ডেস্ক নিউজ
দ্রুত গতিতে চলছে কর্ণফুলীর ক্যাপিটেল ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ। আগামী বছর জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ের আগেই তা সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। কর্ণফুলী নদীর নব্যতা ফেরাতে ৩০২ কোটি টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার এম আরিফুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগামী বছর জুন পর্যন্ত সময় থাকলেও বর্তমানে কাজের যে গতি রয়েছে তাতে মার্চের মধ্যেই কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।
তিনি জানান, কর্ণফুলীর তলদেশ থেকে নির্ধারিত ৫১ লাখ ঘনমিটার পলি ও আবর্জনার মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ ঘনমিটার খননের কাজ শেষ হয়েছে। কাজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৯শতাংশ।
বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে ‘সদরঘাট টু বাকলিয়ার চর ড্রেজিং’ নামে কর্ণফুলীর ক্যাপিটেল ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। এক বছরের মধ্যে ড্রেজিং এবং বাকি তিন বছর রক্ষণাবেক্ষণসহ প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় মোট চার বছর। নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ই-ইঞ্জিনিয়ারিং এবং চায়না হারবার নামে দু’টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় কর্ণফুলী নদীর আড়াই কিলোমিটার এলাকা চার মিটার গভীরতায় খনন করে ৫১ লাখ ঘনমিটার পলি ও মাটি তোলার কথা।
কিন্তু নদীর তলদেশে জমাট বেঁধে থাকা পলিথিনের কারণে শুরুতেই ধাক্কা খায় প্রকল্পের কাজ। নদীর তলদেশে জমে থাকা পলিথিনে আটকে যেতে থকে ড্রেজারের পাখাগুলো। এরপর খননকাজে ব্যবহারের জন্য চীন থেকে ৩১ ইঞ্চি ব্যাসের শক্তিশালী সাকশন কাটার ড্রেজার আনার সিদ্ধান্ত নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে চীন থেকে আনা হয় শক্তিশালী সাকশন ড্রেজার। পাইপ স্থাপনসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর ১৬ মে থেকে সাকশন ড্রেজার দিয়ে খননকাজ শুরু হয়। কিন্তু তাতেও পলিথিন সরাতে ব্যর্থ হলে ফেরত পাঠানো হয় ড্রেজারটি।
পরবর্তীতে বুয়েটের পরামর্শক দলের রিপোর্টের ভিত্তিতে দেশীয় প্রযুক্তিতে খনন কাজ শুরু হয়।
প্রকল্প পরিচালক আরিফুর রহমান এ প্রতিবেদকে বলেন, বর্তমানে গ্র্যাব ড্রেজার দিয়ে প্রথমে পলিথিনের স্তর সরিয়ে তারপর দ্বিতীয় ধাপে পলি খননের কাজ করা হচ্ছে। মাঝখানে কাজে ধীর গতি থাকলেও এখন কাজে বেশ গতি এসেছে।
প্রসঙ্গত, কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা রক্ষায় ২০১১ সালে ‘ক্যাপিটেল ড্রেজিং অ্যান্ড ব্যাংক প্রোটেকশন’ নামে ২২৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে গেলে বন্দর তাদের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল করে। পরবর্তীতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাইকোর্টে বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়। যে কারণে প্রায় পাঁচ বছর কর্ণফুলীতে ক্যাপিটেল ড্রেজিংয়ের কাজ বন্ধ থাকে। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ড্রেজিংবিহীন থাকার কারণে প্রচুর পলি জমে নদীর বিভিন্ন অংশে চর জেগে ওঠে। পরবর্তীতে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল সমীক্ষা চালানোর পর তাদের পরামর্শ অনুযায়ী নতুন এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। শুরুতে প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ২৫৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হলের পরবর্তীতে তা ৩০২ কোটি টাকায় বৃদ্ধি করা হয়।