ডেস্ক নিউজ
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে আবার গতি ফিরেছে। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ১৬ দিনেই ১০৯ কোটি পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বর্তমান বাজারদরে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ২৫ পয়সা) টাকার অংকে এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
এ ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
গত তিন মাস ধরে রেমিট্যান্সের গতি নিম্মমুখি। ২ বিলিয়ন ডলারের কম এসেছে। জুনে এসেছিল ১৯৪ কোটি ডলার। পরের দুই মাস জুলাই ও আগাস্টে আসে যথাক্রমে ১৮৭ কোটি ও ১৮১ কোটি ডলার।
সেক্ষেত্রে চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আসার মধ্য দিয়ে রেমিট্যান্সপ্রবাহের গতি আগের অবস্থায় ফিরতে শুরু করবে আশার কথা শুনিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘জুলাই মাসে ২১ তারিখ কোরবানির ঈদ উদযাপিত হয়। ঈদের পর ওই মাসের বাকি দিনগুলোতে খুবই কম রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। সে কারণে জুলাই মাসে ২ বিলিয়ন ডলারের কম রেমিট্যান্স দেশে আসে। তার রেশ আগস্ট মাসেও থাকে। সেপ্টেম্বর থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে বলে আশা করছি। ইতোমধ্যে তার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে।’
মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যেও অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪.৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ছিল আগের বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বা ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।
টাকার অঙ্কে ওই অর্থের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১০ হাজার ১১৫ কোটি টাকা, যা ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরের ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার জাতীয় বাজেটের এক-তৃতীয়াংশের বেশি।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বছর বা অর্থবছরে এত বেশি রেমিট্যান্স কখনই আসেনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেটে দেখা যায়, গত অর্থবছরের ১২ মাসের সাত মাসই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৬০ কোটি ডলার এসেছিল ওই অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে। যা এখন পর্যন্ত এক মাসের হিসাবে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স।
কিন্তু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ধীরগতি নিয়ে শুরু হয় ২০২১-২২ অর্থবছর। প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার দেশে পাঠান প্রবাসীরা। যা ছিল আগের চার মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। দ্বিতীয় মাস আগস্ট জুলাইয়ের চেয়েও কম রেমিট্যান্স আসে ১৮১ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিট্যান্সের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১৬ দিনে (১ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর) ১০৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। এরমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২১ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২ কোটি ৪৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার।
বেসরকারি ৪০ ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৮৪ কোটি ১০ লাখ ডলার। আর বিদেশি ৯ ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪০ লাখ ডলার।
মহামারির মধ্যে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে। ওই মাসে প্রায় ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার পাঠান প্রবাসীরা, যা এক মাসের হিসাবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে মে মাসে ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।
গত অর্থবছরের ১২ মাসের মধ্যে ৭ মাসেই ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলারের বেশি করে রেমিট্যান্স এসেছে। গড় হিসাবে প্রতি মাসে ২ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার করে এসেছে।
তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ (১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা ছিল এক অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি।
মহামারির কারণে রেমিট্যান্স কমার আশঙ্কা করা হলেও বাস্তবে তা ঘটেনি। গত বছরের মার্চে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটা পড়ে।
ওই মাসে ১০৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। এরপর আর রেমিট্যান্স কমেনি, প্রতি মাসেই বেড়ে চলেছে। রেকর্ডের পর রেকর্ড হয়েছে।
দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা সোয়া কোটি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ। দেশের জিডিপিতে সব মিলিয়ে রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।
রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটেও এই প্রণোদনা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয় সরকার।
রিজার্ভ ৪৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার
রেমিট্যান্সপ্রবাহে গতি ফেরায় বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থায় আছে। রোববার দিন শেষে রিজার্ভ ৪৬ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার।
আমদানি বাড়ার পরও গত ২৪ আগস্ট আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ১৪৪ কোটি ৮০ লাখ (প্রায় ১.৪৫ বিলিয়ন) ডলার এসডিআর (স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস) ঋণ রিজার্ভে যোগ হওয়ায় এক লাফে রিজার্ভ বেড়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অত্রিকম করে।
সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই-আগস্ট মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪৭ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।