ডেস্ক নিউজ
দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় পর প্রাণ ফিরছে দেশের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। চলতি মাসেই গুরুত্বপূর্ণ অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর তোড়জোড় চলছে। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের করোনার টিকাদান কর্মসূচিও অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, যেসব শিক্ষার্থী অন্তত টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছে তারা টিকার কার্ড দেখিয়ে হলে উঠতে পারবে। আর যারা টিকা নেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন তাদেরকেও দ্রুততার সাথে নিতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ মাসেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ২২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, করোনা মহামারীর সংক্রমণ পরিস্থিতি সহনশীল পর্যায়ে থাকায় পর্যায়ক্রমে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ই খুলে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সব স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হল এবং ক্যাম্পাস খুলে দেয়ার আগে শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার বিষয়ে একটু সময় নেয়া হয়। তবে এবার সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি মাসে খুলছে বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্যানুযায়ী, দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৫১টি। এর মধ্যে ৪টিতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি। বাকিগুলোর মধ্যে ৩৯টিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী প্রায় তিন লাখ। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ, মাদরাসাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। আর পাঁচটি আছে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে ২৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর মধ্যে ২২টি এ মাসেই খুলছে। বেশির ভাগই দিন-তারিখ ঠিক করেছে। আর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) চারটিতে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তারা শিক্ষার্থীদের করোনার প্রথম ডোজ টিকা নেওয়া সাপেক্ষে হলে ওঠার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
সূত্র জানায়, আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হলগুলো খুলছে। এরপর এসব শিক্ষার্থীর পরীক্ষাসহ অন্যান্য কার্যক্রম শুরু হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এরই মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীর প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল খুলবে ১৭ অক্টোবর এবং ২০ তারিখ সশরীরে ক্লাস শুরু হবে। ২১ অক্টোবর খুলছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। তার আগে ১১ অক্টোবর সেখানকার আবাসিক হল খুলবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় খুলছে ২০ অক্টোবর। এর আগে আবাসিক হলগুলো খোলা হবে ১৫ অক্টোবর এবং একই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন চালু হবে। গত মাস পর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ শতাংশের অধিক শিক্ষার্থীর টিকা দেয়া হয়েছে।
আজ সোমবার থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলছে এবং সশরীর ক্লাস শুরু হবে ২১ অক্টোবর। গাজীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত শনিবার সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, ১৫ অক্টোবর থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের সব শিক্ষার্থী, স্নাতকের কয়েকটি অনুষদের চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য হল খোলা হবে এবং ১৮ অক্টোবর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলবে ২৫ অক্টোবর। এর পর থেকে বিভাগগুলো তাদের বিভাগীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরাসরি ক্লাস নিতে পারবে। ১৮ অক্টোবর থেকে স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষ এবং স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল। এরপর ২৬ অক্টোবর থেকে অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে উঠানো হবে।
এ ছাড়া পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীর ক্লাস শুরু হবে ২৫ অক্টোবর এবং ২১ অক্টোবর হল খুলবে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ৭ অক্টোবর খুলবে এবং সশরীর ক্লাস শুরু ১৭ অক্টোবর। রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হচ্ছে আজ ৪ অক্টোবর। গোপালগঞ্জে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (চতুর্থ বর্ষ) এবং স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য হল খোলা হবে ৭ অক্টোবর। আর অন্য শিক্ষার্থীদের জন্য হল খোলা হবে ২০ অক্টোবর।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮ অক্টোবর থেকে আবাসিক হল খোলার সুপারিশ করা হয়েছে। অন্য দিকে এ মাসেই ক্যাম্পাস খুলবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল আলম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো: ওহিদুজ্জামান জানিয়েছেন, ৭ অক্টোবর প্রতিটি বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরু হবে। হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দুর্গাপূজার ছুটির পর খুলবে বলে আশা করেছেন একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। ৫ অক্টোবর এটি ঠিক হবে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ মাসে খুলবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দুর্গাপূজার ছুটি শেষে ১৯ অক্টোবরের থেকে সশরীরে ক্লাস শুরু হতে পারে। ৭ অক্টোবর একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স ইউনিভার্সিটির স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স, পিএইচডি ইত্যাদি কোর্স) পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ৫ অক্টোবর হল খোলা হবে। আর সশরীর শিক্ষাকার্যক্রম শুরু ৭ অক্টোবর। অন্যান্য শিক্ষার্থীর জন্য ১০ অক্টোবর হল খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সশরীর ক্লাস শুরু হবে ১৮ অক্টোবর। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) আবাসিক হল খুলে দেয়া হচ্ছে ২২ অক্টোবর। গতকাল ভিসি প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২২ অক্টোবর তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষ এবং স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এবং আগামী ৫ নভেম্বর অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য হল খুলে দেয়া হবে। তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষ এবং স্নাতকোত্তর শ্রেণীর ক্লাস শুরু হবে ২৫ অক্টোবর এবং প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হবে ৭ নভেম্বর।