ডেস্ক নিউজ
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির নিজস্ব মজুদ সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সারাবছর বিক্রি হবে টিসিবির পণ্য। স্বল্প আয়ের মানুষ প্রায় অর্ধেক দামে কিনতে পারবেন ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, ডাল ও চিনির মতো ভোগ্য পণ্যসামগ্রী। দেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় ধাপে ধাপে দেশের বিভিন্ন স্থানে আঞ্চলিক অফিস ও গুদাম নির্মাণ করবে টিসিবি। প্রতিষ্ঠানটির এসব উদ্যোগের ফলে বাজারে স্বস্তি থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ লক্ষ্যে রাজশাহীর পবা উপজেলায় সংস্থাটির আঞ্চলিক কার্যালয়ের সম্প্রসরাণ, অফিস ও গুদাম নির্মাণের জন্য ২ দশমিক ৫৫ একর জমি অধিগ্রহণ করতে যাচ্ছে সরকার। শীঘ্রই জমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম শুরু করা হবে। স্বল্প আয়ের মানুষের কথা চিন্তা করে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ব্যতীত সারাবছর টিসিবি নিত্যপণ্য বিক্রি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। এ কারণে পণ্যের মজুদ বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছে সংস্থাটি।
জানা গেছে, করোনা মহামারীর এই সময়ে স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষের ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি। দীর্ঘলাইন ধরে টিসিবির ট্রাকসেল কার্যক্রম থেকে পণ্য সংগ্রহ করছেন নগরবাসী। বিশেষ করে গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেলের বাজার যখন অস্থির তখন টিসিবি প্রায় অর্ধেক দামে এ পণ্য দুটি বাজারে বিক্রি কর পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। এতে করে স্বস্তি আছে বাজারে। সাধারণ মানুষ কম টাকা খরচ করে পণ্য কিনতে পারছেন। তবে টিসিবি পণ্যের চাহিদা বাড়লেও সংস্থাটির মজুদ সক্ষমতা বাড়েনি গত এক দশকে। এ কারণে এবার মজুদ সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি বাণিজ্য সচিব বরাবর টিসিবি চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আরিফুল হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়-টিসিব সরকার নির্দেশনা মতে, কতিপয় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ডাল, তেল, পেঁয়াজ, ছোলা ও খেজুর সাশ্রয়ী মূল্যে ভোক্তা সাধারণের মাঝে বিক্রি ও বিতরণ কার্যক্রম করছে। যা দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয় হ্রাসে ভূমিকা রাখছে।
এর পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। সাম্প্রতিক বছর সমূহে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবি এর কার্যক্রম বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। টিসিবির কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ায় এর নিজস্ব মজুদ সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সে প্রেক্ষিতে সরকার কর্তৃক টিসিবির নিজস্ব মজুদ সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুদাম নির্মাণের নিমিত্ত রাজশাহী জেলার পবা উপজেলায় কেচুয়াতৈল মৌজায় প্রস্তাবিত ২.৫৫ একর জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে। সরকারের অনুমোদনের প্রেক্ষিতে জরুরী ভিত্তিতে জমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন।
জানা গেছে, চাহিদার তুলনায় মজুদ সক্ষমতা কম টিসিবির। ফলে বেসরকারী গুদাম ভাড়া করতে হয়। বছরে আপদকালীন সময়ে টিসিবির নিত্যপণ্যের প্রয়োজন ২৫ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। এরমধ্যে ১০ হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন গুদাম ভাড়া করতে হয় টিসিবিকে। সারাবছর পণ্য মজুদ না করলেও এসব গুদামের জন্য ভাড়া দিতে হয় টিসিবিকে। বছরের বিভিন্ন সময়ে ভাড়া নির্ধারিত হয় বিভিন্ন রেটে। এতে সরকারের টাকা অপচয়ের পাশাপাশি পণ্যের মানও ঠিক থাকে না।
সূত্রমতে, চিনি, তেল, ছোলা, মসুর ডাল ও খেজুর ইত্যাদি পণ্য মজুদের জন্য গুদাম নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে সারাদেশে ১৫টি গুদামে টিসিবি পণ্য মজুদ করে। এর মধ্যে মাত্র চারটি গুদাম টিসিবির নিজস্ব। ৭৫ হাজার ৪০০ বর্গফুটের এ চারটি গুদামের ধারণক্ষমতা ১৫ হাজার টন। এছাড়া খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, মৌলভৗবাজার ও ময়মনসিংহে সাড়ে ১০ হাজার টন ধারণক্ষমতার গুদামে টিসিবি পণ্য সংরক্ষণ করে। চাহিদার তুলনায় গুদাম অপর্যাপ্ত হওয়ায় রংপুর, বরিশাল, মৌলভীবাজার এবং ময়মনসিংহে মোট ১০ হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন গুদাম ভাড়া করতে হয়। টিসিবির বাজার অপারেশন কার্যক্রম বছরে একটা নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন করতে হলেও ভাড়া-গুদামের জন্য ভাড়া দিতে হয় পুরো বছর।
এ ছাড়া ভাড়া করা গুদামের মান সব সময় ভাল থাকে না বলে মজুদকৃত পণ্যের অপচয় হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, সারাবছর টিসিবি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চায়। বিশেষ করে ট্রাকসেলে নিত্যপণ্য বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের ভরসা এই টিসিবি। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিসিবির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। একসময় বাজারের মোট চাহিদার ২ শতাংশ সেবা দেয়ার সক্ষমতা থাকলেও গত দেড় বছরে তা বেড়ে ১২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ এরই মধ্যে ১০ শতাংশ সক্ষমতা বেড়েছে। এই সক্ষমতা আরও বাড়াতে নতুন গুদাম ও দেশের বিভিন্ন স্থানে টিসিবির অফিস ও আঞ্চলিক কার্যালয় নির্মাণ করা হবে। এছাড়া টিসিবির কর্মীর সংখ্যা না বাড়লেও সেবা বেড়েছে। ১০ থেকে ১১০০ কোটি টাকার পণ্য সেবা দিলেও চলতি বছর দুই হাজার ২০০ কোটি টাকার পণ্যের সেবা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে টিসিবি।
জানা গেছে, নিজস্ব গুদামের স্বল্পতা থাকায় একটি প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার ও রংপুরেও গুদাম নির্মাণ করা হবে। এছাড়া মৌলভীবাজার ও রংপুরে দু’টি আঞ্চলিক অফিসও নির্মাণ করা হবে। এর মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ ছাড়াও অন্য পণ্যের জন্য গুদামের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যাবে। টিসিবির আপদকালীন মজুদক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চট্টগ্রাম, সিলেট ও রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের জন্য গুদাম নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নেয়া হবে এসব উদ্যোগ।
সারাবছর চলবে টিসিবির কার্যক্রম ॥ সরকারী ছুটির দিন ব্যতীত সারাবছর টিসিবির কার্যক্রম চালানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। নানা সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বাজারে এখন ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারে কাজ করছে। এর প্রভাবেই গত কয়েক বছর স্বল্প আয়ের মানুষ কম দামে পণ্য কেনার সুযোগ পাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, টিসিবি হয়েছে আগের যে কোন সময়ের তুলনায় আধুনিক ও দক্ষ। টিসিবি এখন বিশেষ উৎসব পার্বণ ও সঙ্কটের সময় অনলঅইনেও পণ্য কেনাবেচা করে। টিসিবি জানিয়েছে, আরও কর্মদক্ষ হতে টিসিবি নির্দিষ্ট সংখ্যক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মোট দেশজ চাহিদার অন্তত ২ থেকে ৩ শতাংশ আপদকালীন মজুদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে। পণ্যের পর্যাপ্ত আপদকালীন মজুদ গড়ে তোলার পাশাপাশি সংরক্ষণ করা, স্থানীয়ভাবে ক্রয় বা আমদানিকৃত মালামাল পণ্যদ্রব্য, উপাদান, পণ্যসামগ্রী বিক্রয় এবং বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া আধুনিক সফট্ওয়ারের মাধ্যমে টিসিবি’র কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি প্রদান করা হচ্ছে। পণ্যের মজুদ ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। জরুরী প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকগুলো ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রবর্তন করে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ই-ফাইলিংয়ের মাধ্যমে অধিকাংশ নথি নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। এছাড়াও কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য ডিজিটাল হাজিরা প্রবর্তন করা হয়েছে।