ডেস্ক নিউজ
গ্রাহকের অর্থ সুরক্ষাসহ সাত বিষয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ই-কমার্স খাতের ভাগ্য নির্ধারণে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জন্য চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনা করতে হলে বাধ্যতামূলকভাবে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। যেকোন ক্রেতার কাছ থেকে টাকা নেয়ার পর সাত থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সুনির্দিষ্ট পণ্য ডেলিভারি দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। প্রতারণা বন্ধে প্রদর্শিত পণ্যের বাইরে অন্যকোন পণ্য ডেলিভারি দেয়ার সুযোগ নেই। ক্রেতা আকর্ষণে লটারি ও লোভনীয় অফার দেয়ার সুযোগ থাকছে না। ই-কমার্স পণ্যের মডেল হতে হলে সুপার স্টারদের সরকারী অনুমোদন নিতে হবে। নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের বাইরে মডেল হলে দায়দায়িত্ব তারকাদের নিতে হবে। এসব বিধি-বিধান রেখে ই-কমার্স সংক্রান্ত সরকারী উচ্চ পর্যায়ের কমিটি প্রতিবেদনটি অনুমোদন করে তা মন্ত্রিসভায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিবন্ধনের বাইরে ব্যবসা করা হলে সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, ই-কমার্স খাত কিভাবে পরিচালিত হবে সেই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন বা গাইডলাইন আগামী ১২ নবেম্বরের মধ্যে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের নির্দেশনা রয়েছে। এলক্ষ্যে সরকারী উচ্চ পর্যায়ের কমিটির পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন করা হয়। ই-কমার্স নিয়ে চরম বিতর্কের মধ্যে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত নতুন আইন প্রণয়নের তাগিদ দেয়া হয়া হয়। পরে এই খাত কিভাবে পরিচালিত হবে সেই লক্ষ্য ঠিক করতে দুটি কমিটি করে দেয় মন্ত্রিসভা। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিসভায় প্রতিবেদন উপস্থাপন সংক্রান্ত কমিটির প্রধান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, গ্রাহক স্বার্থ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে একটি প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সভা করে প্রতিবেদনটি অনুমোদনের পর তা মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। তিনি বলেন, ই-কমার্স খাত পরিচালনার জন্য নতুন আইন-কানুনের প্রয়োজন নেই। এটা সময়সাপেক্ষ। তবে নিবন্ধনের বাইরে কেউ ব্যবসা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেল জরিমানাসহ সব ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হচ্ছে। দ্রæত এই খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে যে প্রতিবেদনটি দেয়া হচ্ছে সেই অনুযায়ী কাজ করা গেলে সব সঙ্কটের সমাধান হবে বলে আশা করছি।
জানা গেছে, নতুন গাইডলাইন বা নির্দেশনা অনুযায়ী নিবন্ধনের বাইরে কারও ব্যবসা করার সুযোগ থাকছে না। এর পাশাপাশি সব ধরনের অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ইউনিক বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বাধ্যতামূলক নিতে হবে। এটি চালু হওয়ার পর রেজিস্ট্রেশনবিহীন কোন কোম্পানি দেশে অনলাইনে কোন ধরনের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবে না। বিটিআরসির সহায়তায় রেজিস্ট্রেশনবিহীন কোম্পানিগুলোর ব্যবসা বন্ধ করা হবে। নতুন এই নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে- যেসব কোম্পানির পণ্য বিক্রি করা হবে সেই প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব থাকবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর। বিক্রীত পণ্যের গুণগত মান নিয়ে কোন অভিযোগ উঠলে তা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহি করতে হবে। পণ্য ডেলিভারি দিতে ব্যর্থ হলে গ্রাহকের টাকা মানি ওয়ালেটে রাখার সুযোগ থাকছে না। এমনকি সুনির্দিষ্ট পণ্য ব্যতীত অন্য পণ্য গছিয়ে দিয়ে বিক্রি করার সুযোগ রাখা হয়নি। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম কোম্পানির আদলে গ্রাহকের কাছ থেকে লোভনীয় শর্তে অর্থ গ্রহণ করার সুযোগ নেই।
জানা গেছে, ফেসবুকে আইডি খুলেই কয়েক লাখ প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এর বাইরে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট খুলে হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। কিন্তু সরকারের হিসেবে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মাত্র ১ হাজার ৩০০টি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই তের শ’টি প্রতিষ্ঠানের দিকে নজর দিতে পারছে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে পরিচালনা করা হয় তার কোন তথ্য নেই সরকারের কাছে। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে অনলাইন প্রতিষ্ঠান। ক্রেতারা এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য কিনে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন। এ কারণে পুরো ব্যবসাটিকে আইনী কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা না গেলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের সঙ্কট তৈরির আশঙ্কা আছে সংশ্লিষ্টদের। ইতোপূর্বে এমএলএম কোম্পানি খুলে ডেসটিনি, যুবকসহ অসংখ্য কোম্পানি দেশের মানুষকে প্রতারিত করে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে আইন করে এসব প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। ই-কমার্স ব্যবসাকেও আইনী কাঠামো ও পলিসি সহায়তা দেয়া না গেলে এখাতেও অপতৎপরতা ও কারসাজির সুযোগ নিতে পারে অসাধু ব্যবসায়ীরা। আর কোন ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা কিংবা রিং আইডির মতো প্রতিষ্ঠান যাতে জন্ম নিতে না পারে সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বর্তমানে ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ বা গ্রæপের মাধ্যমেও কেনাকাটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই ব্যক্তি উদ্যোগে পেজ খুলে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য সাইট কোনটি তা বোঝা কঠিন। অনেকে বিক্রির নামে প্রতারণা করায় এর প্রভাব পড়ছে দেশের ই-কমার্সের ওপর, যা ডিজিটাল বাজার ব্যবস্থার প্রসার তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে অনলাইন পণ্য কিনে প্রতারিত হলে নির্দিষ্ট প্রমাণ সাপেক্ষে দেশের ভোক্তা অধিকার আইনে অভিযোগ করা যেতে পারে। কিন্তু প্রচার না থাকার কারণে সে আইনের প্রক্রিয়া ও নিয়ম-কানুন বেশিরভাগ মানুষের অজানা। এ কারণে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের কার্যক্রম সারাদেশে সম্প্রসারণ করা হবে।