ডেস্ক নিউজ
বাংলাদেশে গাজীপুরের শ্রীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে মাত্র দুটি নীলগাই রয়েছে। এর মধ্যে একটি পুরুষ ও একটি মাদী নীলগাই। এর বাইরে দেশের কোথাও এ প্রাণী নেই।
গত ১ আগস্ট সাফারি পার্কে থাকা নীলগাই দুটি নীল গাইয়ের জন্ম দেয়। তবে, নতুন জন্ম নেওয়া শাবকের নিরাপত্তা ও প্রকৃতিতে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ থাকায় কর্তৃপক্ষ ১৭ই সেপ্টেম্বর বিষয়টি গণমাধ্যমে জানায়।
নুতন জন্ম নেওয়া শাবক দুটি থেকে পার্ক কর্তৃপক্ষ প্রায় ৮০ বছর আগে বাংলাদেশের প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়া নীলগাই প্রকৃতিতে ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখছেন।
পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান জানান, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা গ্রামের মামুদপুর-ঠুঠাপাড়া বর্ডার এলাকার বাসিন্দারা একটি নীল গাই ধরে জবাই করার প্রস্তুতি নেয়। পরে বিজিবি-৫৩ (মামুদপুর বিওপির) সদস্যরা ওই মাদী নীলগাইকে উদ্ধার করে রাজশাহীর বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগে হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে নীলগাইটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আনা হয়।
অপরদিকে, ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি নওগাঁর মান্দা উপজেলার জোতবাজার এলাকায় অপর একটি নীলগাই আটক করে জবাই করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। পরে রাজশাহীর বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ স্থানীয় উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় জবাই করার প্রস্তুতির সময় একটি পুরুষ নীলগাই উদ্ধার করে। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দিয়ে নীলগাইটি ২০১৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যানে স্থানান্তর করা হয়। পরে সেখান থেকে পুরুষ নীলগাইটি প্রজননের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আনা হয়।
পার্কের ওয়াইল্ডলাইফ সুপারভাইজার মো. সারোয়ার হোসেন খান জানান, হেমন্ত থেকে শীতকালের শুরুর সময়ে তুলনামূলক বেশি যোগ্যতা সম্পন্ন পুরুষ নীলগাই সম্মতিসূচক লেজ নাড়াচাড়ার পর মাদী নীলগাইয়ের সাথে মিলিত হয়। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পুরুষ নীলগাই একাধিক মাদী নীলগাইয়ের সাথে মিলিত হয়ে থাকে। গর্ভধারণ কাল গড়ে ২৪৩ দিন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে যমজ বাচ্চা প্রসব করে, ক্ষেত্র বিশেষে ১টি থেকে ৩টি বাচ্চাও প্রসব করে থাকে। জন্মের ৪০ মিনিটের ভেতর দাঁড়াতে পারে। পুরুষ শাবক ৩ বছর এবং মাদী ২ বছরে প্রজননক্ষম হয়ে উঠলেও এদের গড় আয়ু ২১ বছর।
এই কর্মকর্তা আরও জানান, পুরুষ নীলগাইয়ের বর্ণ গাঢ় ধুসর, অনেকটা কালচে রঙের। অনেক সময় নীলচে আভা দেখা যায় বলে এদের নীলগাই নামকরণ করা হয়েছে। শুধুমাত্র পুরুষ নীলগাইয়ের দুটি কৌনিক, মসৃণ ও সামনের দিকে কিঞ্চিত বাকানো দুটি শিং আছে। পুরুষের উচ্চতা ৫২-৫৮ইঞ্চি, শিংয়ের দৈর্ঘ্য ৮-১২ ইঞ্চি। মাদী নীলগাই এবং শাবকের রং লালচে বাদামী। কিন্তু খুরের উপরের লোম সাদা। ঠোঁট, থুতনি, কানের ভেতরের দিক ও লেজের নীচের তলদেশ সাদা। নীলগাই ছোট ছোট পাহাড় আর ঝোপ-জঙ্গলপূর্ণ মাঠে চড়ে বেড়াতে ভালবাসে। ঘন বন এড়িয়ে চলে। সচরাচর ৪ থেকে ১০ সদস্যের দল নিয়েই নীলগাই ঘুরে বেড়ায়। দলে কখনো ২০ বা তার বেশি সদস্যও থাকতে পারে।
নীলগাই সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ওয়াইল্ডলাইফ সুপারভাইজার মো. সারোয়ার হোসেন খান আরও জানান, নীলগাই গাছে ঢাকা উঁচু-নিচু সমতলে বা তৃণভূমিতে যেমন স্বাচ্ছন্দে বিচরণ করতে পারে, তেমনি আবার শস্যক্ষেতে নেমে ব্যাপক ক্ষতি করতেও পটু। সকাল আর বিকেলে খাওয়ার পাট চুকিয়ে দিনের বাকি সময়টা গাছের ছায়ায় বসে কাটায়। মহুয়া গাছের রসাল ফুল এদের দারুণ পছন্দ। পানি ছাড়া এরা দীর্ঘসময় কাটিয়ে দেয়, এমনকি গরমের দিনেও এরা নিয়মিত পানি খায় না। আত্মরক্ষার প্রধান উপায় দৌঁড়ে পালানো। দ্রুতগামী ও শক্তিশালী ঘোড়ার পিঠে না চড়ে নীলগাই ধরা প্রায় অসম্ভব।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো: শফিউল আলম চৌধুরী বলেন, সাফারি পার্কে সংরক্ষিত নীলগাই দুটি ভারত সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করার পর সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের কাছ জবাই করার পূর্ব মুহূর্তে উদ্ধার করা হয়। আর যদি ১০-২০ মিনিট দেরি হতো তাহলে মাংসের জন্য নীলগাই দুটি জবাই হয়ে যেত। বাংলাদেশের শেষ নীলগাইটিকে এভাবেই হত্যা করা হয়েছে। এভাবেই প্রায় ৮০ বছর আগে প্রকৃতি থেকে আমরা নীলগাইয়ের সমাপ্তি টেনেছিলাম।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ৮০ বছর পর ভারত থেকে আসা নীলগাই বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর তাদের গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আনা হয়। এরা জুঁটি বাধার ১১ মাস ১১ দিন পর গত পহেলা আগস্ট দুটি ফুটফুটে বাচ্চা জন্ম দেয়। বর্তমানে সবাই সুস্থ আছে।
সাফারী পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো: শফিউল আলম চৌধুরী আরও বলেন, বাংলাদেশ নীলগাই শূন্য হলেও ভারতে লাখের উপর নীলগাই রয়েছে। ৮০ বছর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের দুইটি নীল গাই বাচ্চা জন্ম দিয়েছে। আমরা আশা করছি বিলুপ্তির তালিকায় থাকা নীলগাই গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের মাধ্যমে আবারো প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরে আসবে।