ডেস্ক নিউজ
আদায় প্রক্রিয়া সহজ করা, করদাতা বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা, কর ফাঁকি ও দেশ থেকে অর্থপাচার রোধকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন আয়কর আইনের খসড়া তৈরি করছে সরকার।
নতুন আইনটি হবে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর। এই প্রথম বাংলা ভাষায় হচ্ছে আইনটি।
এই আইনের খসড়া গত রোববার প্রকাশ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এক সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত আইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
প্রস্তাবিত আইনটিকে ‘করদাতাবান্ধব’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখে আইনটি প্রণয়ন করা হচ্ছে।
এই আইন বাস্তবায়িত হলে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম বেগবান হবে। নিশ্চিত হবে ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, খসড়া আইনের ওপর ব্যবসায়ী, কর আইনজীবীসহ অন্যান্য অংশীজনের মতামত নেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত পাওয়ার পর খসড়া আইন অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। খসড়া আইন মতামতের জন্য ওয়েবসাইটে দিয়েছে এনবিআর।
বর্তমান আইন ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশ নামে পরিচিত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি খুবই জটিল এবং ইংরেজি ভাষায় রচিত। এতে নানা ধরনের অসঙ্গতি ও জটিলতা রয়েছে। দেশের বাস্তবতার আলোকে প্রচলিত আইনটি উপযোগী নয়।
২০১২-১৩ অর্থবছরে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তার বাজেট বক্তৃতায় নতুন আয়কর আইনের ঘোষণা দেন। ২০১৬ সাল থেকে নতুন আইন প্রণয়নের কথা থাকলেও নানা কারণে তা হয়নি।
বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা আইএফসি নতুন আইনের খসড়া তৈরি করে দিলেও তা গ্রহণ করেনি রাজস্ব বোর্ড। পরে এনবিআরের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। পাঁচ বছরে ওই কমিটি আইনের খসড়া সম্পন্ন করেছে।
খসড়া আইনে সামাজিক ন্যায়বিচার, শিল্প ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কর ফাঁকি প্রতিরোধে বাংলাদেশে ব্যবসারত বিদেশি কোম্পানিগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করা হচ্ছে।
বিদ্যমান আইনে অডিট নির্বাচন এবং অডিট কার্যক্রম পরিচালনায় সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মপদ্ধতি নেই। প্রস্তাবিত খসড়া আইনে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং অবশ্যপালনীয় নির্দেশিকা থাকবে।
এতে করে অডিট সংক্রান্ত স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে। বাড়বে আদায়। নতুন আইনে কর কর্মকর্তাদের ঐচ্ছিক ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিধিবিধান সহজ করা হচ্ছে।
খসড়া আইনে আয়কর ফেরতা বা রিফান্ড পদ্ধতি স্বয়ংক্রিয় করা হচ্ছে। অর্থাৎ কোনো করদাতার অতিরিক্ত কর পরিশোধের টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যাংক আ্যাকাউন্টে চলে যাবে।
এতে উৎসে কর কর্তন এবং সংগ্রহের নিয়মাবলি আরও সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট করা হচ্ছে। ফলে নিবাসী-অনিবাসীদের কাছ থেকে উৎসে কর কর্তন এবং সংগ্রহে আর কোনো অস্পষ্টতা থাকবে না।
দেশে একটি আধুনিক কর ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে খসড়া আইনে ই-কর ব্যবস্থাপনার বিধান প্রস্তাব করা হচ্ছে। ফলে সময় ও খরচ কমবে।
নতুন আইনে ট্রান্সফার প্রাইসিং ও কর এড়ানো প্রতিরোধের বিধিবিধান সন্নিবেশ করা হচ্ছে। এতে দেশ থেকে অর্থ পাচার বন্ধ হবে। প্রতিরোধ করা যাবে কর ফাঁকি।
এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক সদস্য সৈয়দ আমিনুল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খসড়া আইনটি আমি এখনও পুরোপুরি পড়িনি। তবে যতদূর জেনেছি, নতুন আইনটি বাংলা ভাষায় করা হচ্ছে, এটি একটি ভালো দিক। এর ফলে সবাই বুঝতে পারবে। আইনটি প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ায় করদাতাদের সময় ও খরচ বাঁচবে। একই সঙ্গে কর ফাঁকি কমবে। বাড়বে আদায়।’