ডেস্ক নিউজ
বেজমেন্টের ছাদ হয়ে গেছে। প্রথম তলার পিলারগুলোও তর তর করে ওঠে যাচ্ছে। প্রথম তলার ছাদের একাংশও হয়ে গেছে। এলিভেটেড ওয়ের পিলারও দাঁড়িয়ে গেছে। ওদিকে এয়ারসাইটে চলছে ট্যাক্সিওয়ে ও এপ্রোনের কাজ। সঙ্গে কালভার্ট ও ড্রেনেজের কাজ। সুবিশাল লং বুম সাজানো সারি সারি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের কাজ এভাবেই চলছে দিবারাত্রি। খিলক্ষেত থেকে উত্তর দিকে যেতেই মহাসড়কের লাগোয়া পশ্চিমে চোখে পড়ে ওই বিশাল কর্মযজ্ঞ। দেখলে মনে হয় যেন দ্রুত পূর্ণ হতে যাচ্ছে এক স্বপ্নের এয়ারপোর্ট। এরই মধ্যে কাজ শেষ হয়ে গেছে টাউনসাইটে ২২ শতাংশ আর বাউন্ডারির আড়ালে এয়ারসাইটে ৩০ শতাংশ। মূল টার্মিনাল ভবনের ৬৮৬টি কলামের মধ্যে ৬৫০টির কাজই সম্পন্ন করা হয়েছে। কঠিন ও সময় সাপেক্ষের সব কাজই সমাপ্তির পথে। এখন দ্রুত ওঠে যাবে বাকি কাজ। তিন তলা ভবনের প্রথম তলার পুরো ছাদই দৃশ্যমান হবে আগামী ডিসেম্বরে। গত শনিবার ছুটির দিনেও গিয়ে দেখা যায়- বিরতিহীন কর্মব্যস্ততা। শত শত শ্রমিক, দেশী-বিদেশী প্রকৌশলী, বিশেষজ্ঞ ও কর্তাদের ঘর্মাক্ত শরীর। করোনার ভয়? সে তো উপেক্ষা শুরু থেকেই। সব ধরনের ভয়ভীতি উপেক্ষা করেই তারা পালন করছেন দেশ গড়ার এই পবিত্র দায়িত্ব। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তারা খেটে চলছেন ইতিহাস গড়ার অংশীদার হতে। দেশের তো বটেই- এটি হবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অত্যাধুনিক ও সুবিশাল এয়ারপোর্ট। ২ লাখ ৬০ হাজার মিটার আয়তনের এই বিমানবন্দরের প্রতিটি ধাপেই চলছে সুনিপুণ কর্মকৌশল। অত্যাধুনিক স্থাপত্যরীতিতে গড়ে উঠছে থার্ড টার্মিনাল। কৃত্রিম বুদ্ধিভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে এ বিমানবন্দর। বিমানবন্দরের যে কোন পয়েন্টে বিন্দুমাত্র ত্রুটি দেখা দিলে মুুহূর্তেই সে সিগন্যাল চলে যাবে সেন্ট্রাল ডাটা ব্যাংকে-যেখান থেকে মুুহূর্তেই সেটার সমাধান দেয়া যাবে।
এ বিমানবন্দর ঘিরে মানুষেরও কৌতূহলের শেষ নেই। দৃষ্টিনন্দন তো বটেই, মন জুড়িয়ে যাওয়ার মতো নৈসর্গিক দৃশ্য সম্বলিত বেশ কিছু স্থাপনা থাকছে এখানকার প্রবেশপথে। নিকুঞ্জের পয়েন্ট থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ওপরে দোতলায় ওঠে আবার উত্তর দিকে আন্ডারগ্রাউন্ড দিয়ে নির্বিঘ্নে-নিরাপদে বের হয়ে যাবার সুগম পথ থাকছে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান জানিয়েছেন- করোনাভীতি উপেক্ষা করে কাজ চললেও সম্প্রতি কয়েকটা মাস কাজের কিছুটা মন্থর হয়ে পড়ে। নইলে আরও এগিয়ে যাবার সুযোগ ছিল। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি ২৩ সালের ডিসেম্বরে যে কোন উপায়েই সব কাজ শেষ করে উদ্বোধন করতে। এটা করতেই হবে। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম স্বপ্নের প্রজেক্ট। এখানে যারাই কাজ করছেন তাদের মাঝে একটা আলাদা আবেগ কাজ করছে। দেশী-বিদেশী সবাই সমান দক্ষতায় নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করছেন।
সরজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, একদিকে করোনার ছোবল অন্যদিকে বর্ষার বাধা। তবুও থেমে নেই বিশাল কর্মযজ্ঞ। সব চলছে অবিরাম। দেড় হাজার শ্রমিক। অর্ধশত ক্রেন। সমসংখ্যক রিগার। ট্রাক আসছে দিবারাত্রি। চৌহদ্দি জুড়ে সার্বক্ষণিক খটর খট শব্দ। হাইভোল্টেজের বাতি রাতের অন্ধকারের বুক চিড়ে আলোর দ্যুতি ছড়ায় চারদিকে। দূর দিগন্ত থেকেও বুঝা যায়- হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ যজ্ঞ। এই মেগাপ্রকল্পের কাজ যে গতিতে এগিয়ে চলছে তাতে সন্তোষ্ট, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সিনিয়র সচিব মোঃ মোকাম্মল হোসেন ও চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মোঃ মফিদুর রহমান। তাদের মতে-শত প্রতিকূলতার মাঝেও দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে থার্ড টার্মিনালের প্রকল্প। প্রথম দফায় শেষ করা হবে টার্মিনাল, তারপর ধাপে ধাপে কার্গো, ট্যাক্সিওয়ে, ফ্লাইং ক্লাব, কানেক্টিং রোডসহ অন্যান্য স্থাপনা।
বেবিচক প্রকৌশল শাখার মতে- পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এ প্রকল্পে থাকছে ৩৭টি উড়োজাহাজ রাখার এ্যাপ্রোন ও ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি রাখার সুবিধা, ৬৩ হাজার বর্গফুট জায়গায় আমদানি-রফতানি কার্গো কমপ্লেক্স, ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার। সব মিলিয়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিমানবন্দরের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে থার্ড টার্মিনালে। এটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দরের সারিতে নাম লেখাবে শাহজালাল। ২০১৯ সালের নবেম্বরে শুরু হওয়া এ টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল বিমানব›ন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। বৃহৎ এই টার্মিনাল নির্মাণের ব্যয় প্রথমে ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে প্রকল্প ব্যয় সাত হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়ানো হয়। নির্মাণকাজে অর্থায়ন করছে জাইকা। টার্মিনালটিতে দুই লাখ ৩০ হাজার মিটার আয়তনের একটি ভবন তৈরি করা হবে। ভবনটির নক্সা করেছেন বিখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন। তিনি এনওসিডি-জেভি জয়েন্ট ভেঞ্চার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিপিজি কর্পোরেশন প্রাইভেট লিমিটেডের (সিঙ্গাপুর) স্থপতি। জাপানের শীর্ষ নির্মাতা কোম্পানি সিমুজি ও কোরিয়ার সেরা স্যামস্যাং নামের দুটো প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি) নামের প্রতিষ্ঠানটিই বর্তমানে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। জাপান ও কোরিয়ার অন্তত চার শতাধিক দক্ষ জনবল এখানে সক্রিয় রয়েছেন। করোনার তা-ব উপেক্ষা করেই তারা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রকল্পটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক। প্রকল্প পরিচালক হিসেবে আছেন প্রকৌশলী মাকসুদুল ইসলাম।
সরেজমিনে টার্মিনালের নির্মাণাধীন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বৃষ্টি আর কাদার মধ্যেও পুরোদমে নির্মাণকাজ চলছে। জায়গাটির ভূমি উন্নয়নের কাজ আগেই শেষ হয়েছে। সবগুলোর পাইলিংয়ের কাজও শেষ। মোট কথা বেইজমেন্টের কাজ শেষ। এখন শুধু ফিনিশিং বাকি। এভাবে প্রথম ফ্লোরের ছাদের একাংশও হয়ে গেছে। বাকি ঢালাই শেষ হয়ে যাবে ডিসেম্বরে। তখন দৃশ্যমান হবে প্রথম তলার পুরোটাই। তারপর আসছে বছরে শেষ করা হবে দুই ও তিনতলার পুরো কাজ। এভাবেই ২০২৩ সালের ডিসেম্বরেই সব কাজ শেষ করে শুভ উদ্বোধনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বেবিচক। এজন্য দিবারাত্রি এই বিশাল কর্মযজ্ঞ তদারকি করছেন বেবিচক চেয়ারম্যান। প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেকের নেতৃত্বে একদল দেশী-বিদেশী অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর সমন্বয়ে পূর্ণোদ্যমে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ কাজের মূল্যায়ন সম্পর্কে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান জানান, তিনি প্রতি সপ্তাহে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ডেকে কাজের আপডেট নিচ্ছেন। কোথাও কোন ধরনের ব্যত্যয় ঘটলে ত্বরিত পরামর্শ দিচ্ছেন। বিশেষ করে করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্মাণকাজের বিষয়ে সতর্ক ও সজাগ রয়েছেন। যে কারণে করোনাও বাধা হতে পারেনি এখানে। নির্ধারিত সময়েই কাজ সম্পন্ন করা হবে। এই বিমানবন্দর বিশ্বের দৃষ্টিনন্দন ও অত্যাধুনিক বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে একটি হবে। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ অনেকাংশেই কমবে। পাশাপাশি এ বিমানবন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, থার্ড টার্মিনালের ভেতরে ভবনটির নক্সা যে বিখ্যাত স্থপতি করেছেন, সেই রোহানি বাহারিন বিশ্বের কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন ও অত্যাধুনিক বিমানবন্দর ভবনেরও নক্সাবিদ। তার নক্সা কাজের মধ্যে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোটের টার্মিনাল-৩, চীনের গুয়াংজুর এটিসি টাওয়ার ভবন, ভারতের আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ইসলামাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উল্লেখযোগ্য। এছাড়া মালদ্বীপ, ফিলিপিন্স, কম্বোডিয়া, ব্রুনাই, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরের বিভিন্ন প্রকল্পের নক্সা করেন তিনি। তৃতীয় টার্মিনালের ভবনে বহির্গমনের (ডিপার্চার) জন্য ১৫টি সেলফ চেক-ইন (স্ব-সেবা) কাউন্টারসহ মোট ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে। বহির্গমনে ৬৪ ও আগমনী যাত্রীদের জন্য ৬৪টি ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকছে। এছাড়া ২৭টি ব্যাগেজ স্ক্যানিং মেশিন, ১১টি বডি স্ক্যানার, ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ ও ১৬টি লাগেজ বেল্ট থাকবে। বর্তমানে ভিভিআইপিদের জন্য শাহজালালে পৃথক একটি কমপ্লেক্স থাকলেও তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের ভেতরে কমপ্লেক্স না করে পৃথক ভিভিআইপি স্পেস রাখার কথা ছিল। তবে প্রকল্পে কিছু টাকা উদ্বৃত্ত করে এখন সেটা দিয়ে একটি ভিভিআইপি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। স্বাভাবিক সময়ে শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে দৈনিক ১৩০টি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে ২৫-৩০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। বর্তমানে এই বিমানবন্দর বছরে ৮০ লাখ যাত্রী হ্যান্ডেল করতে সক্ষম। তৃতীয় টার্মিনাল হওয়ার পর শাহজালালের হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বেড়ে দুই কোটিতে গিয়ে ঠেকবে। এ সম্পর্কে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী এমপি বলেন- নির্মাণকাজ নিজ গতিতে চলছে। নির্মাণ স্থানের মাটির অবস্থার কারণে স্ক্রুড পাইলিংয়ের পরিবর্তে বোর পাইলিংয়ের কাজ হয়েছে। এর কারণে প্রকল্প ব্যয় কোনভাবেই বাড়বে না। বরং মোট প্রকল্প ব্যয় থেকে ৭৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। সাশ্রয়কৃত টাকা দিয়েও সরকার ও জাইকার সম্মতি এবং অন্যান্য বিধিগত প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি সাপেক্ষে তৃতীয় টার্মিনালে নির্মিতব্য ১২টি বোর্ডিং ব্রিজের অতিরিক্ত আরও ১৪টি বোর্ডিং ব্রিজ ও একটি ভিভিআইপি টার্মিনাল কমপ্লেক্স নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল মোঃ মফিদুর রহমান জানান, বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা মহামারীতেও সব কিছু থমকে দাঁড়ালেও থেমে নেই দেশের অন্যতম এই মেগা প্রকল্পের কাজ। প্রকল্প শুরুর কয়েক মাস পরই দেখা দেয় করোনা মহামারী। এতে শুরুতেই হোঁচট খেতে হয়েছে। কিন্তু বেবিচক এ বিষয়ে বিকল্প পন্থায় স্বাস্থ্যবিধির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্পে নিয়োজিত শ্রমিক থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-সবার প্রতি বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। প্রকল্পের ভেতরে একটি প্রাথমিক চিকিৎসা ইউনিট চালু করা হয়। সবাইকে মাস্ক পরে ও অন্যান্য স্যানিটাইজেশন নিশ্চিত করেই কাজে যেতে হয়। তাছাড়াও রাজধানীর দুটো হাসপাতালের সঙ্গে প্রাধিকারের ভিত্তিতে করোনার টেস্ট ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। এতে যারা প্রথমদিকে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের চিকিৎসা দেয়ার পর সুস্থ হয়ে আবার কাজে ফিরেছেন। এভাবে ভয়কে জয় করে কাজের গতি বজায় রাখার প্রাণপণ চেষ্টা চলছে। যদি করোনার তা-ব দেখা না দিত তাহলে এতদিনে আরও অগ্রগতি চোখে পড়ত।
জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক বলেন, এ ধরনের প্রকল্পে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং হচ্ছে মাটি ও বালু ভরাট। টার্মিনাল ভবনের মূল ভিত্তিটায় মাটি ও বালু ভরাট অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। ৫ কোটি ঘনফুটের মধ্যে দুই কোটি ঘনফুট বালু আনা হয়েছে। মাটি আনাও শেষ। সেই মেঘনা দাউদকান্দি থেকে বালু এনে পাহাড় গড়া হয়েছে। দিবারাত্রি ট্রাক আনলোড করা হচেছ। একযোগে কাজ চলছে প্রতিটি বিভাগে। একদিকে বালু আনা, সেই বালু আনলোাড করে পাহাড়ের ন্যায় স্তূপকার করা, সেখান থেকে বালু নির্দিষ্ট পয়েন্টে ছড়িয়ে দিয়ে বুলডোজার দিয়ে তা মিশিয়ে সমান তালে মসৃণ করে শক্তিশালী ভিত তৈরি করা হয়েছে। তার ওপর চলেছে রিগারের কাজ। একই তালে পাইলিং। ইতোমধ্যে সব পাইলিং হয়ে গেছে। ৬৮০ পিলারের মধ্যে ৬৫০টির কাজ শেষ।
এদিকে স্বপ্নের এই থার্ড টার্মিনালের মান ও সুযোগ সুবিধা নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতূহল অনেক। এক সঙ্গে কতগুলো ফ্লাইট বোর্র্ডিং ব্রিজ সুবিধা পাবে, ইমিগ্রেশন কতটা আধুনিক হবে, যানজট মোকাবেলার সুযোগ সুবিধা নিয়ে অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হচ্ছে প্রকৌশল বিভাগকে। থার্ড টামিনাল বর্তমান টার্মিনাল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা চিত্রের। দৃৃষ্টিনন্দন বলতে যা বুঝায় তেমনই স্থাপত্যরীতিতে তৈরি করা হয়েছে এর নক্সা। প্রায় সাড়ে তিন শ’ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে থার্ড টার্মিনালের গোটা প্রকল্প। এখানে থাকবে কেবিন এক্সরে মেশিন ৪০টি, বোর্ডিং ব্রিজ ১২টি, কনভেয়ার বেল্ট ১৬টি, বডি স্ক্যানার ১১টি, টানেলসহ বহুতল বিশিষ্ট কারপার্কিং ৫৪ হাজার বর্গমিটার, নতুন ইমপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স এবং নতুন এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স ৬৩ হাজার বর্গমিটার, রেসকিউ ও ফায়ার ফাইটিং স্টেশন এবং ইক্যুইপমেন্ট ৪ হাজার বর্গমিটার, ভূমি উন্নয়ন, কানেক্টিং টেক্সিওয়ে (উত্তর) ২৪ হাজার বর্গামিটার, কানেক্টিং টেক্সিওয়ে (অন্যান্য) ৪২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার, র্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে (উত্তর) ২২ হাজার বর্গমিটার, র্যাপিড এক্সিট টেক্সিওয়ে (দক্ষিণ) ১৯ হাজার ৫০০ বর্গমিটার, সোল্ডার ৯৬ হাজার ৫০০ বর্গমিটার, জিএসই রোড ৮৩ হাজার ৮০০ বর্গমিটার, সার্ভিস রোড ৩৩ হাজার বর্গমিটার, ড্রেনেজ ওয়ার্কস (বক্স কালভার্ট ও প্রোটেক্টিভ ওয়ার্কস), বাউন্ডারি ওয়াল, সিকিউরিটি গেইট, গার্ড রুম ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ, ল্যান্ড সাইড, সার্ভিস রোডসহ এলিভেটেড রোড, ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেম, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, ইনটেক পাওয়ার প্লান্ট ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম, কার্গো কমপ্লেক্সের জন্য সিকিউরিটি ও টার্মিনাল ইকুইপমেন্ট, এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সিস্টেম, হাইড্রেন্ট ফুয়েল সিস্টেমসহ আনুষঙ্গিক কাজ করা হবে। এছাড়া থাকছে অন্যতম আকর্ষণ ফানেল টানেল।