ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ নিয়ে যখন সারা দেশে দুর্নীতি-অনিয়মের ঝড় উঠেছে ঠিক সেই সময় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে ডকুমেন্টারি নির্মাণ করছে সরকার। এ উপজেলর আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলো সারা দেশে মডেল হিসেবে দেখানো হবে। জায়গা নির্বাচন, ঘর নির্মাণ, উপকারভোগী নির্বাচন, উপকারভোগীদের কর্মসংস্থান সব কাজেই ছিল দূরদর্শী ও দীর্ঘস্থায়ী চিন্তা। যার জন্য ঘর নির্মাণের পর একেকটি প্রকল্প ভরে উঠেছে নান্দনিকতায়। উঁচুু-নিচু টিলা আর সবুজে ঘেরা প্রকৃতিতে উঁকি দিচ্ছে লাল টিনের ঘর। এ যেন লাল-সবুজের বাংলাদেশের এক প্রতিচ্ছবি। দৃষ্টিনন্দন এ প্রকল্পগুলো এখন আর শুধু গরিবের স্বপ্নের ঠিকানাই নয়, পর্যটকদের জন্যও দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। গত দুই দিন সরকারের আইসিটি মন্ত্রণালয়ের এটুআই প্রকল্পের অধীন এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ডকুমেন্টারিটি নির্মাণ করছে এইচডি মিডিয়া। এ মিডিয়ার কর্মকর্তারা উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিশামণি, রাধানগর আশিদ্রোণের বেগুনবাড়ী, মহাজিরাবাদ ও কালাপুর ইউনিয়নের মাইজদিহি প্রকল্পের উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।
এইচডি মিডিয়ার ডিরেক্টর ইভান রিয়াজ বলেন, ‘এখানকার প্রকল্পগুলো চমৎকার হয়েছে। কতটা আন্তরিকতা, নিষ্ঠা আর দেশপ্রেম থাকলে এমন একটা ভালো কাজ করা যায় এখানকার প্রকল্পগুলো তার বড় উদাহরণ।’ মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রথম ধাপে এ উপজেলায় ভূমিহীন গৃহহীনদের জন্য ৩০০ ঘর বরাদ্দ আসে। উপজেলার মির্জাপুর, আশিদ্রোণ ও সদর ইউনিয়নে এসব ঘর নির্মাণ শুরু হয়। ২৩ জানুয়ারি ৭১টি ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়। আর দ্বিতীয় ধাপে আসে আরও ৩০০ ঘর। এগুলোর নির্মাণকাজ শুরু হয় কালাপুর ইউনিয়নের মাইদিহি পাহাড়ে। এর মধ্য ২০ জুন প্রধানমন্ত্রী ভিডিও করফারেন্সে ১৬০টি ঘর উদ্বোধন করেন। বাকি ঘরগুলোর নির্মাণকাজ চলছে। উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা জানান, দ্বিতীয় ধাপে মাইজদিহি প্রকল্পটি ‘গ্রাম হবে শহর’-এর আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে। এখানে একসঙ্গে ৩০০ ঘর নির্র্মাণ হচ্ছে। প্রায় ১ হাজার ৫০০ লোক বাস করবেন। তাদের জন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মসজিদ ও একটি মন্দির নির্মাণ হচ্ছে। থাকছে ইন্টারনেট সেবা। লেবু বা আনারস চাষের মাধ্যমে উপকারভোগীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। তা ছাড়া বাড়ির আঙিনায় বপনের জন্য উপজেলা থেকে দেওয়া হচ্ছে সবজি বীজ। প্রকল্প এলাকায় প্রায় ৫ হাজার ফলদ, বনজ ও ওষুধি গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা নকশা অনুযায়ী কাজ করেছি। তবে দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য প্রতিটি ঘরে কাঠের বদলে এসএস অ্যাঙ্গেল দেওয়া হয়েছে। আর ১০ ইঞ্চির পরিবর্তে ১৫ ইঞ্চি নিচ থেকে ঘরের ভিত্তি তোলা হয়েছে। তা ছাড়া প্রতিটি ঘরের বাথরুমে লাগানো হয়েছে সিরামিকের প্যান। যাতে দেবে না যায় তার জন্য আমরা প্রথম ঘরগুলো উঁচু জমিতে নির্মাণ করেছি। আর নিচু জমিগুলো চার-পাঁচ মাস আগে ভরাট করে রেখেছি। ভিটা শক্ত হওয়ার পর সেখানে ঘর নির্মাণ করা হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাধনমন্ত্রীর এ প্রকল্পের সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িয়ে আছে। তাই আমরা আমাদের সবটুকু দিয়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছি। জায়গা নির্বাচন, ঘর নির্মাণ এবং উপকারভোগীদের কর্মসংস্থান এসব কিছু আমরা করেছি ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে। উপকারভোগীরা এ অঞ্চলের পর্যটক বিকাশে ভূমিকা রাখবেন। এ প্রকল্পটি একদিন সারা বিশ্বে মডেল হবে। আমরা এ মহৎ কাজের অংশীদার হতে পেরে নিজেরাও গর্ববোধ করছি।’
প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলের প্রকল্পটি অবশ্যই ভালো লোকেশনে হয়েছে। খুব সুন্দর কাজ হয়েছে। এটি একটি মডেল প্রকল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।’