ডেস্ক নিউজ
দেশে রেললাইন নেই এমন স্থানের মধ্যে থাকা পার্বত্য চট্টগ্রামকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার।
এই উদ্যোগ সফল হলে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে যাবে রেল। তিন পাবর্ত্য জেলার মধ্যে এটি সবার আগে রেল নেটওয়ার্কের মধ্যে আসবে।
এজন্য চট্টগ্রাম থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটারের অধিক রেললাইন স্থাপনে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পের প্রাথমিক প্রস্তাব তৈরি করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রেল মন্ত্রণালয়ের মহাপরিকল্পনার একটি অনুষজ্ঞ হচ্ছে পাহাড়ি অঞ্চলে রেল যাতায়াত সুবিধা পৌঁছে দেওয়া।
“এ জন্য ‘জানালীহাট-চুয়েট-কাপ্তাই ডুয়েল গেজ সংযোগ রেললাইন নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্পে হাত দিয়েছি। ইতোমধ্যে এটির প্রাথমিক বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তাব- পিডিপিপি তৈরি করা হয়েছে।”
রাঙ্গামাটি-কাপ্তাইসহ দুর্গম পাহাড়ি এলাকার উৎপাদিত পণ্য সহজে চট্টগ্রাম নগরীতে বাজারজাতকরণ এবং পর্যটকদের জন্য জনপ্রিয় রেল ভ্রমণ সুবিধা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপনের এই পদক্ষেপ নিয়েছে রেলওয়ে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
অর্থায়ন নিশ্চিত হলে আগামী ২০২৬ সালের মধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চায় রেল কর্তৃপক্ষ।
এই বিষয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, “প্রকল্পটির জন্য বৈদেশিক অর্থায়নের প্রয়োজন রয়েছে। তাই আমরা বিদেশি অর্থায়ন পেতে প্রকল্পটির প্রয়োজনীয় দলিলাদি ইআরডিতে পাঠিয়েছি। ইআরডি অর্থায়নকারী সংস্থা ঠিক করে জানালে আমরা প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব তৈরি করব।
“দাতাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া সাপেক্ষে বলতে পারব প্রকল্পটির কাজ কবে নাগাদ শুরু করতে পারব। তহবিল সংগ্রহে যত দেরি হবে, প্রকল্প বাস্তবায়নেও তত দেরি হবে।”
পাহাড়ে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হলে ওই অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে বলে মনে করেন মন্ত্রী।
প্রকল্পটির বিষয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, প্রস্তাবিত ৪২ দশমিক ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা।
এরমধ্যে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৭ হাজার ১৪১ কোটি টাকা এবং বাকি ১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়ার প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে রেল বিভাগের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা এসএম সলিমুল্লাহ বাহার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রেলের মহাপরিকল্পনায় পার্বত্য এলাকার মানুষকেও রেল সেবা দেওয়ার পরকিল্পনা রয়েছে। এছাড়া ওই রুটে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চুয়েট অবস্থিত। সব মিলিয়ে কাপ্তাই, রাঙ্গুনিয়া ও রাউজানের সাধারণ মানুষকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনতেই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।”
রেল মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি দুই পর্যায়ে বাস্তবায়নের প্রাথমিক পরিকল্পনা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রথম পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে চট্টগ্রামের জানালীহাট থেকে রাউজানে অবস্থিত চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়- চুয়েট পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৩১ কিলোমিটার রেল লাইন।“
পিডিপিপি অনুযায়ী প্রথম অংশের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। এতে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সম্ভাব্য অর্থায়ন ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা এবং সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে ৮২৮ কোটি টাকা।
দ্বিতীয় পর্যায়ে চুয়েট থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত ২৭ দশমিক ৮৬ কিলোমিটারের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে দাতাদের কাছ থেকে ৩ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা এবং সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৯৫৬ কোটি টাকা পাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।