ডেস্ক নিউজ
হাসান গোর্কি, রংপুর থেকে : দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া রংপুরের শতরঞ্জি। এই পণ্য রপ্তানি করে আসবে মোটা অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা। এটি রংপুরের ঐতিহ্যবাহী বুননশিল্প। যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। সম্প্রতি জামদানির পর এবার রংপুরের শতরঞ্জি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। শতরঞ্জিকে স্বীকৃতি দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)। যা এখন রংপুরবাসীর গৌরব। এ নিয়ে উচ্ছ¡সিত এখানকার শতরঞ্জি শিল্পের সঙ্গে জড়িত মালিক-শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই। পাশাপাশি আনন্দিত চেম্বার অব কমার্স, মেট্রোপলিটন চেম্বারসহ অন্যরাও।
ত্রয়োদশ শতাব্দীতে রংপুরে শতরঞ্জি বুননের কাজ শুরু হয়। বর্তমান বিশ্বে শতরঞ্জি চাহিদা ব্যাপক। শতরঞ্জি তৈরিতে কোনো ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না। এটি হস্তজাত পণ্য। বাঁশ ও রশি দিয়ে টানা দেয়া হয়। পাটের তৈরি সুতো দিয়ে সম্পূর্ণ হাতে নকশাখচিত শতরঞ্জি তৈরি করা হয়। কোনোরকম জোড়া ছাড়া শতরঞ্জি তৈরি করা যায়।
জিআই পণ্য হিসেবে রংপুরের শতরঞ্জি নিবন্ধনের জন্য ২০১৯ সালের ১১ জুলাই বিসিক পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমাক্স অধিদপ্তরে আবেদন করে। পরে ২০২০ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ফর্মস এন্ড পাবলিকেশন্স অফিসে ‘রংপুরের শতরঞ্জি’র জার্নাল প্রকাশিত হয় এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে শতরঞ্জির ভৌগোলিক নির্দেশক সনদ দেয় ডিপিডিটি।
অষ্টাদশ শতকের চল্লিশের দশকে ব্রিটিশ নাগরিক মি. নিসবেত তৎকালীন রংপুর জেলার কালেক্টর ছিলেন। সে সময়ে নিসবেতগঞ্জ মহল্লার নাম ছিল পীরপুর। সেই পীরপুর গ্রামে তৈরি হতো মোট মোটা ডোরাকাটা রং-বেরংয়ের সুতার তৈরি গালিচা বা শতরঞ্জি। মি. নিসবেত এসব শতরঞ্জি দেখে মুগ্ধ হন। পরবর্তীতে তিনি শতরঞ্জির গুণগতমান উন্নয়ন এবং এ শিল্পের প্রচার ও প্রসারে সহায়তা প্রদান করেন এবং উৎপাদিত পণ্যের ব্যাপক বিপণন ব্যবস্থা করেন।
৭০০ বছর আগের ঐতিহ্য রংপুরের শতরঞ্জি জিআই সনদ লাভ করায় খুশি এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত মালিক, শ্রমিক ও স্থানীয় সুধীমহলের সবাই। শতরঞ্জিসহ ছয় পণ্য ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই) হিসেবে সনদপত্র পেয়েছে।
ফলে নতুন করে প্রাণের স্পন্দন ফিরে পেয়েছে গৌরবময় প্রাচীন এ শতরঞ্জিশিল্প। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কারুপণ্যের শতরঞ্জি এখন বিশ্বের ৭১টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
কারুপণ্যের জনসংযোগ উপদেষ্টা মাহবুব রহমান শতরঞ্জির জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার ব্যাপারে ভোরের কাগজকে বলেন, এতে করে রংপুরের শতরঞ্জি এখন বিশ্বের কাছে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এ পণ্যটির মূল্যায়নের পাশাপাশি মূল্যও বেড়ে গেছে। বিদেশে শতরঞ্জির রপ্তানি বিষয়টি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিভিন্ন বড় বড় এনজিও প্রতিষ্ঠানসহ ৩টি বায়ার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শতরঞ্জিগুলো রপ্তানি হয়ে থাকে। বায়ার প্রতিষ্ঠনগুলোর অর্ডার মতে শতরঞ্জিগুলো তৈরি হয়। তারাই সেগুলো বিদেশে পাঠিয়ে দেন। জিআই পণ্য হিসেবে বিদেশে গেলে উচ্চমূল্যের কারণে বাড়বে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা। উপকৃত হবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরাও।