ডেস্ক নিউজ
সহায়সম্বল শেষ করে দেশে ফিরে এসে হতাশায় ডুবে যান প্রবাসী কর্মীরা। হাতে কাজ না থাকায় আর মাথার ওপর ঋণের বোঝা সব মিলিয়ে জীবনটা তাদের হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। কাজ না পাওয়ায় আর ঋণ শোধের চিন্তায় যখন ধুঁকে ধুঁকে জীবন চলছে তখন আশা দেখিয়েছে ‘প্রবাসীর ট্যাক্সি’। বিদেশ ফেরত দক্ষ চালকদের জন্য আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখাচ্ছেন এর সঙ্গে যুক্ত বিদেশফেরত প্রবাসীরাই। এই উদ্যোগের মূল কর্তা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগের তথ্য কর্মকর্তা আল আমিন নয়ন। তার উদ্যোগে সহায়তা করছেন আল জাজিরায় সাক্ষাৎকার দিয়ে আলোচিত এবং মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরত পাঠানো রায়হান কবীর। বর্তমানে তিনিও ব্র্যাকে চাকরি করছেন।
উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিমানবন্দরে প্রবাসীদের বাড়ি ফেরা নিয়ে অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়, এর মধ্যে অতিরিক্ত দামে ট্যাক্সি বা গাড়ির ব্যবসার সিন্ডিকেটের হয়রানি অন্যতম। তাছাড়া দেশে ৪৮ শতাংশ প্রবাসফেরতরা ভুগেন বেকারত্বের তীব্র যন্ত্রণায়,তাদের কর্মসংস্থান ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন উদ্যোগের একটি এই ‘প্রবাসীর ট্যাক্সি’ কনসেপ্ট। প্রবাস থেকে ফেরত এসে যদি কাজ না থাকে এবং তিনি যদি দক্ষ চালক হন তাহলে তার জন্য ‘প্রবাসীর ট্যাক্সি’ উদ্যোগের দরজা খোলা। শুধু বিমানবন্দর থেকে প্রবাসীদের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নয়, সারাদেশে ভাড়ায় চালাতে পারবেন গাড়ি এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে।
এই মুহূর্তে ৮টি গাড়ি যুক্ত হয়েছে এই উদ্যোগের সঙ্গে। বিদেশফেরত কর্মী যারা দক্ষ চালক তাদের তালিকা ধরে ব্যাপক আকারে এর প্রসার বাড়ানোর উদ্যোগের কথা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন আল আমিন নয়ন। এর জন্য একটি অ্যাপ তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। শুধু তাই নয় এই উদ্যোগ থেকে প্রতি আয়ের ৩ শতাংশ পাবে উদ্যোক্তারা এবং ২ শতাংশ যাবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের কল্যাণ তহবিলে। একটি নম্বরে কল দিয়েই পাওয়া যাবে এই সেবা।
আল আমিন নয়ন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার কাছে মনে হলো যে একেক খাতের একেক জনকে কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, অন্তত ১০ জনকে যদি একত্রে করে এক জায়গায় একটা গ্রুপ করা যায় তাহলে হয়তো একসময় একটা বড় কিছু হতে পারে। সেই জায়গা থেকে প্রবাসীর ট্যাক্সি পথচলা।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন আমি এয়ারপোর্টে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি যে, আমাদের প্রবাসী কর্মীরা এয়ারপোর্টকেন্দ্রিক রেন্ট এ কারগুলোর কাছে বিভিন্ন সময়ে হয়রানির শিকার হন, অতিরিক্ত মাত্রায় ভাড়া দিতে হয়, নানা সমস্যায় পড়তে হয়। সেখান থেকেই ভাবলাম যে যারা বিদেশে গাড়ি চালাতো , দেশে এসে তারা ভাড়ায় গাড়ি চালাচ্ছে তাদেরকে একত্রিত করার চেষ্টা করলাম।
তিনি আরও বলেন, যার গাড়ি আছে, কেউ হয়তোবা গাড়ি চালকের চাকরি করে এসেছে এরকম কয়েকজনকে নিয়ে আমরা কেবল শুরু করলাম।
রায়হান কবীর জানান, আমরা প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলকভাবে চালাচ্ছি এখন। ব্র্যাকের এক সমীক্ষা বলছে – ৪৮ শতাংশ প্রবাসী দেশে আসার পর বেকারত্ব সমস্যায় ভুগে। প্রবাসী কর্মীদের পুনরায় একত্র করার উদ্দেশে অনেক প্রকল্প ব্র্যাকের আছে। এর বাইরে আমরা নিজস্ব উদ্যোগে কর্মসংস্থান তৈরির চেষ্টা করছি। আমাদের কাছে বিদেশফেরত দক্ষ চালকদের তালিকা আছে যারা দেশে এসেছে কিন্তু বেকার। তাদের নিজেদের দক্ষতা কাজে লাগানোর সুযোগ নেই। তাদের নিয়েই আমরা শুরু করেছি।
প্রবাসীর ট্যাক্সি অ্যাপের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে জানিয়ে রায়হান বলেন, এই অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসীর ট্যাক্সি পরিচালনা করা হবে। প্রবাস ফেরত ব্যাক্তিরাই এখানে কাজ করবে এবং প্রবাস ফেরতদেরকেই এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে তার গন্তব্যে যাবে। আমাদের কার্যক্রম চলছে, অ্যাপ তৈরি করার কাজ করছি।