ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী ও খুনিরা সবসময় তৎপর রয়েছে, তৎপর থাকবে। তাদের ষড়যন্ত্র চলতে থাকবে। ওই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। কাজেই একটা দৃঢ় আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলবেন। গতকাল বিকালে মালদ্বীপে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া নাগরিক সংবর্ধনায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়- বাংলাদেশের এ পররাষ্ট্র নীতির কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশেষ করে মালদ্বীপের সঙ্গে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এখানে যাতে আমরা রপ্তানি করতে পারি, ব্যবসা-বাণিজ্য চালাতে পারি সে বিষয়টিও আমরা দেখছি। প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রবাসীদের কল্যাণ করা তাঁর সরকারের দায়িত্ব। মালদ্বীপে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বর্তমানে যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হচ্ছেন তার সমাধানে সরকার ব্যবস্থা নেবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমি একটি সফল দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করেছি। অনথিভুক্ত বাংলাদেশি শ্রমিকদের বৈধ করার বিষয়টি সে সংলাপে প্রাধান্য পেয়েছে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মালদ্বীপের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ইস্কান্ধার স্কুল অডিটোরিয়ামে, মালে চাঁদনী মাগুতে সমবেত হন। প্রধানমন্ত্রী মালদ্বীপে তাঁর আবাসস্থল থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন। প্রবাসী আহমেদ মুত্তাকির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মালদ্বীপে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, মালদ্বীপ আওয়ামী লীগের সভাপতি দুলাল মাদবর।
১৫ আগস্টের খুনিদের বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না : আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখন অনেকে মানবাধিকারের কথা বলেন, ন্যায়বিচারের কথা বলেন। অথচ ১৫ আগস্টের খুনিদের বিচার চাওয়ার কোনো অধিকার আমাদের ছিল না। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে থাকতে হয়েছে। খুনিদের ইনডেমনিটি দিয়ে বাঁচানো হচ্ছিল। তখন শত বাধা ডিঙিয়ে দেশে ফিরেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনো তাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। বারবার আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এদেশের মানুষের ভাগ্য বদল করব, এটাই আমার প্রতিজ্ঞা। এ সময় দেশের উন্নয়নের মাধ্যমে খুনিদের জবাব দিতে চাই বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীরা এখনো তৎপর। তাদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই দেশের অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হবে। আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলবেন, কেউ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলতে পারবে না।
দালালের মাধ্যমে বিদেশে যাবেন না : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের যারা প্রবাসে যান, সবাই কিন্তু সঠিকভাবে যান না। দালাল-টালাল ধরে, বাড়িঘর বিক্রি করে, বন্ধক রেখে তার পরে যান। যে আশা নিয়ে তারা যান, সেই বেতন পান না। অনেককেই মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। কষ্ট ভোগ করতে হয়। যে বেতনের কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয়, যাওয়ার পরে সেই বেতন পাওয়া যায় না। অনেক সময় কাজও পান না। থাকা-খাওয়ার জায়গা নিয়ে নানা অসুবিধায় পড়তে হয়। সুতরাং দালালের মাধ্যমে বিদেশ যাবেন না। তিনি বলেন, দালালদের বিভিন্ন প্রলোভনে অনেক বাংলাদেশি বিদেশে গিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হন। তাই ইচ্ছুকদের বৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা বিদেশে আসতে চান, তারা যেন কোনো দালাল ধরে না আসেন। যেন বৈধভাবে আসার চেষ্টা করেন। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। সারা দেশে ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি। সেখানে নিবন্ধন করার সুযোগ আছে। এই তালিকা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে আছে। তার মাধ্যমে আসতে পারবেন।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রায় ১ কোটি বাংলাদেশি কাজ করে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাড়িঘর বিক্রি করে দালালের হাতে টাকা দেওয়ার কোনো দরকার নেই। বরং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া যাবে। ক্ষেত্রবিশেষে এই লোন কোনো জামানত ছাড়াই দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে সেই ব্যাংকেই লোন শোধ করে দেবেন। সরকার প্রধান বলেন, সব সুযোগ আমরা করে দিয়েছি। তারপরও মানুষের মাঝে একটা প্রবণতা আছে, কেউ এসে সোনার হরিণ ধরার সুযোগ দেখাল, সবাই সেই পথে দৌড়ালেন। তারপর বিপদে পড়েন। অনেক সময় মৃত্যু পর্যন্ত হয়। এরকম বহু ঘটনা ঘটে। এভাবে সোনার হরিণের পেছনে ছোটার কোনো দরকার নেই। দেশের মানুষের কর্মসংস্থান বাড়াতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি।
মালদ্বীপে ১ লাখ প্রবাসী কাজ করছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মধ্যে কেউ ব্যবসা করছেন। অনেকের সমস্যা আছে। তারা নিজেরা হঠাৎ চলে আসছেন। এখানে বৈধভাবে থাকার একটা সমস্যা রয়েছে। এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটা এমওইউ সই করা হয়েছে। যাতে সমস্যাটা আর না হয়। করোনার সময়ে বিশেষ বিমান পাঠিয়ে ১০ হাজার লোককে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মালদ্বীপ থেকে দেশে টাকা পাঠানোর বিষয়ে প্রবাসীরা তাদের সমস্যার কথা জানান প্রধানমন্ত্রীকে। তাদের সেই সমস্যা সমাধানে সরকার উদ্যোগ নেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করেছি। কিন্তু আমার অবাক লাগে, আপনাদের (প্রবাসী) ডলার কিনে তার পরে টাকা পাঠাতে হয়। এটা কেন পাঠাতে হয় আমি জানি না। দেশে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আলাপ করব।
প্রবাসীদের সমস্যা নিয়ে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমস্যার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী আপনাদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন। আমাকেও জানিয়েছেন তারা। দেশে ফেরার পরে অনেকগুলো বিষয়ে আমরা কী কী করা যেতে পারে, তা করব। তিনি বলেন, মালদ্বীপে বাংলাদেশের পণ্যের ভালো বাজার রয়েছে। তাদের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা হয়েছে। এখানে কী কী পণ্য আমরা রপ্তানি করতে পারি, তা খতিয়ে দেখছি।
বাংলাদেশ বিমানের জন্য দুটি কার্গো কেনার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমানের নিজস্ব কোনো কার্গো নেই। ভাড়া করেই চলে। বিমানের জন্য দুটি কার্গো কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যদিও করোনাভাইরাসের কারণে অসুবিধা হচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে কিনব। এটা হলে মালপত্র পাঠাতে বেশি সমস্যা হবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ডেটাবেস থেকে খোঁজখবর নিয়ে প্রবাসে যাবেন। জমি, বাড়ি বিক্রি করে বিদেশ যাওয়ার দরকার নেই। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক তৈরি করেছি বিনা জামানতে বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের ঋণ দিতে। এই ব্যাংক করতে সরকার থেকে ৪০০ কোটি টাকা দিয়েছি। এ ছাড়া অন্যান্য স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানোর সুযোগও দিয়েছি।
প্রবাসীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের এখানে চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল করা সম্ভব হবে কি না জানি না। মালদ্বীপ সরকার এখানে আমাদের জমি দেবে কি না তাও জানি না। তবে মালদ্বীপের শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ও শিক্ষায় আরও বেশি বৃত্তি ও সুবিধা আমরা দেব। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরে বেসরকারি খাতে বিমান চলাচলের সুযোগ করে দিয়েছিলাম। ইতিমধ্যে একটি বেসরকারি বিমান মালদ্বীপে আসা শুরু করেছে। সরকারি বিমানেও মালদ্বীপের সঙ্গে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা। এটা আমাদের লক্ষ্য আছে। এতে প্রবাসীদের সুবিধা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন আর কারও কাছে হাত পেতে চলার দেশ না। নিজের পায়ে চলার সক্ষমতা অর্জন করেছে। ১৯৯৬ সালের আগে যারা প্রবাসে ছিলেন, তারা ভেবে দেখেন বিশ্ববাসী তখন কী চোখে দেখত। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ব্যাপক উন্নয়নের পরে এখন এই দেশের মানুষকে কোন চোখে দেখে। যারা বিদেশে আছেন তাদের সম্মানের চোখে দেখে। এখন আর তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে সাহস পায় না। ভিক্ষুক জাতি হিসেবে দেখতে সাহস পায় না। দেশের মানুষ সাহস নিয়ে চলে। এখন আমরা দরকষাকষি করেও চলতে পারি।
দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেন, আমি থেমে থাকিনি। আমারও তো বয়স হয়েছে। যে কোনো সময় চলে যেতে হতে পারে। তাছাড়া আমার ওপর তো খড়গহস্ত আছেই। বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। বোমা, গুলি, গ্রেনেড সবই হয়েছে। সবই হজম করেছি। কারণ, আমি তো জাতির পিতার মেয়ে। কাউকে ডরাই না। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস আছে। দেশ ও জনগণের উন্নয়ন ভাবনা সবসময় কাজ করে আমার চিন্তায়-চেতনায়।