ডেস্ক নিউজ
বৈদেশিক সহায়তার আওতায় নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান পেতে চুক্তির যে বাধ্যবাধকতা দিয়েছিল দেশটি, তাতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ। কূটনৈতিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই চুক্তি করার একটি সময়সীমা দেওয়া আছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে কাল মঙ্গলবার একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হবে। এতে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশের সামরিক খাতে যুক্তরাষ্ট্র যে অনুদান দিয়েছে, তা কোথায় কীভাবে ব্যয় হয়েছে, তার তথ্যও চায় বাইডেন প্রশাসন। আজকের আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ বিষয়ে কী মতামত পাঠানো যায় তা-ও ঠিক করা হবে।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, গত ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে পাঠানো এক চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্র জানায়- লিহেই আইনের নতুন সংশোধনী অনুযায়ী মার্কিন অনুদানপ্রাপ্তি অব্যাহত রাখতে চাইলে চুক্তি সই করতে হবে। বাংলাদেশ এই চুক্তি করবে কিনা সে বিষয়ে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে জবাব দিতে হবে। বাংলাদেশ কোথায়, কীভাবে ওই অনুদান
ব্যবহার করছে, সেটাও যুক্তরাষ্ট্রকে জানাতে হবে। এ বিষয়ে ১২ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে জরুরি বৈঠক হয়। এতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা ছিলেন। তবে ১৫ ডিসেম্বরের আগে চুক্তি সইয়ের প্রস্তুতির কাজগুলো শেষ করা সম্ভব না হওয়ায় ঢাকার অনুরোধে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ায় ওয়াশিংটন। এর পর সামরিক অনুদান পেতে চুক্তিতে সম্মত হয় বাংলাদেশ।
স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিবছর বাংলাদেশকে বিরাট অঙ্কের সামরিক অনুদান দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মূলত মানবাধিকার সুরক্ষার স্বার্থে বিদেশি নিরাপত্তা বাহিনীকে বিভিন্ন পর্যায়ে অনুদান দিয়ে থাকে দেশটি। এটি বিভিন্ন বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্যয় হয়। দেশটির বৈদেশিক সহায়তা আইনের আওতায় এমন অনুদান পেয়ে আসছে বাংলাদেশ। এর আওতায় বাহিনীগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম দেওয়া হয়। গত ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে ওই আইনে সহায়তা পাওয়া না পাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বাংলাদেশ।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য প্রবর্তিত হয়েছে লিহেই আইন। বৈদেশিক সহায়তা আইনের সঙ্গে লিহেই আইনের দুটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। বিদেশের কোনো নিরাপত্তা সংস্থা বা বাহিনী নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও ধর্ষণসহ ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকলে ওই সংস্থা বা বাহিনীকে ওই ধারার আওতায় অনুদান দেওয়া বন্ধ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মূলত বৈদেশিক সহায়তা আইনের সঙ্গে লিহেই আইনের দুটি ধারা যুক্ত করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ও প্রতিরক্ষা দপ্তরকে অনুদান বন্ধের অধিকার দেওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য মার্কিন অনুদান অব্যাহত রাখতে চুক্তি সইয়ের চাপ বিষয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা রয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি জোরদার করার চেষ্টা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বহুমাত্রিক সম্পর্কের আওতায় নানা সহায়তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে নিরাপত্তা সহযোগিতা। এটি অন্যায্য দাবি নয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার মার্কিন অনুদান পেয়েছে। এই সহায়তার মধ্যে বৈদেশিক সামরিক অর্থায়ন এবং আন্তর্জাতিক সামরিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের বিষয়গুলো রয়েছে। ওই সহায়তার উল্লেখযোগ্য অংশ বঙ্গোপসাগরে নিরাপত্তা বাড়াতে বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ২০১৩ ও ২০১৫ সালে বাংলাদেশকে দুটি হ্যামিলটন কাটার নৌজাহাজ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য ৫০টি মাল্টি রোল আর্মাড পার্সোন্যাল ক্যারিয়ার দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের জন্য প্রায় ৩৮০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পাশাপাশি দেশটির কাছ থেকে ২০১২ সালে ১৮ কোটি ডলারের চারটি সি-১৩০ পরিবহন বিমান পেয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ১১০ কোটি টাকা মূল্যের ড্রোন দেওয়ার কথাও জানিয়েছে।