ডেস্ক নিউজ
সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেকোনো বিভ্রান্তিকর তথ্য অথবা গুজব কিংবা উসকানিতে বিভ্রান্ত বা উত্তেজিত না হতে আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর। এসব ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে নিকটস্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা এবং পরিস্থিতির উন্নয়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করার জন্যও দেশের সব নাগরিকদের কাছে বিশেষ অনুরোধ জানিয়য়েছে পুলিশ।
বুধবার পুলিশ সদরদপ্তর থেকে পাঠানো ‘কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত অপ্রীতিকর ঘটনা সম্পর্কে পুলিশের বক্তব্য’ শিরোনামে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
পুলিশ সদরদপ্তরের মিডিয়া শাখার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা এআইজি (ইন্সপেকশন) মোহাম্মদ শাহ জালালের নামে পাঠানো ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ১৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৭টায় কুমিল্লা সদর থানার নানুয়া দীঘির উত্তর পাড়ে দর্পণ সংঘের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে মূর্তির পায়ের ওপর কে বা কারা পবিত্র কোরআন শরীফ রেখে চলে যায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কতিপয় স্বার্থান্বেষী দুষ্কৃতিকারী উসকানিমূলক ও বিকৃত প্রচারণা চালায় এবং পরবর্তীকালে আরও উচ্ছৃঙ্খল দুষ্কৃতিকারী সংঘবদ্ধ হয়ে মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুরের চেষ্টা ও পূজামণ্ডপে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এছাড়া দুষ্কৃতিকারীরা শহরের কাপড়িয়া পট্টি কলোনির চানমনি পূজামণ্ডপ, শ্রী শ্রী রক্ষাকালী মন্দির, কালিতলাসহ আরও কয়েকটি পূজামণ্ডপে হামলা চালায় এবং প্রতিমায় অগ্নিসংযোগ করে।
সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো তুলে ধরে পুলিশ সদরদপ্তর বলছে, কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে, সেজন্য সারাদেশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দেশের বিভিন্নস্থানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।
কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে ১৩ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টায় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌরসভাস্থ শ্রী ত্রিনয়নী সংঘ রাজা লক্ষ্মী নারায়ণ জিউর আখড়া, মোকিমাবাদ পূজামণ্ডপে ৫০০ থেকে ৬০০ দুষ্কৃতিকারী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তারা পুলিশের ওপর হামলা করে এবং ৫ থেকে ৬টি পূজামণ্ডপ ভাঙচুর করে। দুষ্কৃতিকারীদের ইটপাটকেলের আঘাতে ১৫ জন পুলিশ সদস্য মারাত্মক আহত হন। জনগণের জানমাল রক্ষায় এবং আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় পাঁচজন প্রাণ হারান।
পুলিশ সদরদপ্তর আরও জানায়, কুমিল্লার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ১৪ অক্টোবর সকাল ১১টা ২০ মিনিটের দিকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার ছয়ানী ইউনিয়নের সর্বজনীন শ্রী শ্রী দুর্গাপূজা মণ্ডপের কাছে ৮০০ থেকে এক হাজার উচ্ছৃঙ্খল লোক জড়ো হয়ে উসকানিমূলক স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে তারা অসংখ্য ইট, লাঠিসোটা নিয়ে মন্দিরের সামনে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও বিজিবির টহল দলের ওপর হামলা চালায়, মন্দিরের মূর্তি ভাঙচুর করে এবং মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় একজন প্রাণ হারান এবং পরবর্তীকালে পুকুর থেকে আরেকজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানায়, ১৭ অক্টোবর রংপুরের পীরগঞ্জের বড় করিমপুর মাঝিপাড়া গ্রামের এক যুবক ফেসবুক আইডিতে পবিত্র কাবা শরীফের অবমাননাকর ছবি আপলোড করেন। পরে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে রাত প্রায় ৮টার সময় এলাকার কতিপয় দুষ্কৃতিকারী ওই গ্রামের একটি মন্দিরসহ ১৮টি পরিবারের ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
এছাড়া কক্সবাজার জেলার পেকুয়া ও চকরিয়া থানা, সিলেট জেলার জকিগঞ্জ থানা, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ থানা, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ থানা এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটনের কাশিমপুর থানাসহ দেশের আরও কয়েকটি স্থানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় সারাদেশে সাতজন প্রাণ হারান। এরমধ্যে দুইজন হিন্দু সম্প্রদায়ের এবং পাঁচজন মুসলিম সম্প্রদায়ের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দায়িত্ব পালনকালে ৫০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন।
পুলিশ আরও জানায়, সংঘটিত এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৭২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৪৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া আরও মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
এছাড়া ঘটনা বা অপরাধের রহস্য উদঘাটনের জন্য থানা পুলিশের পাশাপাশি পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটগুলোকেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে ঘটনা বা অপরাধের রহস্য উদঘাটনে প্রযুক্তি নির্ভর তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও উসকানি রোধকল্পে সাইবার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া পরিস্থিতির অবনতি রোধে পুলিশ, র্যা ব, বিজিবি এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারের সব গোয়েন্দা সংস্থা সার্বক্ষণিকভাবে কড়া নজরদারি অব্যাহত রেখেছে বলেও পুলিশ সদরদপ্তরের ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।