ডেস্ক নিউজ
প্রাকৃতিক গ্যাসের এই সংকটের সময়ে বাংলাদেশের জন্য সুখবর হতে পারে কক্সবাজারের মহেশখালী এলাকায় অনুসন্ধানকৃত গ্যাস কূপগুলো। সেখানে ইতোমধ্যে মহেশখালী কাঞ্চন-১ নামে একটি কূপে প্রায় ১.৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে কূপটিতে কী পরিমাণ গ্যাস রয়েছে বা উত্তোলনযোগ্য সেটা চূড়ান্তভাবে বলতে আরও অন্তত ছয় মাস সময় নিতে চায় পেট্রোবাংলা।
জানা গেছে, সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানির কর্মকর্তারা খননকৃত কাঞ্চন-১ কূপের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট) প্রকৌশলী মো. শাহিনুর রহমান জানিয়েছেন, গত ২৯ সেপ্টেম্বর কাঞ্চন-১ কূপটি খনন শুরু হয়। সেখানে তিনটি লেয়ারে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। খননকৃত কূপের গভীরতা ৪ হাজার ২০০ মিটার পর্যন্ত। যা শুনে সচিব আনিসুর রহমান সন্তোষ প্রকাশ করেন। বিষয়টি দেশের মানুষকে এখনই জানানো যাবে কিনা এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি। তবে পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত হতে অন্তত আরও ছয় মাস ধৈর্য ধরতে হবে। কারণ আরও তিন মাস গ্যাস অনুসন্ধান করা হবে এবং তিন মাস সময় নেওয়া হবে কূপটি থেকে উত্তোলিত গ্যাসের বাণিজ্যিক উপযোগিতা নির্ধারণে।
বিষয়টি নিয়ে জ¦ালানি বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, বিদেশ থেকে আমদনিনির্ভর জ¦ালানির ওপর ভরসা করেই চলছে বাংলাদেশের জ¦ালানি সরবরাহ ব্যবস্থা। স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশের অন্যতম জ¦ালানি ছিল নিজস্ব কূপ থেকে উত্তোলিত
প্রাকৃতিক গ্যাস। সেটাও দিন দিন কমে আসায় ২০১৮ সাল থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানি করে দেশীয় গ্যাসের সঙ্গে মিলিয়ে চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এত ব্যয়বহুল জ¦ালানি আমদানি করে কত দিন দেশের জ¦ালানি ব্যবস্থা ঠিক রাখা যাবে। অন্যদিকে এত ব্যয়বহুল জ¦ালানি ব্যবহারে শিল্পকারখানাগুলো সক্ষম হবে কিনা আগামী দিনগুলোতে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। ফলে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের উচিত দ্রুত নিজেদের অনুসন্ধান, উত্তোলনে মনোযোগ দেওয়া।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমাদের বিশাল সাগর এখনো পড়ে আছে। অথচ দক্ষ মানবসম্পদ, প্রয়োজনীয় সক্ষমতার অভাব এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে সাগরে অনুসন্ধান করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া দেশের স্থলভাগেও তেমন অনুসন্ধান কাজ এগোচ্ছে না। এখন দ্রুততার সঙ্গে যদি দেশের কোথাও বড় একটি গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয় তবে সংকট অনেকটা কমে যাবে। যেহেতু সাগর ব্লকে বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমার ও ভারত গ্যাস পেয়ে উত্তোলন করছে, ফলে আমাদের অংশেও গ্যাস পাওয়া যাবে বলে আশা করি।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে ভারতীয় কোম্পানি ওএনজিসি বিদেশ এবং ইন্ডিয়ান অয়েলের সঙ্গে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট চুক্তি করে পেট্রোবাংলা। চুক্তি অনুযায়ী অগভীর সমুদ্রের ৪ ও ৯ নম্বর ব্লকে প্রতিষ্ঠান দুটি অনুসন্ধান করবে। ওএনজিসি সাড়ে ৫ হাজার লাইন কিলোমিটার দ্বিতীয় মাত্রার ভূকম্পন জরিপ করে তেল-গ্যাস পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখেছে। এরপর ২০২০ সালে কূপ খননের উদ্যোগ নেয়। যদিও এই কূপ খনন এক বছর পিছিয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছে। পেট্রোবাংলার কাছে ওএনজিসি বিদেশ যে তথ্য-উপাত্ত জমা দিয়েছে তাতে বলা হচ্ছে, অগভীর সমুদ্রে তিনটি কূপ খনন করে পাওয়া যেতে পারে ১.৯ টিসিএফ গ্যাস।
এ বিষয়ে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহম্মদ আলী বলেন, আমরা জোরালোভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সম্ভাবনাময় জায়গাগুলোতে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ করছি। এর মধ্যে মহেশখালীতে কাঞ্চন-১ কূপে খনন কাজটি গত মাসের ২৯ তারিখে শুরু হয়েছে। সেখানে মোট তিনটি কূপ খনন করা হবে। তিনটি কূপ ঠিকমতো খনন হলে সেখানে গ্যাসের মজুদ ১.৯ টিসিএফ হতে পারে।