ডেস্ক নিউজ
ই-কমার্স প্ল্যাটফরম নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গ্রাহক বা ভোক্তাদের সুরক্ষা দিতে এ আইনটি হবে অধিকতর শক্তিশালী ও সময়োপযোগী। থাকবে কঠোর বিধিনিষেধ। ভোক্তা বা গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা কিংবা জালিয়াতি করলে থাকছে জেল-জরিমানার বিধান। এর আগে চলতি বছরের জুলাইয়ে ই-কমার্স নীতিমালা-২০১৮ সংশোধন করেছিল সরকার। যা কার্যকর হলেও ঠেকানো যায়নি ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর প্রতারণা ও জালিয়াতি। সম্প্রতি দুটি প্রতিষ্ঠানের লোভনীয় অফারের ফাঁদে পড়ে হাজার কোটি টাকারও বেশি খুইয়েছেন সাধারণ মানুষ। তবে এ নতুন আইন করার পাশাপাশি জনসাধারণকে অধিক সচেতনতা অবলম্বনেরও পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গত সপ্তাহে সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির নেতৃত্বে এ-সংক্রান্ত একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটির কার্যপরিধি ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। কয়েক দিন ধরে কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ই-কমার্স খাতের উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে কী করণীয়, সে সম্পর্কে ১৫ দিনের মধ্যে সুপারিশ দেবে ওই কমিটি। দুই মাসের মধ্যে ডিজিটাল বা ই-কমার্স পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করার উপযোগী একটি আইনের খসড়া প্রণয়ন করবে এবং দুই মাসের মধ্যে ডিজিটাল কমার্স কর্তৃপক্ষের কাঠামো ও কার্যপ্রণালি তৈরি করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে কমিটিকে। এ ছাড়া আগামী ছয় মাসের মধ্যে আইনটি সংসদে পাস করা হবে। ই-কমার্স অথরিটির কাঠামো ঠিক করে তার যাত্রাও শুরু হবে এ সময়ের মধ্যে। বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, সরকার মনে করে স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশে ই-কমার্সের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। বিশেষ করে করোনা মহামারীতে যখন সবকিছু বন্ধ ছিল তখন মানুষ ঘরে বসেই সব ধরনের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করেছে ই-কমার্সের মাধ্যমে। এতে মানুষের জীবন হয়েছে অত্যন্ত সহজ। কিন্তু গ্রাহকদের সারল্যকে পুঁজি করে লোভনীয় অফার দিয়ে কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে অর্থ লুটে নিচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ জন্য ই-কমার্স প্ল্যাটফরমকে বিশ্বমানে রূপ দিতে এবং এই মাধ্যমে প্রতারণা ও জালিয়াতি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে একটি শক্তিশালী আইন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন বেশির ভাগ অংশীদার মন্ত্রণালয়। ব্যবসায়ীরাও একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক ই-কমার্স প্ল্যাটফরম গড়ে তুলতে যুগোপযোগী একটি আইন প্রণয়নের পক্ষেই মত দিয়েছে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ই-কমার্সের নামে পণ্য আমদানি বা ডেলিভারি দেওয়ার মাধ্যমে ওভার কিংবা আন্ডার ইনভয়েস করে দেশের অর্থ কেউ যেন পাচার করতে না পারে বা মানি লন্ডারিংয়ের মতো কোনো অপরাধ করতে না পারে সে সুরক্ষাও থাকবে নতুন এই আইনে। যদি কেউ গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তা বিদেশে পাঠিয়ে দেন তাহলে তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং অপরাধের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা রুজু হবে এমন ধারাও যুক্ত হবে নতুন আইনে।
সূত্র জানায়, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো কী ধরনের পণ্য নিয়ে কারবার করতে পারবে, কতটুকু লাভ করতে পারবে, কত দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দিতে হবে, সঠিক সময়ে পণ্য ডেলিভারি দিতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যাবে এসব ইস্যুর সম্ভাব্য সমাধানসহ কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি প্রতারণা বা জালিয়াতি করলে কঠোর শাস্তির বিধান যুক্ত করে এ আইনটির খসড়া প্রণয়ন করা হবে। ডিজিটাল কমার্স নিয়ন্ত্রণ অথরিটির কাছে সব ধরনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর। গ্রাহকের স্বার্থরক্ষায় প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে কোম্পানির কার্যক্রম স্থগিত করা, বন্ধ করে দেওয়া বা কোনো কোম্পানিতে প্রশাসক বসানোর মতো ক্ষমতাও থাকবে ডিজিটাল কমার্স নিয়ন্ত্রণ অথরিটির হাতে। যা আইন দ্বারা সিদ্ধ করা হবে। এ জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে ডিজিটাল কমার্স নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন ও অথরিটি গঠনের কাজ শুরু করেছে সরকার। ই-কমার্সের অংশীজনরা মনে করেন, এ ব্যবসায় কিছুটা শৃঙ্খলা আনা সম্ভব হলেও যারা প্রতারণা করবে তাদের কী শাস্তি দেওয়া হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা নেই ই-কমার্স নীতিমালায়। এ ছাড়া ই-কমার্স খাতের কর্তৃপক্ষ কে হবে, কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা বা এখতিয়ার কতটুকু থাকবে, নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান তাৎক্ষণিক কী কী ব্যবস্থা নিতে পারবে এগুলো কোথাও বলা নেই। এমনকি কোনো মন্ত্রণালয় সামগ্রিকভাবে এ খাতকে দেখাশোনা করবে সেটাও কোথাও বলা নেই। যার ফলে ই-কমার্স খাতে বিশৃঙ্খলা নেমে এসেছে। এ খাতের শৃঙ্খলা রক্ষায় একটি যুগোপযোগী আইন ও ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণ অথরিটি করার কাজে হাত দিয়েছে সরকার। ২২ সেপ্টেম্বরের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক মন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ই-কমার্স খাতের সুষ্ঠু বিকাশের জন্যই একটি আইন ও অথরিটি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী কোনো দেশের অভিজ্ঞতাও কাজে লাগানো হবে। এমনকি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে সেগুলোর মডিউলও পর্যালোচনা করবে ওই কমিটি। এরপরও একটি আইনের খসড়া প্রণয়ন করে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিসভার কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে এ আইনের খসড়া করে তা সংসদে পাস করানো ও অথরিটির কাঠামো তৈরি করার জন্য সর্বোচ্চ ছয় মাসের সময়সীমাও নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।