ডেস্ক নিউজ
এটিএম কার্ড দিয়ে ওয়াসার বুথ থেকে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করছে এক গ্রাহক। গতকাল ফকিরাপুল এলাকা থেকে তোলা।
রাজধানীতে এখন এটিএম বুথে মিলছে সুপেয় পানি। টাকা তোলার কার্ডের মতোই একটি প্রিপেইড কার্ড (আরএফডিআই) মেশিনে ঢোকালেই বিশুদ্ধ পানি বেরিয়ে আসে।
ওয়াসা ও যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ড্রিংকওয়েল যৌথভাবে বিভিন্ন এলাকায় মডস বা পাম্পসংলগ্ন এসব ‘ওয়াটার এটিএম বুথ’ বসিয়েছে। গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি তুলে তা পরিশোধন করে খাওয়ার উপযোগী করা হচ্ছে। বাজারে বিক্রি হওয়া বোতলজাত পানির সমমানের এই পানি মাত্র ৪০ পয়সা লিটারে কিনতে পারছেন যে কেউ।
জানা যায়, প্রথম ডেনমার্কের একটি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় ফকিরাপুলে দুটি ওয়াটার এটিএম বুথ বসায় ওয়াসা। সেই বুথে গ্রাহকদের চাহিদা দেখে তখনই ওয়াসা সিদ্ধান্ত নেয় শহরের বিভিন্ন জায়গায় তারা বুথ বসাবে। তখন ৩০০টি বুথ বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পরে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রিংকওয়েলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে এসব বুথ বসানোর কাজ শুরু হয়। ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বর্তমানে ওয়াটার এটিএম বুথের সংখ্যা ২৫২টি। এর মধ্যে রাজধানীর বাসাবো, ফকিরাপুল, কমলাপুর, গাবতলী, মিরপুর, দয়াগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় সচল রয়েছে ২২০টি। দৃশ্যমান স্থানে না বসানো এবং মানুষের না জানা ইত্যাদি কারণে গ্রাহকসংকটে বাকি বুথগুলো বন্ধ রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর মানিকনগরে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় ওয়াটার এটিএম বুথ রয়েছে চারটি। এর মধ্যে গত মে মাসে মডেল স্কুলের পেছনে পাওয়ার হাউসসংলগ্ন ৩ নম্বর বুথটি চালু করা হয়। এই বুথের অপারেটর আফরোজা সারমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মে মাসে যখন শুরু করি তখন ৫০টি কার্ড এলাকার বিভিন্ন জনকে বিনা মূল্যে দেওয়া হয়েছিল। তারপর গতকাল পর্যন্ত আরো ২৫১টি কার্ড বিক্রি করা হয়েছে। আরো ৫০টি কার্ড আমার হাতে রয়েছে।’ তিনি বলেন, এই বুথটি কিছুটা আড়ালে। তার পরও শুরুতে যে হারে মানুষ এসেছে, এখন তার তুলনায় অনেক বেশি আসছে।
এরপর পাঁচ মাস আগে চালু হয় মানিকনগর বাজারের বুথ। এর গ্রাহকসংখ্যা ৪০০-এর বেশি। এ ছাড়া আহমেদবাগ ও আনন্দধারা এলাকায় রয়েছে দুটি বুথ। প্রতিটিতেই গ্রাহক ৩০০ থেকে ৪০০ জন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একটি কার্ড দিয়ে কমপক্ষে পাঁচজন মানুষ উপকারভোগী হয়।
বিভিন্ন বুথের অপারেটর বা ইনচার্জদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু নিম্নবিত্তই নয়, মধ্যবিত্ত ও অনেক উচ্চবিত্তও এখন ওয়াটার এটিএম বুথের গ্রাহক হয়েছেন। দিন দিন পানির চাহিদা ও গ্রাহক বাড়ছে তাদের। পানি নিতে আসা সাধারণ মানুষ বলছে, এখন আর তাদের পানি ফোটানোর কষ্ট করতে হয় না। বুথের পানি দিয়েই তাদের চলছে। তবে বুথের বিষয়ে খুব বেশি প্রচার নেই বলে অনেকে জানেনই না এই সুবিধা সম্পর্কে।
আনন্দধারা বুথে কথা হয় গ্রাহক মোস্তাফার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পাশেই আমি একটি ফাস্টফুডের দোকান চালাই। আগে আমাকে ক্রেতাকে পানি কিনে খাওয়াতে হতো। এখন আমি এখান থেকে নিজের বাসার জন্য নিই, দোকানের জন্যও নিই। গ্রাহকের কাছ থেকে এখন আমি পানির জন্য পয়সা নিই না।’
শিক্ষার্থী আব্দুল হক এসেছিলেন মানিকনগর বাজারের বুথটিতে পানি নিতে। তিনি ১০ লিটারের দুটি গ্যালন দিয়ে এক দিন বিরতিতে পানি নেন বলে জানান। হক বলেন, ‘আগে পানি ফুটিয়ে খেতে খুবই কষ্ট হতো। অনেক ঝামেলাও ছিল। এ ছাড়া ফোটালেই কাজ শেষ হতো না। আবার ফিল্টারে দেওয়া লাগত। কিন্তু এখন কোনোটিই করা লাগে না। জানা যায়, অনেক বুথ আট ঘণ্টা খোলা থাকলেও বেশির ভাগই খোলা থাকে ১২ ঘণ্টা। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।’
ঢাকা ওয়াসার পানিতে জীবাণু থাকে; তাই সে পানি সরাসরি পান করা যায় না—রাজধানীবাসীর এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ কারণে নগরবাসী পানি ফুটিয়ে পান করে। ২০১৭ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজধানীবাসী পানি ফোটাতে প্রতিদিন এক কোটি আট লাখ ঘনমিটার গ্যাস পোড়ায়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশুদ্ধ পানি সহজলভ্য হলে পানি ফোটানোর ঝামেলা ও গ্যাসের ব্যবহার কমে আসবে।
ওয়াটার এটিএম বুথ প্রকল্পের পরিচালক ও ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী রামেশ্বর দাস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ড্রিংকওয়েলের চুক্তি অনুসারে আমরা জায়গা দিলে তারা চাহিদা যাচাই করে অবকাঠামো তৈরি করে। আমরা তাদের মাসভিত্তিক ব্যবস্থাপনা খরচ দিই। বিপরীতে পানি ও কার্ড বিক্রির আয় নিই আমরা। তাই আমাদের মডস বা পাম্পগুলো যেখানে রয়েছে, সেখানেই বুথগুলো বসাতে হয়। অন্যথায় আমরা জায়গা দিতে পারি না। তবে প্রচারের দায়িত্ব ড্রিংকওয়েলের।’ রামেশ্বর বলেন, ‘এই পানি আমরা তিন মাস পর পর পরীক্ষা করি, এতে আর্সেনিক, আয়রন ও ক্ষতিকর জীবাণু রয়েছে কি না। রাজধানীতে আমাদের পানির পাম্প বা স্টেশন রয়েছে ৮০০-এর বেশি। আমরা এখন পর্যন্ত ৫০০টি বুথ বসানোর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি।’
কার্ড কিভাবে পাবেন : যেকোনো একটি ওয়াটার এটিএম বুথে গিয়ে দায়িত্বরত অপারেটরকে বললেই আরএফডিআই কার্ড দিয়ে দিবে। এ জন্য সঙ্গে নিতে হবে ভোটার আইডি কার্ড, দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি ও ৫০ টাকা (ফি)। তবে বুথ নতুন হলে ৫০টি পর্যন্ত কার্ড বিনা মূল্যে দেয় কর্তৃপক্ষ। আইডি কার্ড ও ছবি নিয়ে গেলেই কার্ড পেয়ে যাবেন। এরপর যেকোনো অঙ্কের টাকা রিচার্জ করে পানি কেনা যায় ৪০ পয়সা লিটারে। রিচার্জও করে দেন বুথ অপারেটর। তবে এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও রিচার্জের পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।