নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোরে পরিত্যাক্ত সরকারী কোয়ার্টারে যুবক মিলন হোসেন হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। মিলন হোসেনের এ্যাকাউন্টে আউট সোর্সিং-এর মাধ্যমে উপার্জিত টাকা না পেয়ে বিরোধের জের ধরে তার বন্ধু নাটোর শহরের বড়গাছা এলাকার খোকন চন্দ্র শীলের ছেলে সাহস শীল ও তার মামাতো ভাই কুষ্টিয়ার মীরপুর থানার চিতলিয়া গ্রামের শ্যামল কুমার বিশ্বাসের ছেলে পার্থ বিশ্বাস তাকে নৃসংসভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনার ৯ দিন পর এই রহস্য উদ্ঘাটন করে পুলিশ। নিহত মিলন হোসেন সদর উপজেলার সিঙ্গারদহ গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে।
সোমবার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয় গ্রেফতারকৃতরা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে মিলন হোসেনকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত দুইজন তাদের স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দীতে জানায়, মিলন ও সাহস দুইজনই নাটোরশহরের কান্দিভিটা শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। বন্ধুত্বের সুত্র ধরে মিলন হোসেনের এ্যাকাউন্টে আউট সোর্সিং-এর মাধ্যমে সাহস শীল টাকা উপার্জন করে। পরে উপার্জিত টাকা না পেয়ে সাহস শীল তার বন্ধু মিলন হোসেনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সে তার মামাতো ভাই কুষ্টিয়ার মীরপুর থানার চিতলিয়া গ্রামের শ্যামল কুমার বিশ্বাসের ছেলে পার্থ বিশ্বাসকে ডেকে আনে। এরপরে গত ৯ আগস্ট সন্ধ্যায় মোবাইল করে মিলনকে পরিত্যাক্ত ওই ভবনে ডেকে নিয়ে দুইজনে মিলে খুন করে। এর পরে তারা আগুন দিয়ে মিলন হোসেনের দেহ ঝলসে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তারা ভিকটিমের দুটি সিমের একটি পার্থ বিশ্বাসের হাতে দিয়ে দেয়। পার্থ কুষ্টিয়াতে গিয়ে তার মায়ের মোবাইল ফোনে সিমটি ভরে নিহত মিলনের কাকা কাজল হোসেনকে মোবাইলে করে মিলন হোসেনের মুক্তিপণ ৫ লাখ টাকা দাবী করে। এ সময় কাজল হোসেন মিলনের সাথে কথা বলিয়ে দিতে বললে পার্থ টালবাহানা করে। অপরদিকে সাহস শীল মিলনের অপর মোবাইল ফেন সিমসহ নিয়ে বগুড়ি চলে যায়। এ দিকে পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে মিলনের বাবা সদর হাসপাতাল মর্গে এসে মরদেহটি তার ছেলে মিলনের বলে সনাক্ত করে। পরে ১১ আগস্ট নাটোর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা দায়েরের পর মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। প্রেস ব্রিফিং-এ উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকরামুল ইসলাম, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত, ডিবি’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈকত হাসান, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী জালাল উদ্দিনসহ অন্যান্যরা।
উল্লেখ্য গত ১০ আগস্ট শনিবার রাত ৮ টার দিকে শহরের আলাইপুর এলাকার একটি পরিত্যাক্ত সরকারী কোয়ার্টার থেকে পুলিশ অজ্ঞাত এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুই জোড়া স্যান্ডেল, একটি লাঠি ও দড়ি উদ্ধার করে। এর পর থেকে ঘটনার তদন্তে পুলিশ মাঠে নামে।