নিউজ ডেস্কঃ
এক যুগের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে বিএনপি। আগামী অক্টোবরে ক্ষমতা ছাড়ার ১৩ বছর পূর্ণ হবে। গত ১৩ বছরে দলটির নেতৃত্ব ধীরে ধীরে দুর্বলতর বা শূন্য হয়ে পড়ছে। সিদ্ধান্তের দোলাচলে পড়ে রাজনীতির মাঠ থেকে প্রায় ছিটকে পড়ে আছে দলটি। বরং উল্টাপাল্টা সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে আছে। এমন প্রেক্ষাপটে ভুলের নেশায় পেয়ে বসেছে বিএনপিকে।
অনেকের মতে, বিভিন্ন সময় নানাভাবে স্বাধীনতা বিরোধীদের মিত্রতা করেছে বিএনপি। অথচ স্বাধীনতা নিয়ে তাদের অবস্থান কখনোই পরিষ্কার করেনি বিএনপি। যা ছিলো বিএনপির ক্রমানুপাতিক অধঃপতনের প্রথম ধাপ। এখন পর্যন্ত জামায়াত নিয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেনি দলটি। নানা অসঙ্গতিকে ধামাচাপা দিয়ে শেষ করতে চেয়েছে বিএনপি।
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরে বাংলাদেশ পরপর তিনবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কিন্তু দুর্নীতির দায়ে দলে তারা শুদ্ধি অভিযান চালায়নি। এমনকি কোনো উদ্যোগও নেয়নি। এরপর নিজেরা ২০০৪ সালের ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার পরে যা যা করণীয় ছিল তা তারা করেনি। বরং জজ মিয়া নাটকের জন্ম দিয়েছে। এই গ্রেনেড হামলার বিষয়ে বিএনপি কোনো বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারেনি। সবশেষ তারা ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ভুল করেছিল বলেই অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ মনে করেন। কিন্তু সেই বয়কট ভুল ছিল কি ঠিক ছিল- সে বিষয়ে বিএনপি বিভক্ত থেকে গেছে। তারা এক সুর ধারণ করতে পারেনি। ২০১৩-২০১৪ সালে পেট্রলবোমার নাশকতায় বিএনপির ভূমিকা কি ছিল, সে বিষয়ে তারা নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে পারেনি। গ্রেনেড হামলা, পেট্রলবোমা হামলাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তারা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে না পারার কারণে বিএনপির রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ পাল্টে গেছে। যা স্বীকার করেন অনেকেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, দেশে সামন্ত ধাঁচের মানসিকতা প্রবল। তাই আমরা পরিবারগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি। জিয়া পরিবার থেকে একটা বিকল্প কাউকে বের করতে হবে। কারণ পরিবারের বাইরে নেতৃত্ব তো যাবে না। স্ট্যান্ডিং কমিটির যে অবস্থা কেউ কাউকে মানে না। অথচ বেগম খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের বাইরে পরিবারের কাউকে সামনে আনার বিষয়টি একেবারেই আলোচনায় নেই। সংরক্ষিত মহিলা আসনে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার অভিষেক পর্বে পর্দার আড়ালে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রীর নাম জানা গিয়েছিল। কিন্তু সেটা পর্দার আড়ালেই থাকলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমদে বলেন, আমরা যদি উপমহাদেশীয় উত্তরাধিকারী রাজনীতির দিকে তাকাই তাহলে রাজার ছেলে রাজা হবে, সেটা কিন্তু ট্রেন্ড নয়। বরং ট্রেন্ড এটাই যে, ভয়ানক কোনো বিয়োগান্তক অধ্যায়ের অব্যবহিত পরেই কেবল পরিবারের কারো উত্থান ঘটে। খুব বেশি দেরি হলে মানুষ ভুলে যায়। হয়তো একজন নারী হবেন। সুতরাং বিএনপিকে টিকতে হলে তার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে।
ফলে দেশের কৃত্রিম রাজনৈতিক সংকট তৈরির জন্য বিএনপির নানান বক্তব্য বিষয়ে জানতে দেশের মানুষের আগ্রহ ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছে। যা বিএনপিকে গভীর থেকে গভীরতর সংকটকালীন সময়ের দিকেই নিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনীতি সচেতন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।