বিচারপতিদের বিবেকের দিকে তাদের সাহস বাড়বে।
আমি তো এটাই বলি, যে আপনারা মিছিল-মিটিং করেন। আপনারা আপনারা সবাইকে নিয়ে বের হোন। আপনারাই বের হোন। রাস্তায় মিছিল মিটিং করেন, কিন্তু গাড়ি ঘোড় ভাইংগেন না। সরকার ও ‘র’ (ভারতীয় গোয়েন্দা) এদের দিকেও খেয়াল রাখবেন। ওরা যেন আপনাদের ঘাড়ে দোষ না চাপাইতে পারে। এখানে বলেছি ইয়াংগার লোককে স্ট্যান্ডিং কমিটিতে আনেন। এটা আমি কোথায় ভুল বলেছি বলেন?
আমি বলেছি আজকে যেখানে হাফিজ (এম হাফিজউদ্দিন আহমেদ) শাওকতরা (শওকত মাহমুদ) যেখানে পরিবর্তনের জন্য সজাগ। তাদের কে উলটো শোকজ করে দিয়েছেন। এটা তো আপনাদের স্থবিরতার প্রমাণ, ভুল সিদ্ধান্ত। যদি শোকজ করতেও হয় সেটা গোপনে করেন। সেটা প্রকাশ্যে এটা করা উচিত ছিল না। তাদের ডেকে নিয়ে কী কী করতে চায় সেটা বলা উচিত।
ছাত্রদলের এই ঘটনা নিয়ে আপনাকে বিএনপি থেকে কি ফোন করা হয়েছে?
না, ফোন করেনি। আর এটা তো ফোন করার মতো কোনো ঘটনায় না। কেনই বা করবে?
রাজনৈতিক সংকটের কথা উল্লেখ করে বারবার বিএনপিকে আন্দোলনের তাগিদ দিয়ে আসছেন? এই সংকট কি শুধু আন্দোলনের মাধ্যমের দূর করা সম্ভব?
আজকে ১২ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। তারা নির্বাচিত হন নাই। কিন্তু কথা হলো, তারা (বিএনপি) কিছুই করতে পারছে না। তার কারণ হলো তারা জনগণের …।
আজকে লকডাউন, লকডাউনের মধ্যে তাদের উচিত ছিল জনসাধারণকে, দরিদ্র মানুষকে কী করে খাবার দেয়া যায়, সেই ব্যবস্থা করা। তারপরে মোটরচালিত রিকশা। গরিব মানুষরা আরামে রিকশা চালাতে পারবে না, এটা হলো না। আজকে বিএনপি বলতে পারত, আমরা ক্ষমতায় আসলে যে চালক, সেই হবে মালিক। তাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কথা তাদের চিন্তায় রাখা উচিত।
আর ছাত্রদের যে আন্দোলন ছিল সেখানে বিএনপির অংশগ্রহণ করার দরকার ছিল। যদিও কেউ কেউ ছিল। তবে পুরোপুরিভাবে না।
৯০ সালে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকরা আপনার ফাঁসির দাবি করে পোস্টারিং করেছিলেন। সেটা কেন?
হ্যাঁ। কারণটা হলো, ভালো কাজ যারাই করতে চায়, তারা তখন সেই সুযোগ পায় না। তখন, আমি একটি স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। এই যে আজকে যে গ্রামে ডাক্তার নাই, ডাক্তারের সম্মান নাই …। আজকে তারা সবাই বলে, ওইটা হইলে খুব ভালো হইত। সুতরাং তারা না বুঝে অবুঝের মতো এই ফাঁসির দাবি করেছে। ওরা বিনা বিচারে আমার ফাঁসি চেয়েছে।
সেই পোস্টার তা আমি একটা রেখেছিলাম। তাদের ভুলটা তারা অনেকেই আজকে উপলব্ধি করে। যে ওই স্বাস্থ্যনীতি হলে দেশের মঙ্গল হতো। চিকিৎসকদের সুবিধা হতো। ডাক্তাররা সব সময় তাদের দৃষ্টিতে বড় ছিল।
যখন বিলেতে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস হয়, সেটা বাতিলের জন্য আন্দোলন করেছিল। আজকে তারা মনে করে যে, এটা একটা বিরাট কাজ হয়েছে। যুগে যুগে যারাই পরিবর্তন চেয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেই আন্দোলন হয়েছে, এটা নতুন কিছু নয়।
এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি, ঐক্যফ্রন্টের এই মুহুর্তে কী অবস্থা?
ঐক্যফ্রন্ট এই মুহুর্তে নেই বলা চলে।
কামাল হোসেনের সঙ্গে কি আপনার আলাপ হয়? উনি আসলে হাল ছেড়ে দিয়েছেন কেন বলে আপনার মনে হয়?
হ্যাঁ, কথা হয়। উনি হাল ছেড়ে দেন নাই। হলো কী, এখানকার মূল পার্টিটা হলো বিএনপি। বিএনপিকে উনি ওনার কোনো কথাতেই রাজি করাইতে পারেন নাই।
আমাদের একটা প্রস্তাব ছিল আমরা ৩০০টা মামলা করব, এই যে ভোট ডাকাতি হলো। এটার কোনো কিছুই করা যায়নি। আমি বারবার বলেছি ৩০০ টা মামলা করে দিতে, ট্রাইব্যুনালে ৩০০ টা মামলা করে আমরা বিষয়টাকে আবার সামনে আনি।
ব্যাপার হলো বিএনপি এই মুহুর্তে ঐক্যফ্রন্টের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন নাই। তারা নিজেরা চলছে…চলুক। কিন্তু আন্দোলন হলেই হলো। তা যে ঐক্যফ্রন্টকে করতে হবে তার কোনো কথা নাই। তারা নিজেরাও নেতৃত্ব নিয়ে করতে পারে।
জুনায়েদ সাকি, নুরুল হক নুর একটি নতুন রাজনৈতিক প্লাটফর্মে আপনাকের সেখানে দেখা গিয়েছে…
এসব কথা আমিও শুনেছি, কিন্তু এমন কিছু দেখছি না।
আপনি সব সময় আন্দোলনের ডাক দেন, প্রতিবাদ জানান। তবে জনগণের কোনো প্রকাশ্য সমর্থন পান না কেন?
আমি তো রাজনৈতিক দলের নেতা না। সুতরাং আমার কাজও না সেটা। জনগণকে আজকে তো আমি সেই ডাক দিই না। সেই ডাক দেয়ার দায়িত্বও আমার না। আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে যেটা জানানো দরকার সবাইকে, সেটাকে নিয়ে আমি আলোচনা সমালোচনার মধ্যেই থাকতে চাই। আমি জনগণকে বুঝাতে চাই কী কী পরিবর্তন দরকার। যেমন আমি বলেছি, বাংলাদেশে আজকে সুশাসনের জন্য কী দরকার! আমি যেভাবে দেখি, সেটাকেই প্রকাশ করেছি। কিন্তু এটা কার্যত এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের।
এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে আপনি পাকিস্তানকে ক্ষমা করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোন জায়গা থেকে পাকিস্তানের ঠিক কোন কোন অপরাধ ক্ষমা করার কথা বলেছেন? আর কেন ক্ষমার প্রসংগটি এনেছিলেন?
পাকিস্তানিরা যারা মানবতাবিরোধী অন্যায় করেছিল তারা আজকে জীবিতই নেই। হয়ত দুই একজন জীবিত থাকতে পারে। যেই প্রজন্ম এখন পাকিস্তান শাসন করছে, পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনীতিতে যুক্ত, তারা কেউ ৭১ সনে সেই অন্যায় আচরণের সঙ্গে পরিচিত নয়, মানবতাবিরোধী অপরাধে যোগসূত্রও নেই, অনেকে জন্মই হয় নাই তখন।
আর তাছাড়া এই ঘটনার মূল নায়ক দুইজন। জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং ইয়াহিয়া খান। জুলফিকার আলী ভুট্টোই পরবর্তীকালে পাকিস্তান শাসন করেছেন। বঙ্গবন্ধু নিজে তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। আমরা কে আর?
উনি (বঙ্গবন্ধু) তাকে (ভুট্টো) দাওয়াত দিয়ে ঢাকায় আনলেন। লক্ষ লক্ষ সমাগম হয়েছিল। ওটাই প্রমাণ করে যে উনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। …… আজকে পাকিস্তানের বিভিন্ন ইতিহাসবিদরা তারা বিভিন্নভাবে প্রকাশ করছে এই ভুল ভ্রান্তি তারা কিন্তু অনেক বেশিই।
আজকে আমাদের এই ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে জাগতে হবে, পাকিস্তানকে আমাদের পাশে দরকার। আজকে এই যে রোহিঙ্গা সমস্যা যেখানে সেটা নিয়ে ভারত কিছুই করল না। ভারত আমাদেরকে যেভাবে নাচিয়ে বেড়াচ্ছে এইসবের প্রেক্ষিতে আমি বলেছি, আজকে বাংলাদেশেরও উচিত হবে পাকিস্তানকে ক্ষমা করে দিয়ে তাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করা, তাতে লাভবান হবো আমরা।
আমাদের গোয়ার্তুমি করা ভালো না। এটাই আমি বুঝাতে চেয়েছি যে, বঙ্গবন্ধুর একটা বড় গুণ ছিল মহানুভবতা। তো সেই সূত্রেই আমি ক্ষমার কথা বলেছি।
আমি তাই মনে করি যে, এইটাতে তাহলে আমরা লাভবান হবো। ইসলামিক দেশগুলো একত্রিত হতে পারবে, তারা পৃথিবীর অধিকার আদায়ে সমর্থন হবে। এইসব কিছু মিলিয়ে এখন আর আমাদের পুরা ৫০ বছর পুরানো কাহিনি মনে রাখাটা উচিত হবে না।
কিন্তু পাকিস্তানকে কেন ক্ষমা করতে হবে? তারা কী ক্ষমা চেয়েছে?
তারা তো এখন হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এইটা তো ইমরান খান বাড়িয়েছে…তাদের প্রধানমন্ত্রী এই দেশে এসেছেন। শেখ হাসিনা যখন পয়লা বার ছিলেন, তখন তাদের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এসছেন। তার আসাটা মানেই তো তারা তাদের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সো, আমরা সেই হাতটাকে ধরে আমরা আমাদের সুবিধা আদায় করা।
এই যে যেমন তিস্তার পানি পাই না অথচ এখন বন্যায় প্লাবিত হয়ে গেলাম। প্রতিদিন, প্রত্যেক সপ্তাহে দুই একটা লোক মারছে। আজকে ভারতের থেকে একদিকে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা যেমন দরকার আছে, তেমনি মাতব্বরিটাকেও সহ্য করা যাবে না।
এখানে পাকিস্তানের শাসন চাইছি না আমি। আমাদের পারস্পরিক সুবিধাগুলি এবং আজকে রোহিঙ্গা সমস্যা আমার কাঁধে বসে আছে… ১২ লাখ এটার কিছুই হবে না। এখানে যখন মুসলিম দেশগুলি এগিয়ে এসেছিল, আমরা ভারতের কারণে আমরা সেদিকেও যাইনি। এই প্রেক্ষিতেই আমি বলেছি মাফ করে দিতে।
আপনি কেন উপযাজচ হয়েছেন?
আমি চাই মাফ করতে। তারা যে যুদ্ধ করেছিল আমাদের সঙ্গে, আমাদের অন্যায়ভাবে দখল করে রেখেছিল, সেটা তো আমরা স্বাধীন হয়েই গেছি। বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করেন তাহলে তার প্রতি শ্রদ্ধার কারণেই আমাদের এইসব পুরানো মধ্যযুগীয় মনোভাব থাকা উচিত না। আমার বাপ দাদার সঙ্গে গণ্ডগোল করেছে বলে আমি এখনও গণ্ডগোল করে বেড়াব তা তো হয় না।
পাকিস্তানের পক্ষে যে দূতিয়ালি করছেন, তারা কি আমাদের প্রাপ্য সম্পদ দিয়েছে?
(হেসে) আমি সম্পত্তি পাইনি, পাবও না। তবে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক হলে আমরা অনেক কিছুই পাব। সরকারও পাবে।
কিছুদিন আগে দেখলাম আপনি হঠাৎ ধর্ম শিক্ষায় মনোনিবেশ করবেন। এই সিদ্ধান্ত কেন?
আমি তো এখনও বলি যে আরবি ভাষা শেখা উচিত। শিখলে চাকরি বাকরির সুবিধা হবে। তাছাড়া একটি বৃহত্তর জনগণের ধর্ম…সেটা তারা নিজেরা আরবি পড়তে হইলে সেটা শেখা উচিত। এই যে কোরআন একটি ধর্ম গ্রন্থ। আমি চাই আমি নিজে এটা পড়ে এটার অর্থ বুঝতে। আমরা যারা পড়ি এটার অনুবাদটা পড়ি। অনুবাদ আড় মূলটা, দুইটা তো আলাদা…সেজন্যই। তাছাড়া আমি মনে করি কি, যার যার ধর্ম তার তার কাছে। প্রত্যেকেরই ধর্ম পালনে অধিকার আছে। যারা করে না তাদের বিরুদ্ধেও কারও ক্ষোভ থাকা উচিত না।