ডেস্ক নিউজ
পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) নির্মাণ এখন প্রায় শেষের দিকে। চলতি বছরের জুনের আগেই এই টার্মিনালে জাহাজ ভিড়ানো যাবে। নতুন এই টার্মিনাল চালু হলে চার লাখের বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা যাবে। কন্টেইনারের পাশাপাশি এই টার্মিনালে থাকবে জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ ভিড়ানোর সুবিধা। তাতে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আরো বাড়বে। গতিশীল হবে সার্বিক আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। বহির্বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দর তথা দেশের ইমেজ আরো বাড়বে।
প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর বিমানবন্দর সড়কের পাশে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে চট্টগ্রাম ড্রাইডক থেকে বোটক্লাব পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে পিসিটি। এরমধ্যে তিনটি কন্টেইনার জেটি এবং একটি তেল খালাসের ডলফিন জেটি। প্রকল্পে ৩২ একর এলাকাজুড়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ৬০০ মিটার দীর্ঘ তিনটি জেটি। থাকছে ২২০ মিটার দীর্ঘ একটি ডলফিন জেটি ও এক লাখ ১২ হাজার বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ ইয়ার্ড এবং সড়ক। এছাড়া রুবি সিমেন্টের পাশে গড়ে তোলা ১৬ একর আয়তনের কন্টেইনার ইয়ার্ডটিকে পিসিটির জন্য ডেডিকেটেড করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে টার্মিনালের পাশের সড়কটি সোজা করে চালু করা হয়েছে। ওই সড়কের ফ্লাইওভারটিও যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। কয়েকটি টার্মিনাল ভবন নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে। এখন জেটি নির্মাণ কাজ চলছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুব শিগগির এই টার্মিনালে জাহাজ ভিড়ানো যাবে।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৩ জুন পিসিটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। এক হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই মেগা প্রকল্পের শেষ সময় ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। করোনাসহ নানা কারণে কাজে ধীরগতির কারণে যথাসময়ে কাজ শেষ হয়নি। কয়েক দফা বাড়ানো হয় প্রকল্পের মেয়াদ। সর্বশেষ চলতি ২০২২ সালের জুনে টার্মিনাল চালুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক গতকাল মঙ্গলবার ইনকিলাবকে বলেন, পিসিটির নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আশাকরি জুনের আগেই সেটি চালু করা হবে। পতেঙ্গা টার্মিনাল চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আরো বাড়বে বলেও জানান তিনি।
দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশের বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। বন্দরে জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি) চট্টগ্রাম কন্টেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ও নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) সাথে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল চালু হলে বন্দরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এ টার্মিনালে প্রতিবছর চার লাখ ৪৫ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার বেশি হ্যান্ডলিং করা যাবে।
দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবৃদ্ধি। ক্রমবর্ধমান এ প্রবৃদ্ধি মোকাবেলায় পিসিটিসহ তিনটি মেগা প্রকল্প নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। অন্য দু’টি হল- বে-টার্মিনাল ও লালদিয়া টার্মিনাল। এর মধ্যে বে-টার্মিনালের ভূমি অধিগ্রহণসহ অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। তবে লালদিয়া টার্মিনাল এখনও ফাইলপত্রেই সীমাবদ্ধ। এ দু’টি প্রকল্প ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ হওয়ায় বন্দর কর্তৃপক্ষ পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের ওপরই বেশি জোর দিচ্ছে। দ্রুত প্রকল্পটি শেষ করে অপারেশনাল কাজ শুরুর জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙেছে চট্টগ্রাম বন্দর। গেল বছর কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ৩২ লাখ টিইইউএস ছাড়িয়েছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ শতাংশ।