ডেস্ক নিউজ
সিলেটের জকিগঞ্জে নতুন গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া গেছে। এটি থেকে প্রতিদিন এক কোটি ঘনফুট গ্যাস তোলা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশের ২৮তম গ্যাসক্ষেত্র এটি। এখানে মোট ৬ হাজার ৮০০ কোটি ঘনফুট (৬৮ বিসিএফ) গ্যাস আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার আয়োজিত ওয়েবিনারে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের ঘোষণা দেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, নতুন গ্যাসক্ষেত্রে যে পরিমাণ গ্যাস পাওয়া যাবে, তার বর্তমান দাম ১ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাশ্রয়ী মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ করতেই সব কাজ চলছে।
গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কার করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড এক্সপ্লোরেশন কোম্পানি (বাপেক্স)। শিগগিরই এখানে ত্রিমাত্রিক জরিপ চালানো হবে। এ ছাড়া এখানে আরও তিনটি অনুসন্ধান কূপ খননের পরিকল্পনা আছে। এরপর ক্ষেত্রটিতে গ্যাসের মজুত সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, জ্বালানি বহুমুখীকরণে অবশ্যই জোর দিতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানি একসময় শেষ হবেই। তাই নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গুরুত্ব দেওয়া লাগবেই।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ম তামিম বলেন, সাশ্রয়ী জ্বালানির চেয়ে সরবরাহ নিশ্চিত করা নিয়ে দুশ্চিন্তা বেশি। ঘাটতি বাড়ছে। সামনে দিনে সরবরাহ আরও ৪০ থেকে ৫০ কোটি ঘনফুট উৎপাদন কমতে পারে। তাই দ্রুত স্থলভাগে এলএনজি টার্মিনাল করে আমদানি বাড়াতে হবে। এটা না হলে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হবে। চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যেই বড় বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
তবে একই সঙ্গে দেশে উৎপাদন বাড়ানোর তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে উল্লেখ করে ম তামিম বলেন, দেশে ব্যাপক হারে অনুসন্ধান চালাতে হবে। প্রয়োজনে বাপেক্সের পাশাপাশি স্থলে বহুজাতিক কোম্পানিকে নিয়ে আসা। পুরোনো গ্যাসক্ষেত্রের ওপরের স্তর থেকে বাড়তি গ্যাস তোলার সুযোগ কাজে লাগানো যেতে পারে। সমুদ্রে দ্রুত বহুমাত্রিক জরিপকাজ শেষ করা দরকার।
ওয়েবিনার আয়োজন করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জ্বালানি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আনিছুর রহমান। ‘মুজিব বর্ষে জ্বালানি খাত, সমৃদ্ধিতে এগিয়ে যাক’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস পালিত হচ্ছে।
মূল নিবন্ধে বলা হয়, উৎপাদন ও চাহিদার ঘাটতি মেটাতেই এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এটি যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশ ৪২তম সদস্য হিসেবে এলএনজি ক্লাবে ঢুকেছে। সামনে গ্যাসের চাহিদা আরও বাড়বে। তাই গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে হবে। বঙ্গোপসাগরে অনুসন্ধান যত দ্রুত শেষ করা যাবে, তত ভালো হবে। এ ছাড়া জ্বালানি সাশ্রয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এতে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন হাইড্রো কার্বন ইউনিটের মহাপরিচালক এ এস এম মঞ্জুরুল কাদের। তিনি বলেন, এলএনজি আমদানি বাড়া নিয়ে হাহাকার করার কিছু নেই। অনেক দেশ আমদানি করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়িয়েছে। পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে কোনো সমস্যা হবে না।
ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এ বি এম আবদুল ফাত্তাহ্। এতে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ, ফোরাম ফর এনার্জি রিপোটার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অরুণ কর্মকার, পাক্ষিক এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ারের সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।
আজ ৯ আগস্ট জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস। ২০১০ সাল থেকে সরকারিভাবে দিবসটি পালিত হচ্ছে। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেল অয়েল কোম্পানির কাছ থেকে ৪৫ লাখ পাউন্ড স্টার্লিংয়ে (তখনকার ১৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা) পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র কিনে নেন। পরে এই গ্যাসক্ষেত্রগুলো জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তার বড় নির্ভরস্থল হয়ে ওঠে।