ডেস্ক নিউজ
নদী-সমুদ্রে কত ইলিশ আছে, কতই বা আহরণ করা হচ্ছে, কোথায় তাদের সম্ভাব্য নতুন প্রজননক্ষেত্র দেখা দিচ্ছে- এসব জানতে দিনের পর দিন নদীতে অবস্থান করতে হয় গবেষকদের। আগে চিহ্নিত করা অভয়াশ্রমগুলোর (প্রজনন ও বিচরণক্ষেত্র) অবস্থাই বা কী, তাও জানতে হয় নদীতে থেকে। ইলিশ গবেষণায় এমন নানা বিষয় আছে, যার জন্য নদীর বুকে দিনের পর দিন কাটানোর প্রয়োজন হয়।
এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চলেছে দেশের ইলিশ গবেষণায় যুক্ত নতুন জাহাজ ‘এমভি বিএফআরআই গবেষণা তরী’। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ‘ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পে’র আওতায় জাহাজটি নির্মাণ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জাহাজটি হস্তান্তর করে। জাহাজটির দৈর্ঘ্য ২৫ মিটার, প্রস্থ ৬ মিটার ও গভীরতা ২ দশমিক ৯০ মিটার। গতি ১০ নটিক্যাল মাইল।
হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ। সভাপতিত্ব করেন খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর খন্দকার আকতার হোসেন।
চাঁদপুরে অবস্থিত নদী কেন্দ্রে ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় খুলনা শিপইয়ার্ডের মাধ্যমে গবেষণা জাহাজটি নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), বাংলাদেশ নৌবাহিনী, নৌপরিবহন অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্স ও মেরিন ফিশারিজ একাডেমির সমন্বয়ে গঠিত কমিটির মধ্যমে ইলিশ গবেষণা জাহাজটির প্রাক্কলন প্রণয়ন করা হয়।
গবেষণা জাহাজটিতে ফিশ ফাইন্ডার, ইকো সাউন্ডার, নেভিগেশন এবং অত্যাধুনিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা, অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম, ইলিশ গবেষণা ল্যাবরেটরি, নেটিং সিস্টেম, পোর্টেবল মিনি হ্যাচারিসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি সংযোজন করা হয়েছে। ফলে জাহাজটি দেশের ইলিশ গবেষণায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে। জাহাজটির ইঞ্জিন, জেনারেটর এবং স্টার্ন গিয়ার ও প্রোপালশন সিস্টেম উন্নতমানের সংযোজন করাসহ স্ট্যাবিলিটি নিয়ন্ত্রণের জন্য সুপারস্ট্রাকচার অ্যালুমিনিয়াম ম্যাটেরিয়াল দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। সব ইকুইপমেন্ট ও মেশিনারি কমিশনিং করে পরীক্ষামূলক ট্রায়ালও সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়েছে। এটি পরিচালনার জন্য ইনস্টিটিউটের ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৪ দিনের অন-বোর্ড প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশের ইলিশ সম্পদের টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণা পরিচালনা করে আসছে। সম্প্রতি জাটকা সুরক্ষায় বিএফআরআইর গবেষণা তথ্যের ভিত্তিতেই গিল নেটের ফাঁস ৬.৫ সেন্টিমিটার নির্ধারণ করে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। ২০২১ সালে ২২ দিন মা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধকালে ইলিশের প্রজনন সফলতার হার ৫১.৭৬ শতাংশ নিরূপণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ইলিশের প্রকৃত মজুদ এবং সর্বোচ্চ সহনশীল উৎপাদন নিশ্চিত করা হয়েছে।
খুলনা শিপইয়ার্ডের নিজস্ব ডিজাইনে তৈরি গবেষণা জাহাজটির সাহায্যে দেশের প্রায় সব নদনদী এবং সাগর উপকূলে ইলিশবিষয়ক গবেষণা পরিচালনা করা যাবে। গবেষণার ফলাফল ইলিশের ধারাবাহিক উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। ইলিশ গবেষণায় জাহাজটি বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সার্বিক সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে আরও প্রসারিত করবে।