ডেস্ক নিউজ
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে ‘জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড: স্বাধীনতার ৫০ বছর’ শীর্ষক এক সেমিনারে আলোচকরা আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রাষ্ট্র বিরোধী শক্তির তৎপরতার উল্লেখ করেছেন। বক্তারা বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী দেশিবিদেশি এই অপশক্তির অপতৎপরতা ঠেকাতে হলে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শধারী শক্তির আত্মতুষ্ট হবার সুযোগ নেই, বরং সময়ের প্রয়োজনে তাদের অধিকতর যৌগ্য হয়ে ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে।
সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরাম আয়োজিত অনলাইন সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ফোরামের কার্যনিবাহী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহা. নুরুল আলম। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ফোরামের মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, সাবেক আইজিপি একেএম শহিদুল হক, বিশ^বিদ্যালয় মঞ্চুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, ফোরামের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ম. হামিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মে. জে. (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ কামালউদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মনসুর আহমদ, নির্বাহী সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. খন্দকার শওকত হোসেন, যুগ্ম প্রচার সম্পাদক মুঈদ হাসান তড়িৎ, সদস্য মুস্তাকিম আহমেদ সানী সহ অনেকে।
জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তাগণ বলেন, স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের ওপর আঘাতটি ছিল সুপরিকল্পিত। কারণ এই আঘাতের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সকল অর্জন নস্যাৎ করার চেষ্টা হয়েছিল। তারা আরও বলেন, সম্মিলিত শক্তিতে এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে।
মূল বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক হারুন হাবীব বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিপক্ষরা আগের মতোই স্বক্রিয়, তারা যে কোনো মূল্যে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক জাতিসত্তার শক্তিকে বিনাশ করতে চায়, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে অস্বীকার করতে চায়। অতএব আত্মতুষ্টি নয়, বরং সময়ের নিরীখে বঙ্গবন্ধুর সৃষ্ট বাংলাদেশকে তার মৌলিক সত্তা প্রতিরক্ষা দেওয়ার সামর্থ অর্জন করতে হবে। পরিবর্তিত সময়ে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক শক্তিকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবান সৈনিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।
বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু স্বাধীনতাÑউত্তর রাজনীতির পূর্বাপর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ অবিভাজ্য সত্তা। স্বাধীনতাÑউত্তর একাধিক ষড়যন্ত্রের ব্যাক্ষা দিয়ে জনাব ঠান্ডু বলেন, খন্দকার মোসতাক ও ঘাতক বাহিনীর সাথে পরোক্ষে যুক্ত হয়েছিলেন সেদিনের সেনাবাহিনীর ডেপুটি প্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান। জনাব ঠান্ডু মৌলানা ভাষানী ও জাসদের উগ্রবাদী ভূমিকারও তীব্র সমলোচনা করেন। বলেন, এইসব অপরিনামদর্শি আচরণ ও ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকান্ডের ফলেই স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে জাতির জনককে আঘাত করার ক্ষেত্র তৈরি হয়।
অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বঙ্গবন্ধু হত্যাকন্ডের পেছনের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র স্ববিস্তারে উল্লেখ করে জে. জিয়াউর রহমানকে ১৯৭৫ এর হত্যাকান্ডের অন্যতম প্রধান কুশিলব বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন,বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর পরই খুনি মোসতাক জে. জিয়াকে সেনা বাহিনীর প্রধান নির্বাচিত করে তাকে পুরস্কৃত করে। তিনি ঘরের শত্রুদের প্রতি প্রখর নজর দিতে অনুরোধ জানান।
ডা. সারওয়ার আলী বাঙালির অসাম্প্রদায়িক জাতিসত্তার শত্রুদের সাম্প্রতিক তৎপরতা ও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নবতর ষড়যন্ত্রের দিকেও নজর দিতে অনুরোধ জানান। তিনি সুশাসন প্রতিষ্ঠার দিকেও শতর্ক দৃষ্টি দিতে বলেন। অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার অভিযোগ করেন, সেদিনের সেনবাহিনীর কর্তা ব্যক্তিরা সেদিন কেবল বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতেই ব্যর্থ হননি, একই সঙ্গে তারা তাদের শপথ থেকেও বিচ্যুত হয়েছিলেন। কারণ সেই শপথে জীবনের বিনিময়ে দেশের সংবিধান রক্ষার কথা বলা ছিল।
সাবেক আইজিপি শহিদুল হক পরিকল্পিত ইতিহাস বিকৃতির প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সেদিনের মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন বলে যে অপপ্রচার চালানো হয়, তার তীব্র প্রতিবাদ হওয়া উচিৎ। কারণ এইসব অপপ্রচারের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার ইতিহাস এবং বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনৈতিক ভূমিকা ও তাঁর আত্মত্যাগকে বিকৃত করার চেষ্টা করা হয়। তিনি ১৯১৭ এর প্রত্যক্ষদর্শিদের এ ব্যাপারে প্রকাশ্য ভূমিকা রাখার আহবান জানান।
সভার সভাপতি বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক এডিশনাল আইজিপি জনাব নুরুল আলম ১৯৭৫ সালে গোপালগঞ্জের মহকুমা পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব পালনকালে বঙ্গবন্ধুর লাশ দাফনে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ঘাতক বাহিনীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সেদিনের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সেক্টর কমান্ডার জেনারেল খালেদ মোশাররফের কণ্যা সাবেক সাংবদ ও ফোরামের সদস্য মাহজাবিন খালেদ।