ডেস্ক নিউজ
চলতি মৌসুমে ঝিনাইদহ জেলায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। সেই সঙ্গে বাজারে পাটের দামও ভালো। তাই হাসি ফুটেছে সীমান্তের জেলা ঝিনাইদহের পাটচাষিদের মুখে। এ বছর ভালো বৃষ্টিপাতের কারণে পাট পঁচানো ও আঁশ ছড়াতে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর ২২ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে যা গেল বছরের তুলনায় ১০ হেক্টর বেশি। ইতোমধ্যে আবাদকৃত ৮০ ভাগ জমির পাট কাটা শেষ হয়েছে।
শুক্রবার বাজারে প্রতিমণ পাট বিক্রি হয়েছে ভালো-মন্দ প্রকার ভেদে ২ হাজার ৮শ’ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে লাভবান হচ্ছেন কৃষক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরাও। লকডাউন না থাকলে সামনের দিনগুলোয় দেশের বড় বড় মোকামের ব্যাপারীরা এলাকার বাজারে এলে পাটের দাম আরও বাড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
জেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জমি তৈরি থেকে শুরু করে পাট শুকানো পর্যন্ত বিঘাপ্রতি চাষে খরচ হয়েছে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। চলতি বছর এক বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১৩ মণ পাট পাওয়া গেছে। সঙ্গে পাটকাঠি বিক্রি করেও আশানুরূপ অর্থ পাচ্ছেন কৃষকরা।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা ক্ষেত থেকে পাট কেটে জমিতে রাখছেন। এরপর সেগুলোর পাতা ঝরিয়ে খাল, বিল, ডোবা কিংবা নদীতে পঁচানোর পর আঁশ ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকাচ্ছেন। দু-একদিনের রোদেই পাট শুকিয়ে সংরক্ষণ বা বিক্রির উপযোগী করে তুলছেন। বদ্ধ জলাশয়ের তুলনায় প্রবহমান জলাশয়ের পানিতে পাট পঁচালে পাটের মান ও রং ভালো হয়। বাজারে দামও ভালো পাওয়া যায়।
জেলার শৈলকুপা উপজেলার পদ্মনগর এলাকার কৃষক মজিবর রহমান বলেন, এবার তিন বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছি। বিঘায় গড়ে ১০ থেকে ১৩ মণ হারে পাটের ফলন হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় আমি অনেক বেশি পাট পেয়েছি।
সদর উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের কৃষক মোবাশ্বের জানান, তিনি কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে ক্ষেত থেকে পাট কেটে ১৫ দিন পানিতে পঁচানোর পর পরিষ্কার করছেন। এরপর রোদে শুকিয়ে বিক্রি করবেন। নদীর পানিতে পঁচানো ও পরিষ্কার করার কারণে পাটের মান ভালো হয়েছে।
যুগনী গ্রামের কৃষক মোস্তাক খা বলেন, আমাদের এলাকায় নদী বা খাল নেই। তাই ডোবা বা পুকুরেই পাট পঁচাতে হচ্ছে। যার কারণে
মান কিছুটা খারাপ হচ্ছে। এ বছর পানি বেশি হওয়ায় পঁচানোর স্থানের অভাব হয়নি। অন্যদিকে পাটের দাম ভালো থাকায় মান খারাপের পরও লোকসান হচ্ছে না।
কালীগঞ্জ পৌরসভাধীন আনন্দবাগ গ্রামের পাটচাষি রবিউল ইসলাম জানান, গত মৌসুমে পাটের ভালো দাম পেয়ে চলতি মৌসুমে এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। এক বিঘা জমিতে চাষ করতে প্রায় ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার। শুক্রবার পাট বিক্রি করেছেন ২ হাজার ৯০০ টাকা মণ দরে। সে হিসেবে এবার ভালো লাভ হবে বলে তার ধারণা।
হাটগোপালপুর বাজারের পাট ব্যবসায়ী সাজু কুন্ডু জানান, পাটের বাজারদর ওঠানামার মধ্যেই আছে। এটি স্থিতিশীল হলে এবং পুরোদমে বাইরের ব্যাপারীরা বাজারে আসা শুরু করলে মণপ্রতি দাম আরও বাড়বে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজগর আলী জানান, পাটের মান ভালো রাখার জন্য প্রবহমান এবং পরিষ্কার পানিতে পঁচানোর জন্য কৃষকদের বলা হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে কয়েক কেজি ইউরিয়া সারও ছিটানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পঁচানোর ক্ষেত্রে গাছের পাতা বা কাদামাটি এড়িয়ে চলতে হবে। তিনি আরও জানান, গেল মৌসুমে জেলায় পাটের উৎপাদন হয়েছিল ৫৯ হাজার ২শ’ ৬৮ মেট্রিকটন। চলতি মৌসুমে উৎপাদন আরও বেশি হবে।